কুর’আন কি বিচারবুদ্ধির প্রয়োগের বিরুদ্ধে? মানুষকে অন্ধবিশ্বাসী হতে বলে? বিশ্বাসীরা কি নাকে দড়ি বাঁধা উটের পালের মতো অন্ধ অনুসারী মাত্র?- -অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং ইসলাম সম্পর্কে জেনে বুঝে বিশ্বাস স্থাপন করাই মুসলিমের দায়িত্ব, এমনই কুর’আনের শিক্ষা। কিন্তু প্রভাবশালী মোল্লাতন্ত্র যুক্তিবোধকে বিশ্বাসের বিপরীতে দাঁড় করাতে চায়, অন্ধবিশ্বাসকে যুক্তির উপরে স্থান দিয়ে প্রশ্ন করা থেকে চিন্তাশীল মনকে নিবৃত্ত করতে চায়।..

(১) মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়ার দাবীতেই কেউ সত্যিকার অর্থে মুসলিম হয় না। পারিবারিক বিশ্বাসের উপর অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করলে যে কোনো প্রাচীন বিশ্বাস বা সামাজিক প্রথাকে বিনা বিচারে মেনে নিতে হয় এবং এই অন্ধ স্বীকৃতি সর্বজনীন নীতিতে পরিণত হয়। তাই বাবা-দাদারা যা করে আসছে তার অন্ধঅনুসরণ করা সঠিক কাজ নয়। কুর’আনের বিভিন্ন আয়াতে এ ধরনের অন্ধঅনুসরণকে নেতিবাচক অর্থে দেখা হয়েছে:-.’আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আললাহ যা প্রত্যাদেশ করেছেন তা অনুসরণ করো, তারা বলে, না, আমরা আমাদের বাবা-দাদাদেরকে যার উপর পেয়েছি আমরা তাই অনুসরণ করবো; যদিও তাদের বাবা-দাদারা কিছুই বুঝতেন না আর তারা পথপ্রদর্শিতও ছিলো না।’ (কুর’আন, ২/১৭০).

‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো আললাহ যা প্রত্যাদেশ করেন তার দিকে এবং রাসুলের কাছে, তারা বলে, আমাদের জন্য আমাদের বাবা-দাদাদের কাছ থেকে যা পেয়েছি তাই যথেষ্ট; যদিও তাদের বাবা-দাদারা কিছুই জানতো না আর তারা পথপ্রদর্শিতও ছিলো না।’ (কুর’আন,৫/১০৪).

‘আর যখন তারা কোনো অনৈতিক/অশ্লীল কাজ করে তখন বলে আমরা আমদের বাবা-দাদাদেরকে এমন করতে দেখেছি আর আললাহও আমাদেরকে এমন নির্দেশই দিয়েছেন, বলো, নিশ্চয় আললাহ মন্দ কাজের আদেশ করেন না, তোমরা কি আললাহ সম্পর্কে এমন কথা বলো যা তোমরা জানো না?'(কুর’আন,৭/২৮).

‘না, তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আমাদের বাবা-দাদাদের এমনই এক ভিত্তির (উম্মাতিন) উপর দেখেছি , আর আমরা তাদেরই পদক্ষেপ অনুসরণ করে চলি পথপ্রদর্শনস্বরূপ।’ (কুর’আন,৪৩/২২).

‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আললাহ যা প্রত্যাদেশ করেছেন তা অনুসরণ করো, তারা বলে, তারা বলে, না, আমরা আমাদের বাবা-দাদাদেরকে যার উপর পেয়েছি আমরা তাই অনুসরণ করবো; যদিও বা শয়তান তাদেরকে আগুনের শাস্তির দিকে আহবান করে।’ (কুর’আন, ৩১/২১).

.(২) আললাহ’র সৃষ্টিজগতের নিদর্শন নিয়ে, কুর’আনের আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ রয়েছে কুর’আনে। কেনো? বোধসম্পন্ন মানুষেরা যাতে সেসব নিদর্শন দেখে দার্শনিক অনুধ্যান করে একজন সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক সম্পর্কে সত্য উপলব্ধি করে পারে।

-.‘নিশ্চয় নভোমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, আর রাত ও দিনের আবর্তনে বোধ সম্পন্ন মানুষদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’‘যারা আললাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায়, আর আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তামগ্ন থাকে (আর বলে): হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করো নি, প্রশংসা তোমারই; আগুনের শাস্তি হতে তুমি আমাদেরকে রক্ষা করো।’(কুর’আন,৩/১৯০,১৯১).

‘নিশ্চয় ভূমন্ডলে ও পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।”আর তোমাদের সৃষ্টিতে, এবং যে সকল বিচরণশীল প্রাণী তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন, তারা নিদর্শন দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য।'(কুর’আন,৪৫/৩,৪).

‘তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে, যারা জ্ঞানী তাদের জন্য বহু নিদর্শনাবলী।’(কুর’আন,৩০/২২).

‘আর তিনি তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্রকে, আর নক্ষত্র সমূহ সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে; নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (কুর’আন,১৬/১২).

‘তুমি কি দেখোনি আললাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর তা দিয়ে আমি বিভিন্ন রঙের ফল-মূল উৎপাদন করি; আর পর্বতমালার মধ্যে আছে বিভিন্ন রঙের গিরিপথ-শাদা ও লাল ও নিকষ কালো ।’‘আর একইভাবে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, বিচরণশীল জন্তু, গবাদি পশু? আললাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে; নিশ্চয় আললাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’(কুর’আন,৩৫/২৭,২৮).

‘অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে ছিলো, আর আমিই তা পৃথক করলাম। পানি হতে সব প্রাণী সৃষ্টি করলাম, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?'(কুর’আন,২১/৩০).

‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো ও দেখো, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন, অতঃপর সমাপ্তির সৃষ্টির উদ্ভব ঘটান। নিশ্চয় আললাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।'(কুর’আন,২৯/২০).

‘তারা কি তাদের মনে অনুধ্যান করে দেখে না? আললাহ কি জগতসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেননি,আর এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা কেবল সত্য দিয়ে(যথাযথরূপে) ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য? তবুও অনেক মানুষ আছে যারা তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে।’(কুর’আন,৩০/৮).

‘বলো, এটিই আমার পথঃ আমি আললাহ’র পথে আহবান করি, সুনিশ্চিত জ্ঞানে, আমি ও আমাকে যারা অনুসরণ করে। আললাহ পবিত্র! আর আমি শিরককারীদের (অংশীবাদীদের)কেউ নই।’ -(কুর’আন,১২/১০৮)

..(৩) কুর’আনে সুস্পষ্টভাবে কান্ডজ্ঞান ও বিচারবোধ প্রয়োগের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে প্রাণী জগতে মানুষ বুদ্ধিমান ও নৈতিক সত্তারূপে অনন্য অবস্থানে পৌঁছে গেছে। কিন্তু কখনো কখনো মানুষের মধ্যে অনেকে এই মর্যাদা ধরে রাখতে পারে না, কান্ডজ্ঞান ও বিচারবোধ প্রয়োগ না করার কারণে। এ ধরনের চিন্তাবিমুখ অন্ধত্ব মেনে নেয়া মানুষেরা অধম প্রাণীদের মতোই, বা আরও নিচে তাদের স্থান।..’..উদাহরণ আমি মানুষের জন্য দেই, কিন্তু জ্ঞানীরাই তা বোঝে।’ (কুর’আন,২৯/৪৩).

‘যারা আমার নিদর্শনসমূহ (আয়াতসমূহ) অস্বীকার করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত মূক ও বধির। আললাহ যাকে ইচ্ছা করেন পথভ্রষ্টতায় চলতে দেন, আর যাকে ইচ্ছা করেন সরল পথে পরিচালিত করেন।’(কুর’আন,৬/৩৯).

‘তাদের মতো হয়ো না, যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনেনা।‘নিশ্চয়ই আললাহ’র কাছে তারাই নিকৃষ্ট জীব যারা বধির ও মূ্‌ক, যারা অনুধাবন করে না।’ (কুর’আন,৮/২১,২২).

‘তারা কি কুর’আন নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (কুর’আন,-৪৭/২৪).’যাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিলো কিন্তু তারপর তারা তা পালন করেনি তাদের তুলনা হলো, বইয়ের স্তুপ (আসফারান) বহনকারী ঐ গাধার মতো; যারা (আল কাওমি) আললাহ’র নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে তাদের তুলনা কতো দূর্ভাগ্যজনক। আললাহ অন্যায়কারী সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।'(কুর’আন,৬২/৫).

‘তারা কি কুর’আনের বাণী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেনি ? নাকি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্ব পুরুষের কাছে আসে নি?’(কুর’আন,২৩/৬৮).

‘এক প্রত্যাদেশ যা অবর্তীণ করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে।’‘এ একটি কিতাব, যার আয়াতগুলি বিস্তারিত বিবৃত হয়েছে, এক আরবী কুর’আন রূপে, জ্ঞান আছে এমন লোকদের জন্য।’ (কুর’আন,৪১/২,৩).

‘শুধুমাত্র তারাই (কুর’আনের আয়াত) মানে, যারা তা শোনে। আর আললাহ মৃতদেরকে জীবিত করে উত্থিত করবেন। তারপর তারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (কুর’আন,৬/৩৬).

‘এ কিতাব আমি তোমার কাছে নাযিল করেছি, অনুগ্রহপূর্ণ করে (মুবারাকুন) যেনো তারা এর আয়াতগুলি নিয়ে ভাবতে পারে (ইয়াদদাববারু), আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা(উলুল আল-বাবি) মনে রাখে/মনযোগী হয় (ইয়াতাধাক্কারা)।’ (কুর’আন,৩৮/২৯).‘কিতাব সুস্পষ্ট (আল-কিতাব আল-মুবিনি)।’‘নিশ্চয় আমি একে আরবীতে একটি কুর’আন করেছি, যেনো তোমরা বুঝতে পারো।’(কুর’আন,৪৩/২,৩).

‘এ বার্তা মানবজাতির জন্য, যেনো তারা এর দ্বারা সতর্কিত হয়, আর তারা জানতে পারে কেবল তিনিই এক ইলাহ ও একক, আর বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা মনোযোগ দিতে পারে।’(কুর’আন,১৪/৫২).

‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই,তা অনুসরণ করো না। নিশ্চয় শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টিশক্তি আর অন্তকরণ- এদের প্রত্যেটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।'(কুর’আন,১৭/৩৬)

..(৪) কুর’আন একটি কিতাব। এই কিতাবের আয়াতগুলি সুর করে তেলওয়াতের জন্য নয়, অথবা এটি বোঝার দায়িত্ব শুধু একটি গোষ্ঠীর উপর দেয়া হয়নি। কুর’আনের শিক্ষাগ্রহণ করার দায়-দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলিমের নিজের, এবং ইসলামকে বোঝার জন্য কুর’আন একমাত্র ব্যাখ্যা গ্রন্থ।.‘….. আর আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব, সবকিছুর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করে, আর পথপ্রদর্শন, ক্ষমা ও যারা আত্মসমর্পণ করেছে (যারা বিশ্বাস এনেছে) তাদের জন্য সুসংবাদ হিসেবে ।’ (কুর’আন,১৬/৮৯).

‘আর আমি তোমার প্রতি এ জন্যেই কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যেনো তুমি তাদের কাছে ঐ বিষয়গুলি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারো যেগুলি নিয়ে তারা মতবিরোধ করছে, আর বিশ্বাস এনেছে এমন মানুষদের জন্যে এক পথ-নির্দেশনা ও ক্ষমা স্বরূপ।’ (কুর’আন,১৬/৬৪).

‘নিশ্চয় কুর’আন (সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ের) সবকিছুর ব্যাখ্যাকারী কথা।’ (কুর’আন,৮৬/১৩).

‘তিনি তোমার কাছে নাযিল করেছেন কিতাব,যেখানে রয়েছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ,যা কিতাবের মূল,আর অন্য অংশ উপমাভিত্তিক। কাজেই যাদের মনে কুটিলতা আছে তারা ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে উপমাভিত্তিক (বিবিধ অর্থবোধক, মুতাশাবিহাতুন) অংশের অনুসরণ করে, অথচ তার ব্যাখ্যা আললাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। গভীর জ্ঞানের অধিকারী যারা তারা বলে,আমরা তা বিশ্বাস করি এসব আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এসেছে,আর বোধশক্তিসম্পন্ন ছাড়া কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।’ (কুর’আন,৩/৭)

Source: collected from

https://www.facebook.com/groups/379960723877525/permalink/448792606994336/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *