হজ্ব কি?
পর্ব ৩।
আয়াত ২ঃ১৯৬।

হাদি ও মাথা মুন্ডন

হজ্ব হলো সমষ্টিগত ভাবে কোনো বিষয়ের উপরে যুক্তি উপস্থাপন করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। এ যুগে বিজ্ঞানীদের কনফারেন্স বা সম্মেলন।

আরবে যখন কুরআন প্রচারিত হলো রাসুলের মাধ্যমে, তখন কুরআনের বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন এবং নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট স্থানে মুমিনদের সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত/ঐক্যমতে পৌছানোই ছিল হজ্বের উদ্দেশ্য। কারণ কুরআন এমন একটি কিতাব যা বারবার পড়তে হয়, আলোচনা/যুক্তিতর্ক করতে হয়। এই প্রক্রিয়াকেই বলে ক্বুল ওয়া আশরাবু বা consume and absorb, অর্থাৎ কুরআনকে অন্তরে ধারণ করে তা আত্মস্থ করা।
২ঃ১৮৫-১৮৭ তে সেই নির্দেশটা জারি হয়েছে যারা ঈমান আনে তাদের জন্য। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত আরবেরাও ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ পায়। কুরআন এসেছিল তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে।

আজকে বিশ্লেষণ করবো ২ঃ১৯৬ আয়াতের।

এখানে শুধুমাত্র Word by word সঠিক অনুবাদটি লিখবো ভেঙ্গে ভেঙ্গে ব্যাখা সহ। আপনারা প্রচলিত অনুবাদের সাথে তুলনা করে দেখবেন।

কাছাকাছি সঠিক অনুবাদ ২ঃ১৯৬

—- এবং পরিপূর্ণ করো (ওয়া আতিমুল) যুক্তির সম্মেলন ( হাজা) এবং জীবনের অধ্যায়কে/সময়কালকে আল্লাহর জন্য (ওয়াল উমরাতা লিল্লাহি)।

মন্তব্যঃ হজ্ব ও উমরা শব্দটার অনুবাদ এর জন্য পর্ব ১ ও ২ দ্রষ্টব্য।

—- যদি বাধাগ্রস্হ হও (ফা ইন উহসিরতুম), তাহলে (ফামা) বিনীত হও (ইসতাইসারা) হুদা/guidance/কিতাব থেকে (মিনাল হাদিয়ি)

মন্তব্যঃ
১) ইসতাইসারা (ধাতু ইয়া-সিন-রা) অর্থ soft/সুর নরম করা/বিনীত হওয়া/নম্রভাবে। ১৭ঃ২৭ “তাদের সাথে নম্রভাবে (মাইসুরা) কথা বলো (ক্বালা)”।
২) হাদিয়ি, হাদিয়ু, হুদা সব একই ধাতু থেকে উৎপন্ন। ২ঃ২ আয়াতটাতে কিতাবটা হুদাল্লিল মুত্তাকি, অর্থাৎ মুত্তাকিদের, মুমিনদের, মুসল্লিদের ও মুসলিহীনদের জন্য হুদা বা গাইডেন্স। এই বিষয়ে আমার লেখাটা পাবেন

—- এবং দুশ্চিন্তায় মাথার চুল ছিড়োনা (ওয়ালা তাহলিক্বু রুসাকুম) যতক্ষন না পর্যন্ত তোমার হুদা পরিণত হয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছায় (হাত্তা ইয়াবলুঘা হাদিয়ু মাহিলাহু)

মন্তব্যঃ
বালাঘা শব্দের অর্থ পরিণত/mature। কুরআনের ব্যাপারে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানকে পরিণত হবার কথা বলা হচ্ছে। হুদা পরিণত হওয়া মানে কি? কুরআন সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান থাকার অর্থ হলো হুদা পরিণত হয়নি। যেদিন পুরো কুরআন সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন সেদিন সেটা পরিণত হয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। আমরা প্রায়ই দুশ্চিন্তায় মাথার চুল ছেড়ার কথা বলি। এটা একটা প্রবাদ যা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।

—- তোমাদের মধ্যে যদি কেউ (ফামান কানা মিনকুম) দুশ্চিন্তার কারণে আঘাত পেয়ে ভারসাম্যহীন হবার উপক্রম হও/হতাশাগ্রস্হ/ডিপ্রেশন হও (মারিদান আও বিহি আদ্দা মিন রাসিহি)।

মন্তব্যঃ
মারিদা শব্দটার অনুবাদ শারীরিক অসুস্থ করে সবখানে। অসুস্হ বলতে মানসিক অসুস্থতাও/রুগী/মানসিক ভারসাম্যহীন বা হতাশাগ্রস্হ/ডিপ্রেশনও বোঝায়।

—- তাহলে সিয়াম বা সাদাকা বা সংশোধনমূলক বিধানের মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করো (ফাফিদইয়াতুন মিন সিয়ামিন আও সাদাকাত্বিন আও নুসুকিন)

মন্তব্যঃ
১) সংশোধনমূলক সিয়াম নিয়ে আমরা পর্বেই জেনেছি।

২) সংশোধন মূলক বিধান (মানসাকান/নুসুকিন) ২২ঃ৩৪-৩৬ নিয়ে আমারা সাওমের বিষয় লেখাতে পড়েছি।

৩) সাদাকা কি তা হয়তো অনেকেই জানেন।

আজকে এ পর্যন্তই।

হজ্বের বিধান হলো যুক্তি/আলোচনা/ঐক্যের সম্মেলনে একত্রিত হওয়া। উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো কুরআনকে সম্মিলিত ভাবে অধ্যয়নের মাধ্যমে আত্মস্থ করা।

যারা কোনো কারণে সেখানে যেতে বাধাগ্রস্ত হয়, হজ্বে যেতে পারে না, তাহলে বিনীত হয়ে হুদা/গাইডেন্সকে পরিণত (Mature) করার কাজ করতে বলা হচ্ছে নিজে নিজে চেষ্টার মাধ্যমে। তাদেরকে দুশ্চিন্তায় নিজের চুল না ছিড়ে, হতাশাগ্রস্থ না হয়ে সিয়াম/সাদাকা/ সংশোধনমূলক বিধান পালনের মাধ্যমে নিজেকে হতাশা বা দুশ্চিন্তা মুক্ত (Liberate) করার কথা বলা হচ্ছে।

অর্থাৎ হজ্বে যেতে না পারলে করণীয় কি, সেই অল্টারনেটিভ অপশনগুলো আল্লাহ বর্ণনা করতেছেন।

এবার এই পর্যন্ত প্রচলিত পার্সিয়ান অনুবাদ পড়েন দেখি আগামাথা কিছু বোঝেন কি না! যুক্তিসংগত কি না!

প্রচলিত অনুবাদ ২ঃ১৯৬

“আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে।”

পর্ব :৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *