( ৩৯:১৮) যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে এবং ওর মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে তাদেরকে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং তারাই বোধশক্তি সম্পন্ন।আলোচনার বিষয় প্রচলিত নামাজ এবং কুরআনের (২৯:৪৫) সালাতের বাস্তবতা নিয়ে,যা মানুষকে অশ্লীল ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখে। আমরা অধিকাংশ মানুষই পূর্ববর্তীদের রূপকথা ও বিকৃতি অনুবাদ এবং ব্যক্তিগত মতামত দ্বারা কোরআনের َأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ অর্থ প্রচলিত নামাজ পড়াকে বুঝে থাকি, যার কারণে আমরা এই নামাজের দ্বারা আমাদের জীবন ব্যবস্থা পরিশুদ্ধ করতে পারিনা, তাই আসুন দেখি কোরআনের সালাতের বাস্তবতা …. (২৯:৪৫)পাঠ করো যা ওহী করা হয়েছে তোমার প্রতি কিতাব থেকে এবং প্রতিষ্ঠা করো সালাত, নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বশেষ্ঠ , ও আল্লাহ জানে যা কিছু তোমরা করছ। এই আয়াতে প্রথমেই কিতাব থেকে পাঠ করার কথা বলা হয়েছে ,আর (৭:২০৪) বলা হয়েছে, এবং যখন পাঠ করা হয় কোরান তখন তোমরা তাঁর প্রতি মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং তোমরা চুপ থাকো যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। তার মানে যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন মনোযোগ দিয়ে চুপচাপ তা শুনতে হবে ,যাতে হেদায়েত প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং সঠিক পথ পাওয়া যায়। যেমন এর বাস্তবতা দেখুন-(৪৬:২৯…..৩২) ।সুতরাং এই আয়াতগুলো দ্বারা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে কিতাব ٱتْلُ অর্থাৎ পাঠ করা এবং َأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ দুটো এক জিনিস নয় তবে এটাও সালাতের অন্তর্ভুক্ত যেহেতু আল্লাহর আদেশ। তার পরেও (২৯:৪৫) আয়াত অনুযায়ী যদি আমরা কোরআনের َأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ অর্থে প্রচলিত নামাজ বলে দাবি করি, তাহলে অবশ্যই এই আয়াতকে তুচ্ছ এবং মিথ্যে বলে প্রমাণ করা হবে! কেননা এই আয়াতে আল্লাহ নিজেই গ্যারান্টি দিচ্ছেন , সালাত অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখে। (২৯:৪৫) এই আয়াতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি আমরা গভীর মনোযোগ সহকারে গবেষণা করি এবং তা অনুধাবন করি তবে অবশ্যই কোরআনের সালাতে বাস্তবতা বেরিয়ে আসবে ইনশাল্লাহ।যেমন- (২৯:৪৫) (১)আল্লাহ শুরুতেই বলেছেন- কিতাব থেকে পাঠ করতে, (২) وَ এবং َأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ অর্থাৎ এই কিতাবে আল্লাহর যে আদেশ নির্দেশ আছে তাতে প্রতিষ্ঠিত থাকতে, (৩)গ্যারান্টি দিচ্ছেন আল্লাহ, إِنَّ নিশ্চয়ই ٱلصَّلَوٰةَ অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ নির্দেশ বিরত রাখে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম হতে, (৪) وَ এবং لَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ অর্থাৎ আল্লাহর স্মরণই সর্বশেষ্ঠ ,(৫) وَ ও আল্লাহ জানেন যা কিছু তোমরা করছ । হয়তো অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে আমি এখানে যতটুকু বিষয় উপস্থাপন করেছি এসবই আমার মনগড়া অথবা ব্যক্তিগত উপলব্ধি, হ্যাঁ হতে পারে যেহেতু আমি মানুষ নবী-রাসূল নই সে ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে।তাহলে আসুন এখন এর বাস্তবতা দেখি…… আমরা যদি এই আয়াত প্রচলিত নামাজ অর্থে গ্রহণ করি ,তাহলে অবশ্যই তা কুরআন বিরোধী, কেননা এই নামাজ প্রথমত ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ, দ্বিতীয়ত মানুষকে কখনোই অশ্লীল ও অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারে না , যার বাস্তব প্রমাণ আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি।এছাড়া সালামুন আলা ইউসুফ এর ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেছেন-(১২:২৪)সেই রমণীতো তার প্রতি আসক্ত হয়ে ছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার রবের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধ চিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় নামাজ কখনোই মানুষকে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখে না কিন্তু বিরত রাখে আল্লাহর আদেশ নির্দেশ অর্থাৎ উপদেশ বাণী।যেমন-(২:১৬৮-১৬৯) বলা হয়েছে শয়তান মানুষকে অশ্লীলতা ও অসৎ কর্মের নির্দেশ দেয় এবং এমন কিছু বলতে যা আমরা জানিনা। আর (২:২৬৮) বলা হয়েছে- শয়তান তোমাদেরকে অভাব ও ভীতি প্রদর্শন করে এবং তোমাদেরকে অশ্লীলতার আদেশ করে এবং আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিকট হতে ক্ষমা ও দয়ার অংগীকার করেন। আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, সর্বজ্ঞ। আরো দেখুন- (৭:২৮,:১৬:৯০, ২৪:২১) । হয়তো অনেকেই প্রশ্ন করবেন তাহলে আল্লাহর ٱلصَّلَوٰةَۖ আদেশ নির্দেশ কিভাবে মানুষকে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখে? হ্যাঁ এর বাস্তবতা বুঝতে হলে আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে (২৯:৪৫) যেখানে বলা হয়েছিল لَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ আল্লাহর স্মরণে সর্ব শ্রেষ্ঠ , একটু গভীর মনোযোগ সহকারে গবেষণা করে দেখুন তো আল্লাহ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ অর্থাৎ নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে , এরপরই আল্লাহ বললেন- وَلَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ এবং আল্লাহর স্মরণেই সর্বশ্রেষ্ঠ, وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُونَ এবং আল্লাহ জানেন যা কিছু তোমরা করছ ।প্রচলিত নামাজের জন্য একটা টাইম থাকে ,কোন মানুষ সর্বাবস্থায় নামাজে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না, ফজরের সময় জামাতে নামাজ পড়ে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্মস্থান অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার সময় কোন ধরনের অশ্লীলতা অথবা অসৎকর্ম করার মনোভাব অন্তরে তৈরি হলে ,অথবা সুযোগ পেলে আমরা কি কেউ এই চিন্তা করে বাঁচতে পারি যে আমরা তো ফজরের নামাজ পড়ে এসেছি তাই এই অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম করা যাবে না ,যদি তাই হয় তাহলে বর্তমানে বেশিরভাগ নামাজিদের অবস্থা এমন কেন?যেমন ধর্ম ব্যবসা দুর্নীতি অশ্লীলতা জুলুম অন্যায় অত্যাচার এবং সম্পদ ব্যয় না করে তা জমা রাখা, অর্থাৎ অশ্লীলতা ও অসৎকর্মে সাথে যুক্ত থাকা। তবে কি আল্লাহর এই গ্যারান্টি মিথ্যে إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ অর্থাৎ নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে মানুষকে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে। না কখনওই আল্লাহর এই আয়াত মিথ্যে নয় বরং তার এই আয়াত আমাদের বুঝতে ভুল হচ্ছে। অন্তরে অশ্লীলতা অথবা অসৎকর্মের প্রভাব তৈরি হলে অথবা এরকম সুযোগ পেলে ,আমাদেরকে যে সালাত এখান থেকে বিরত রাখবে ,সেটাই হচ্ছে আল্লাহর আদেশ নির্দেশ মূলক সতর্কবার্তা। মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন অশ্লীলতা অথবা অসৎকর্মের সাথে সংযুক্ত হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অন্তর এগুলো অনুধাবন করে এবং এগুলোর প্রতি তাকে আকৃষ্ট করে তুলে। কেননা মানুষের অন্তর এমনই যা শুধু তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে, এজন্যই মানুষ অশ্লীলতা ও অসৎকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে ,আর যখনই এ ধরনের কোন মনোভাব অন্তরে তৈরি হয়, তখনই যারা ٱلصَّلَوٰةَ অর্থাৎ রবের আদেশ নির্দেশ মূলক সতর্কবাণী গুলো স্মরণ করে ,তখনই তারা এ ধরনের অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত থাকতে পারে।কেননা অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম অন্তরে স্বরণ হওয়া ব্যতীত কেউ আমরা এসবের দিকে ধাবিত হয়ে যাই না। আর যখনই এই অশ্লীলতা ও অসৎ কর্ম আমাদের অন্তরে স্মরণ হয় ,ঠিক তখনই ٱلصَّلَوٰةَ অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ নির্দেশ উপদেশ বাণী গুলো স্মরণের মাধ্যমে এসব থেকে বিরত থাকতে পারবো, যেহেতু আল্লাহ সতর্ক করে দিলেন (২৯:৪৫) আয়াতের শেষেই- وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُونَ অর্থাৎ আল্লাহ জানেন যা কিছু তোমরা করছ। যেমন- (১১:১১৪) বলা হয়েছে- এবং প্রতিষ্ঠিত থাকো আল্লাহর আদেশ নির্দেশে দিনের দুই প্রান্তে থেকে এবং রাতের নিকটে, নিশ্চয়ই সৎকর্ম দূর করে দেয় অসৎকর্মগুলোকে এটা উপদেশ উপদেশগ্রহণকারীদের জন্য। আমাদের মনে রাখতে হবে অশ্লীলতা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে সৎকর্ম করা অর্থাৎ আল্লাহ যে বিষয়ে নিষেধ করেছেন তা থেকে ফিরে আসা এবং তিনি যে বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন সে বিষয়ে মেনে নেয়া। কেননা মানুষের জীবন কখনো কর্মহীন হয়না, মানুষ কোন না কোন কর্মের সাথে যুক্ত থাকে আর এখানে হচ্ছে পার্থক্য।আমি কোরআন থেকে আপাতত এতোটুকুই গবেষণা মূলক তথ্য পেশ করেছি, কেউ প্রচলিত অনুবাদ এর উপর নির্ভর থেকে এবং কারো মতামতের উপর নির্ভর থেকে বিতর্কে লিপ্ত না হয় ,নিজে গবেষণা করুন, এবং ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন শুধরে নিব ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *