আমাদের পূর্বপুরুষদের মুখে আমরা শুনেছি ইবলিশ জিন শয়তান অদৃশ্য তাদেরকে দেখা যায় না,এবং মানব রচিত বিধানে এভাবে বলা হয়েছে যা অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে,আমাদের প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে এই কুরআন কোরআনের ব্যাখ্যা ১৭:৪১ এবং স্পষ্ট ১৬:৮৯ এর ভিতর সবকিছু আছে – ২৭:৭৫, ৭৮:২৯।

এখন দেখব ইবলিশ জিন শয়তান সম্পর্কে মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন কি বলে,আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে ১৫:২৭। আর জিন এবং মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তার এবাদত করার জন্য ৫১:৫৬।

ইবলিশ ছিল জিনদের একজন এবং তার বংশ ছিল। ১৮:৫০।

আল্লাহ জিন ও মানুষের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবেন ৩২:১৩/১১:১১৯। আর ইবলিশ তার রবের হুকুম অমান্য করল,সে আদমকে সিজদা করল না বরং অহংকার করল ফলে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলো। ২:৩৪,।

আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা অচিরেই জিন ও মানুষের কাছ থেকে হিসাব গ্রহণ করবেন [৫৫:৩১]।

কথা হচ্ছে জিন যদি অদৃশ্য হয়,তাহলে জিন এবং মানুষকে আল্লাহ একত্রে হিসাব নিয়ে জাহান্নামে দেওয়ার কথা বললেন কেন? তার মানে অদৃশ্য জিন, এবং দৃশ্যমান মানুষ একত্রে হিসাব দিয়ে জাহান্নামে থাকবে?

এখন দেখুন অন্য আয়াতে আল্লাহ কি বলছেন:আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বুঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল। ৭:১৭৯।

আর যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে সমবেত করবেন। সেদিন বলবেন, ‘হে জিনের দল, মানুষের অনেককে তোমরা বিভ্রান্ত করেছিলে’ এবং মানুষদের মধ্য থেকে তাদের অভিভাবকরা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা একে অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং আমরা সে সময়ে উপনীত হয়েছি, যা আপনি আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন’।

তিনি বলবেন, ‘আগুন তোমাদের ঠিকানা, তোমরা সেখানে স্থায়ী হবে। তবে আল্লাহ যা চান (তা ভিন্ন)’। নিশ্চয় তোমার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। ৬:১২৮।এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় পৃথিবীতে জিনদেরকে মানুষ দেখেছেন এবং চিনতেন।

এখন কথা হচ্ছে যে যদি অদৃশ্য হয় তাহলে এখানে মানুষ তাদেরকে চিনবে কি করে: দেখুন অন্য আয়াতে: আর আল্লাহ যাকেই নবী-রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাকেই মানুষরূপে পুরুষ হিসেবে প্রেরণ করেছেন,যদিও বা সে ফেরেশতা হয় [ ১৯:১৭]।

হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত?’ তারা বলবে, ‘আমরা আমাদের নিজদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’ আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির। ৬:১৩০।একটা বিষয় আমাদের খুব ভালো করে বুঝতে হবে ইবলিশ হচ্ছে একজন ব্যক্তির নাম যিনি ছিলেন জিন ১৮:৫০।

আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে আল্লাহ তাকে কাফের বললেন ২:৩৪। আর ইবলিশ মানুষকে কুমন্ত্রণা দেওয়ার কারণে শয়তান হল ৭:২০।

আর সে তাদের নিকট শপথ করল যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকামীদের একজন’। ৭:২১। নিশ্চয়ই শয়তান পথভ্রষ্টকারি এবং প্রকাশ্য শত্রু [ ২৮:১৫/৩৬:৬০/৪৩:৬২], এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন নিশ্চয়ই শয়তান প্রকাশ্য শত্রু,আর শয়তান মূলত জিন এবং মানুষের মধ্য থেকে ১১৪:৬।

অন্য আয়াতে দেখুন:আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে, তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয় এবং তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করত না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তারা যে মিথ্যা রটায়, তা ত্যাগ কর।৬:১১২।

আলহামদুলিল্লাহ্ আমার সামান্য জ্ঞান দ্বারা মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন থেকে কিছু বাস্তবতা উপস্থাপন করেছি, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ শুধরে নিব, আর জ্ঞানীদের জন্য চিন্তা-ভাবনাও গবেষণার বিষয়

কুরআন গবেষণা করে যতটুকু বুঝতে পেরেছি সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা সর্বপ্রথম ইবলিশের ক্ষেত্রে শয়তান শব্দটা ব্যবহার করেছেন -অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল, বলল, ‘হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্ত জীবনপ্রদ গাছ এবং অক্ষয় রাজত্ব সম্পর্কে?’[২০:১২০]

ইবলিশ শব্দটা কোরআনে পেয়েছি ১১ বার,যেমন- ইবলীছ,ইবলীছা,ইবলীছু, [ ২:৩৪, ৭:১১, ১৫:৩১-৩২, ১৭:৬১, ১৮:৫০, ২০:১১৬, ২৬:৯৫, ৩৪:২০, ৩৮:৭৪-৭৫,] কিন্তু যখনই ইবলিশ সালামুন আলা আদমকে কুমন্ত্রণা দিল এবং পথভ্রষ্ট করল,ঠিক তখনই আল্লাহ তার ক্ষেত্রে শয়তান শব্দটা ব্যবহার করলেন!তার মানে বোঝা গেল শয়তান নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নাম নয় বরং কর্মে পরিচয়।যেমন- মুমিন,মুসলিম,মুত্তাকী, কাফির,মুশরিক, মুনাফিক, শয়তান, একজন ব্যক্তি এসকল নামে পরিচিত হতে পারে তবে তা নির্ভর করে তার কর্মের উপরে, এখন কথা হচ্ছে শয়তানের কাজ কি? শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়,প্রতারণা করে পথভ্রষ্ট করে এবং রবের পথ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ধোকা দেয়,যেমন: কাফের-রবের হুকুম অমান্যকারী ও অস্বীকারকারী।মুশরিক- আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শিরিককারী অথবা আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে মনে করা।

মুনাফিক- কথা ও কাজে মিল না রাখা এবং কোরআনের কিছুসংখ্যক আয়াত মানা আর কিছু সংখ্যক আয়াত গোপনকারী ব্যক্তিকে বলে, এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যাইহোক সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করলাম।

মূল কথা হচ্ছে শয়তানকে নিয়েতাহলে শয়তান কে? এবং সে কি অদৃশ্য নাকি দৃশ্যমান?আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে, তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয় এবং তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করত না।

সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তারা যে মিথ্যা রটায়, তা ত্যাগ কর।৬:১১২।

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম শয়তান মূলত জিন ও মানুষের মধ্য থেকে,আর অন্য আয়াতে আল্লাহ বলছেন: নিশ্চয়ই শয়তান পথভ্রষ্টকারি এবং প্রকাশ্য শত্রু [ ২৮:১৫/৩৬:৬০/৪৩:৬২], এখন কথা হচ্ছে যেখানে আল্লাহ শয়তানকে স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য শত্রু বলেছেন সেখানে অদৃশ্য হওয়ার কোন সঠিক রেফারেন্স নেই! তবে এই আয়াত দ্বারা আমরা শয়তানকে অদৃশ্য মনে করি- নিশ্চয়ই শয়তান ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখনা,[৭:২৭]।

আর আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা এই না দেখাকে মনে করি অদৃশ্য,অথচ বাস্তবতা সাথে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, আজ যদি আমরা বিশ্বের বর্তমান অবস্থার দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পারবো,অসংখ্য বিস্ফোরণ ঘটেছে,অসংখ্য খুন হয়েছে, অনেক ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হয়েছে,অনেক মানুষকে গুম করা হয়েছে,অনেককে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং মেরে ফেলা হয়েছে,ইত্যাদি সহ নানান অপকর্ম চলছে! এখন কথা হচ্ছে আজ পর্যন্ত এগুলোর প্রকৃত আসামীদেরকে কি খুঁজে বের করা সম্ভব হয়েছে কিছুসংখ্যক ছাড়া, ধরুন দূর থেকে কেউ একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে গুলি করল অথবা বিস্ফোরণ ঘটালো, কিন্তু যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে অথবা বিস্ফোরণের শিকার হয়েছেন,তারা কিন্তু দেখেনি এই কাজটা কে করেছেন অথবা কার ইশারায় হচ্ছে, কিন্তু যারা করাচ্ছেন অথবা যে করেছেন, তারা ঠিকই দেখেছেন এখান থেকে কী শিক্ষা নিতে পারি আমরা, যেমন দেখুন: আর যদি আমি চাইতাম তবে আমি তোমাকে এদের দেখিয়ে দিতে পারতাম। ফলে লক্ষণ দেখেই তুমি তাদের চিনতে পারতে। তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদের চিনতে পারবে।

আল্লাহ তোমাদের আমলসমূহ জানেন।[৪৭:৩০]।অবশেষে যখন সে আমার নিকট আসবে তখন সে [তার শয়তান সংগীকে উদ্দেশ্য করে] বলবে, ‘হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের ব্যবধান থাকত’ সুতরাং কতইনা নিকৃষ্ট সে সঙ্গী![৪৩:৩৮]।

আর এভাবেই আমরা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা না করেই,মানব রচিত বিধান অনুযায়ী, আমাদের চারপাশে প্রকাশ্য শয়তান দেখেও, তাদের কুমন্ত্রণা ও প্রবঞ্চনা এবং ধোকায় পড়ে পথভ্রষ্ট হওয়ার পরেও, আমরা অদৃশ্য শয়তানের উপর দোষ চাপিয়ে দেই।এই আয়াত দেখুন :শয়তান এদের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদেরকে আল্লাহর যিকির ভুলিয়ে দিয়েছে।

এরাই শয়তানের দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত।[৫৮:১৯]

আর কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব, জিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়।[ ৪১:২৯]।

হয়তো আপনি এখন ভাববেন তাহলে তারা তো অদৃশ্যই কিন্তু অন্য আয়াত দেখুন:আর যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে সমবেত করবেন। সেদিন বলবেন, ‘হে জিনের দল, মানুষের অনেককে তোমরা বিভ্রান্ত করেছিলে’ এবং মানুষদের মধ্য থেকে তাদের অভিভাবকরা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা একে অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং আমরা সে সময়ে উপনীত হয়েছি, যা আপনি আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন’। তিনি বলবেন, ‘আগুন তোমাদের ঠিকানা, তোমরা সেখানে স্থায়ী হবে। তবে আল্লাহ যা চান (তা ভিন্ন)’।

নিশ্চয় তোমার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।[৬:১২৮]এখন আপনারা আপনাদের জ্ঞান ও বিবেক দিয়ে কোরআন নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা গবেষণা করে দেখুন: আল্লাহর কোরানের এই আয়াত দ্বারা আমাদের কি শিক্ষা দিয়েছেন।

আর যদি আমার ভুল হয় তবে কোরআনের আয়াত দিয়ে ধরিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ শুধরে নিব।আমি কোরআন থেকে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি ততটুকুই শেয়ার করেছি।

যদিও আরো অনেক বিষয় এখানে উপস্থাপন উচিত ছিল কিন্তু লেখার ধরন বেশি বড় আকারের হয়ে যাওয়ার কারণে আর লিখলাম না,যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কোরআন দিয়েই করবেন জানা থাকলে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো?ইনশাআল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহ।

Author MD Khalilur Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *