হজ্জ

পর্ব :৪ 

 

কালো পাথর (হাজরে আসওয়াদ) 

 

 ইসলামের নবীর সাথে মক্কার কোন সম্পর্ক নেই। কারন কোরআন পড়ে মনে হয় নবী কোন দিন মক্কায় যান নি বা মক্কায় তার জন্ম হয়েছে এমন কথা ও কোরআনে লেখা নেই।  কালো পাথরের চারিদিকে ৭ পাকে ঘোরা ও পাথরে চুমু খাওয়ার মতো প্যাগান প্রথা কিভাবে ইসলাম ধর্মে ঢুকে পড়ল তা নিয়ে।

 

ঠিক কি ঘটেছিল সেটা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে কোরআনে বর্ণিত আমাদের জীবন সম্পর্কে দেয়া বিভিন্ন উদাহরন। সাধারণত যেটা ঘটে থাকে , যূগে যূগে বিভিন্ন  নবী রসূল একত্ববাদ প্রচার করে গত হওয়ার পরে পরেই মানুষ আবারো দেব- দেবী পাথর পুজা শুরু করে বা বলা যায় প্যাগান ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে। কোরআন থেকে জানতে পারি নবীর সময়ের আরবের লোকেরা ‘আল্লাৎ’ ‘আলউজ্জা’ এবং ‘মানাত’ নামের দেব দেবীর লিঙ্গ পুজা করত (৫৩:১৯-২০) এবং প্রত্নতাত্বিক খননের ফলে এদের কিছু মূর্তিও পাওয়া গেছে। ইসলাম আরব থেকে এই সকল দেব- দেবীর পুজা সম্পুর্ন রুপে বন্ধ করতে পেরেছিল এমন কোন তথ্য কোরআনে নেই। বরং অমুসলিম সুত্র থেকে জানা যায়  নবী পরবর্তী উমাইয়া আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে প্যাগান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নুতন উদ্যমে বিস্তার লাভ করতে থাকে।

 

প্যাগান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের কথা মাথায় রেখেই চলুন দেখা যাক বর্তমানের মক্কায় কি ঘটছে। আপনি যদি মক্কায় যান তাহলে দেখতে পাবেন , নিশি দিন মানুষ কিউব আকৃতির একটি পাথুরে ঘরের (ক্বাবা) চারিদিকে ৭ বার পাক দিচ্ছে। এই ঘরটি একটি কালো কাপড়ে (কিসওয়াহ) আচ্ছাদিত। এই ঘরের পূর্ব-দক্ষিন কোনে শীত কালীন সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কালো পাথর গাঁথা আছে , যাকে সকলে ‘হাজরে আসওয়াদ’ নামে জানে। ‘হাজরে আসওয়াদের’ মানে হলো- কালো পাথর। দেখতে পাবেন এই কালো পাথরে চুমু দেয়ার জন্য হাজিরা ঠেলাঠেলি করছেন বা অত্যাধিক ভিড়ের কারণে দুর থেকে হাত উচু করে ছালাম দিচ্ছেন। আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞসা করেন কেন পাথরে  চুমু খাচ্ছেন , তাহলে উত্তর পাবেন –  চুমু দিলে সকল গোনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।

 

শীত কালীন সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে কালো পাথরটি যে নির্ভুল ভাবে বসানো আছে , সেটা  কাকতালীয়  নয়। নবীর সময়ে আরবের লোকেরা ‘আল্লাৎ’ নামের যে দেবীর লিঙ্গ পুজা করত , সেই দেবী হলেন উর্বরতার দেবী (fertility goddess)। এই দেবীর আচার অনুষ্ঠান সূর্য কেন্দ্রীক। প্যাগানদের বিশ্বাস শীত কালীন সূর্যোদয় সূর্যের পুনর্জন্মের জায়গাকেই নির্দেশ করে। কালো পাথরটিকে নিকট থেকে পর্যবেক্ষন করলে একে দেখায় প্রসবকালীন স্ত্রীজননেন্দ্রীয়ের মতো  , যার ভিতরে বাচ্চার মাথা দেখা যাচ্ছে। 

 

আরো একটু কাছে থেকে দেখুন। দেখবেন মানুষ জন  জন্ম নিচ্ছে এই বাচ্চা দেবতার মাথায় চুমু খাচ্ছে। মাথায় চুমু খেয়ে মাফ চাওয়া আরবদের এক প্রাচীন প্রথা। আরব প্যগানরা নবজাতক শিশুর মতো সকল পাপ মুক্ত হওয়ার জন্য এই কালো পাথরের নবজাতক শিশুর মাথায় চুমু খেত।

 

কালো পাথরের চারিদিকে ৭ পাক ঘোরার এই প্রথাও অনেক প্রাচীন। কোরআন পূর্ব  চতুর্থ শতাব্দীতে এপিফ্যনিয়াসের (Epiphanius) লেখা পান্ডুলিপিতে সূর্যের শীতকালীন দক্ষিনায়নের সময় (winter solstice) নাবাতিয়ান আরবের দেবী আল্লাৎ ও ধুশারার জন্মোৎসবের অংশ হিসাবে ৭ পাক ঘোরার বর্ণনা পাওয়া যায়।  আজো আরবের অনেক লোকে ‘ছুবু’ নামে এক উৎসব পালন করে, যেখানে এপিফ্যনিয়াসের বর্ণনা মতোই বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে নবজাতককে কোলে নিয়ে বাড়ির চারিদিকে ৭ পাক ঘোরে।

 

উর্বরতার দেবী আল্লাৎ প্রাচীন কালে  সারা বিশ্বে ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পুজিত হতো। গ্রীসে- আফ্রোদিত, রোমে- ভেনাস, মেসোপটেমিয়ায়- ইশতার, ভারতে- মা কালী, আনাতোলিয়ায় – সিবেল এবং নর্স রুপকথায়- ফ্রিগা। এই দেবীর সাথে কালো পাথরের যোগ আছে। আজো সাইপ্রাসের পাফোসের নিকটে আফ্রোদিতের মন্দিরে একটি পবিত্র কালো পাথর সযত্নে রাখা আছে।

 

মজার ব্যাপার হলো গ্রীক রুপকথা অনুযায়ী আফ্রোদিতের সৌন্দর্য এক কালো কিউবে রাখা আছে। কোরআন পরবর্তী অষ্টম শতাব্দীর রোমান খৃষ্টান সুত্র থেকে জানা যায় উমাইয়া খলিফাদের শাসন আমলে ও আরব প্যাগানরা আল্লাৎ তথা আফ্রোদিতের পুজা করত।

 

এই সাইপ্রাসে ‘হালা সুলতান টেক্কে’ নামে মুসলমানদের একটি পবিত্র তীর্থ স্থান আছে। এটি একটি মসজিদ মাজার কমপ্লেক্স এবং এটি এক নারীর সাথে জড়িত। কথিত আছে এই নারীর নাম উম্ম হারাম , যিনি ছিলেন নবী মুহম্মদের দুধ মা ও উবাদা বিন আল-সামিতের স্ত্রী। এখানে ও একটি পবিত্র কালো পাথর আছে এবং ভক্তরা একে মসজিদে নববীর পরে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান মনে করে।

 

উর্বরতার দেবীর সাথে শুক্রবার বা ফ্রাইডের যোগসুত্র আছে। উর্বরতার দেবী ফ্রিগার নামানুসারে এই দিনের নাম রাখা হয় ফ্রিগডে>ফ্রাইডে। কে জানে হয়তো বা শুক্রবার একারনেই মুসলমানদের জন্য এক পবিত্র দিন।

 

১২:১০৬- অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।

 

শয়তান বোকাও নয় বা চুপচাপ বসেও নেই। নিষ্পাপ হওয়ার ভালই টোপ ফেলেছে। সময় এসেছে ভাবার- শয়তানের টোপ গিলে হজ্বের নামে মক্কায় যেয়ে নিষ্পাপ হওয়ার লোভে আমরা পাথর পুজায় লিপ্ত হয়ে শিরক করছি কি না?

হিন্দু ওঅন্যান্য ধর্মানুসারিরা যেমন পূঁজা করতে দেবদেবী আছে  তেমনি মোসলমানদেরও  পূঁজার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম বা বস্তু আছে। তবে, মুসলিমদের নেই।

তার মধ্যে অন্যতম হলো “হজরে আসওয়াদ পাথর” বা মক্কার কালো পাথর।

এরে চুমা-পূঁজা দিলেই নাকি সব পাপ খেয়ে ফেলে?

 

পাথরে চুমা দিলে আসলে কি পাপ মুক্ত হয়?

 

আল্লাহ বলছেন তিনি ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? অথচ বুখারী সাহেবদের মানব রচিত বইতে লিখা আছে হজরে আসওয়াদ পাথর নাকি সাদা ছিল তারপর আদম সন্তানের পাপ নাকি এটি কে কালো করে দিয়েছে অর্থাৎ আদম সন্তানের পাপ শোষণ করে এটি কালো হয়ে গেছে। আরো আছে অনেক ফজিলতের কিচ্ছা।  প্রচলিত কাবায় শয়তান শুধু শিরক ডুকায়নি শিরক যাতে মানুষ করে সেই জন্য এর স্বপক্ষে  মুহাম্মদ এর নামে ফজিলতের হাদিসও সরবরাহ করেছেন। যার কারনে মানুষ এই পাথর পূজা করার জন্য প্রচলিত কা’বাতে মারামারি করে। পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায় প্রায় প্রতি বছর।

 

আল্লাহ  বলেন:

 

Aal-e-Imran 3:135

 

وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا۟ فَٰحِشَةً أَوْ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا۟ ٱللَّهَ فَٱسْتَغْفَرُوا۟ لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلُوا۟ وَهُمْ يَعْلَمُونَ 

 

আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না।

 

প্রচলিত ফযিলতের হাদীস ধারণা:

 

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হাজরে আসওয়াদ একটি জান্নাতি পাথর। তার রং দুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিল। এরপর বনি আদমের পাপরাশি এটিকে কালো বানিয়ে দিয়েছে। ’ (জামে তিরমিজি : ৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ, ১/৩০৭, ৩২৯) ‘হাজরে আসওয়াদ জান্নাতেরই একটি অংশ। ’ (ইবনে খুজায়মা, খণ্ড: ০৪, পৃষ্ঠা: ২২০) ‘কিয়ামতের দিন এ পাথর আবু কুবাইস পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তার একটি জিহ্বা ও দুইটি ঠোঁট থাকবে, (বায়তুল্লাহর জিয়ারতকারীরা) কে কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে বক্তব্য দেবে।’ (ইবনে খুজায়মা : ৪/২২১; মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭)

 

এ সব আজগুবি ফযিলত বর্ণনা করে  মানুষের কাছে তা উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ  কুরআন  অনুযায়ী এসবই মিথ্যা বানোয়াট।

 

হজ্জপর্ব-৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *