ভূমিকা…

কুরআনিক শিক্ষার বিপরিতে অধিকাংশ মুহাম্মদীরা (সুন্নী , শিয়া , সুফি) বিশ্বাস করে যে হাশরের দিনে মুহাম্মদ (এবং ঈমাম , পীর, সুফি) নিজ নিজ উম্মত ও অনুসারীদের মাঝে যারা পাপী তাদের জন্য সুপারিশ করে বেহেস্ত পাইয়ে দেবেন| এভাবেই তারা কোরআনে শেষ দিবসের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাকে বিকৃত করে মুহাম্মদ ,ঈমাম ও পীর সুফিদের এমন ভাবে বাজারজাত করে যেন আল্লাহ নন বরং পীর পয়গম্বররাই বিচার দিবসের নিয়ন্তা। সত্য হলো , এই বিশ্বাস শেষ বিচার দিবসে আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতাকে খর্ব করার সামিলই শুধু নয় , এই বিশ্বাস কোরানের বহু আয়াতকে অস্বীকার ও নিষ্কৃয় করে দেয়|

আজকের মুহাম্মদীদের নৈতিক অধঃপতনের মূলেও এই ভ্রান্ত বিশ্বাস| কেন তারা সৎ , ভাল নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করবে , যখন তারা নিশ্চিত জানে মুসলমান হওয়ার সুবাদে বা সুন্নত পালন করার কারনে বা ঈমামের বা পীরের অনুসারী হওয়ার সুবাদে পরকালে তাদের কিছুই হবে না , পীর পয়গম্বররা সুপারিশ করে তাদের দোযখে যাওয়ার বদলে বেহেস্তে পাঠাবে। এদের অবস্থা সেই সকল ছাত্রের মতো , যারা সারা বছর পড়াশুনা না করে টুকে বা ঘুষ দিয়ে পাশ করতে চায়।

  • ইসলামে শাফায়াতের সূচনা

কোরআনের আয়াত দৃঢ়রুপে ঘোষনা দেয় যে , ইহকাল ও পরকালের ভবিষ্যত সম্পর্কে আধ্যাত্মিক কোন জ্ঞান মুহাম্মদের ছিল না| এমনকি নিজের ভাল ভাল বা মন্দ করার ক্ষমতাও তার ছিল না|

নবীকে তার শেষ দিনের অবস্থা সম্পর্কে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়।
“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের(ভবিষ্যতের) কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। ৭:১৮৮”

“আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় (ভবিষ্যত) অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? ৬:৫০”

ফলে মুহাম্মদ যে শাফায়াত সম্পর্কে কখনো কিছু বলেন নি , তা নিশ্চিতরুপে বলা যায়। তাই মুহাম্মদের নামে প্রচলিত তথাকথিত হাদিস গ্রন্থগুলিতে শাফায়াত নিয়ে লিখিত কল্প কাহিনী গুলো যে সর্বৈব মিথ্যা তা নিঃসন্দেহে বলা যায়| শাফায়াত নিয়ে কোরআনে ও হাদিসে যে বর্ণনা পাই , তা পরষ্পর বিরোধী এবং এদের ভিতরে সমন্বয় করা অসম্ভব|

কোরআনিক আয়াত ১:৪ অনুসারে বিচার দিবসের একমাত্র মালিক আল্লাহ
। কথিত মুহাম্মদ ও সকল নবীগন অন্য সকলের মতোই নশ্বর মনুষ্য আত্মা…:

নবীকে আল্লাহ বলেন:
বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। ১৮:১১০”।

শেষ দিবস নিয়ে কোরআনের এই আয়াত আর সকল আত্মার মতোই মুহাম্মদের জন্যেও প্রযোজ্য…

“যেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর। ৮২:১৯”

একারনে আল্লাহ নবীকে বলেছেন..”হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর। ৩:১২৮”।

বিচার দিবসের একমাত্র মালিক ও কর্তা যখন কোন রায় দেবেন ,তা যে রদ বদল হবেনা আমরা সেটা জানতে পারি নিম্মের আয়াত থেকে..”আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই। ৫০:২৯”।

যদি কেউ ধারনা করে থাকে যে শেষ বিচারে আল্লাহ কাউকে দোযখে পাঠানোর রায় দেন এবং মুহাম্মদ বা অন্য কেউ সুপারিশ করে সে রায় পরিবর্তন করে তাকে বাচিয়ে দেবেন , তাহলে সে কোরআন অস্বীকার করার পাপে পাপী হবে।
যার জন্য দোযখের রায় হয়ে গেছে , তার জন্য সুপারিশ করে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না| কারন আল্লাহ বলেছেন…

“যার জন্যে শাস্তির হুকুম অবধারিত হয়ে গেছে আপনি কি সে জাহান্নামীকে মুক্ত করতে পারবেন? ৩৯:১৯”

শাফায়াতের হাদীসে বিশ্বাসের অর্থই হলো কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে মুহাম্মদ বা অন্যদেরকে দেবতার আসনে বসানোর সমতুল্য। কারন এদের ধারনা এই দেবতারা আল্লাহর থেকেও দয়ালু এবং এই দেবতারা তাদের ইচ্ছাকে আল্লাহর উপরে চাপিয়ে দিয়ে তার রায় পরিবর্তন করতে সক্ষম।

কোরআনে কখনোই শেষ বিচার দিবসে মুহাম্মদের বিশেষ কোন ভূমিকার কথা বলা হয় নি , বরং অন্য আর সকলের মতোই মুহাম্মদকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে এবং নিম্নের এই আয়াত মুহাম্মদ ও অন্য আর সকল রসূল পয়গম্বরদের জন্য ও প্রযোজ্য…

“সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। ৮০:৩৪-৩৭”

সুতরাং সেদিন মুহাম্মদ বা অন্য কারো শাফায়াত দুরে থাক , অন্য কারোর জন্য চিন্তা করার সময় ও সুযোগ কোনটাই থাকবেনা| আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন..

“হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। ৩১:৩৩”

মুহাম্মদ সেদিন তার উম্মত দুরে থাক, নিজের কন্যা ফাতেমার ও কোন উপকারে আসবেন না।
এটা ভাবা অযৌক্তিক যে মুহাম্মদ অন্যের বিচারে হস্তক্ষেপ করবেন , যখন তিনি নিজে আর সকল মানষদের মতোই বিচারের সম্মুখীন হবেন , জিজ্ঞাসিত হবেন।

“অতএব, আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব যাদের কাছে রসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই জিজ্ঞেস করব রসূলগণকে। ৭:৬”

মুহাম্মদকে ও বিচারের আওতা থেকে বাদ দেয়া হবে না|

“এটা (কোরআন) আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্যে স্মরনিকা এবং শীঘ্রই আপনারা জিজ্ঞাসিত হবেন| ৪৩:৪৪”

বর্তমানের মুসলমানরা যাদের সাথে মুহাম্মদের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তাদের কথা বাদই দিলাম , যারা তার সমসাময়িক সেই মুসলমানদেরও তিনি কোন কাজে আসবেন না…

“আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালকর্তার ইবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাব বিন্দুমাত্রও তাদের দায়িত্বে নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন। নতুবা আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন। ৬:৫২”

আল্লাহ ন্যায় বিচারক ও সর্বজ্ঞ। সুপারিশের মাধ্যমে বিচারের রায় পরিবর্তন করা গেলে , সে বিচার ন্যায় বিচার নয়|

“আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট। ২১:৪৭”

কোরআনে যে সকল আয়াতে শাফায়াত (شَفَٰعَ) শব্দটি আছে , সেই আয়াত গুলো দুই রকমের : সুস্পষ্ট ও রুপক। সুস্পষ্ট আয়াত গুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কোন শাফায়াত নেই| মুহাম্মদীরা রুপক আয়াতগুলোকে ত্যনা পেচিয়ে প্রমাণ করতে চায় শাফায়াত আছে। এ ব্যাপারে কোরআনে বলা হয়েছে…

“তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক । সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। ৩:৭”

চলুন সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পড়া যাক….

“আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। ২:৪৮”

“হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। ২:২৫৪”

“তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না। ২:১২৩”

“আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না। ৩৬:২৩”

শাফায়াত সুপারিশের অধিকারী কে হবেন?

“বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই , আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। ৩৯:৪৪”

কোরআনের শাফায়াত সংক্রান্ত রুপক আয়াতগুলো নিয়ে আলোচনা করার আগে চলুন উত্তর খোঁজা যাক
“সূরা মারইয়াম:19/87 – যে দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”। এর উত্তর জানলে রুপক আয়াতগুলো বুঝতে সুবিধা হবে।

কে বা কারা শেষ বিচার দিবসে সুপারিশের অধিকারী হবে? কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াত অনুযায়ী ইনি হলেন – আল্লাহ।

“আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন,তার জন্য অনুমতি না দেন। ৫৩:২৬”

কেন শুধু আল্লাহই সুপারিশের অধিকারী হবেন সেটা জানার আগে চলুন জানা যাক কেন নবী রসূল সহ কোন মানুষ সুপারিশের অধিকারী হবেন না বা সুপারিশ করার যোগ্যতা রাখেন না বা নিজেকে ছাড়া অন্যকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময় ও সুযোগ কোনটাই নেই।

শেষ বিচার দিবসে মানুষের না থাকবে কোন সাহায্যকারী , না থাকবে কোন সুপারিশকারী| তারা একাই বিচারের সম্মুখীন হবে| সেদিন আল্লাহ বলবেন…

“তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, যেমন আমি প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে এসেছ। আমি তো তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে তোমাদের দাবী ছিল যে, তারা তোমাদের ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের দাবী উধাও হয়ে গেছে। ৬:৯৪”

এর অর্থ দাড়ায় সামাজিক প্রতিপত্তি , ধণ সম্পদ , সন্তান সন্ততি , আত্মীয় স্বজন , সুপারিশকারী কেউই সেদিন সঙ্গে থাকবে না| শুধু তাই নয় নিজের চিন্তায় এমনই ব্যতিব্যাস্ত থাকবে যে এদের থেকে পালিয়ে যাবে…

“সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। ৮০:৩৪-৩৭”

নবী রসূলদের ও পিতা মাতা পত্নী সন্তান সন্ততী ছিল। তারা ও অন্যান্য মানুষের মতোই পালাবে| তারাও অন্যান্য মানুষের মতোই আল্লাহর দাস , তারাও একাকি উত্থিত হবে….

“নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না। তাঁর কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গণনা করে রেখেছেন। কেয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে। ১৯:৯৩-৯৫”

সেদিন প্রতিটি মানব আত্মা নিজের ওকালতি নিজেই করবে….

“যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্ন-সমর্থনে সওয়াল জওয়াব করতে করতে আসবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের পূর্ণ ফল পাবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না। ১৬:১১১”

প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে কে থাকবে ও সুপারিশ করবে বা সেই সুপারিশের ফল কী?

সুস্পষ্ট কোরআনের আয়াতগুলো থেকে জানলাম – শেষ বিচারের দিনে সকল মানুষ একাকি নিঃসঙ্গভাবে উদভ্রান্তের মতো পালিয়ে বেড়াবে এবং শুধুমাত্র নিজের ভবিষ্যত চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে।এরপরেও যারা এখনো ভাবছেন আল্লাহ মুহাম্মদকে তাদের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন তাদের জন্য..

এই আয়াতগুলোর শুরুতেই কথিত মুহাম্মদকে আল্লাহ তিরস্কার করছেন তার যুদ্ধের সঙ্গী নিকটস্ত কিছু সাহাবির পক্ষে বিতর্ক করার জন্য।

“নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। যারা মনে বিশ্বাস ঘাতকতা পোষণ করে তাদের পক্ষ থেকে বিতর্ক করবেন না। আল্লাহ পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাস ঘাতক পাপী। ৪:১০৫-১০৭”

এর পরের আয়াতে এই বিশ্বাস ঘাতক পাপীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ জানিয়ে তিনি কথিত মুহাম্মদকে আবার ও তিরস্কার করে বলছেন….

“শুনছ? তুমি তাদের পক্ষ থেকে পার্থিব জীবনে বিতর্ক করছ, অতঃপর কেয়ামতের দিনে তাদের পক্ষ হয়ে আল্লাহর সাথে কে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে? ৪:১০৯”

ভাবুন একবার..নিকট সাহাবিদের জন্যেও মুহাম্মদের ওকালতি করার অনুমতি নেই , না ইহ জীবনে না পরকালে , সেখানে অন্যান্য মুসলমানেরা কিভাবে মুহাম্মদের শাফায়াতের আশা করতে পারে!!

“তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোন এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও? বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” ৩৯:৪৩-৪৪

উপরের এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ ছাড়া কোন সুপারিশকারী নেই। কিন্তু ৫৩:২৬ আয়াত অনুযায়ী “আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন,তার জন্য অনুমতি না দেন”| তাহলে আয়াত দুটি কি পরষ্পর বিরোধী হয়ে গেল না? না| কারন – ফেরেশতারা নিজের ইচ্ছায় কিছু করেন না , তারা আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমেই সব কিছু করেন| এ কারনে ফেরেশতাদের কাজ কে ও আল্লাহর কাজ বলেই ধরা হয়
। এটা বুঝতে নিচের আয়াতদুটি দেখুন …

“আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়,”… ৩৯:৪২
“বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে।”৩২:১১

একই যুক্তিতে বলা যায় আল্লাহ যখন কোন ব্যক্তিকে করুনা করতে চান , তখন ফেরেশতাদের সেই কাজ করার অনুমতি দেন।প্রথম থেকে শুরু করা যাক , আল্লাহ প্রতিটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বক্ষনের জন্য দুটি ফেরেশতাকে নিয়োজিত করেছেন তার সকল কর্ম নথীভুক্ত করার জন্য।

“আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” ৫০:১৬-১৮

“অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর। “৮২:১০-১২

শেষ বিচারের দিন সকলেই একাকি উত্থিত হবে ,অর্থাৎ কোন মানব আত্মা তার সঙ্গে থাকবে না| (নবী রসূলরাও মানব আত্মা) শুধু থাকবে দুই ফেরেশতা তাদের সঙ্গে..

“এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন। প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী। তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন। তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই। তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে,”৫০:২০-২৪

বিচার শেষ এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করাও সম্পন্ন। এর ভিতরেই যা করার করতে হবে। আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে নিজের ওকালতি নিজেকেই করতে হবে এবং সাক্ষী হিসাবে সর্বক্ষনের সঙ্গী এই ফেরেশতারারা ছাড়া আর কেউ থাকবে না। সুতরাং সত্যিকারের সুপারিশ তো এই ফেরেশতারাই করবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে। এদের পক্ষেই করা সম্ভব সুপারিশ করা , কারন এরা তার সকল কাজের সাক্ষী। কোন মানুষের পক্ষে সুপারিশকারী হওয়া সম্ভব নয় , কারন তারা সকল কর্মের সাক্ষী বাস্তবিকভাবে হতে পারে না।

সুতরাং আমরা এই উপসংহারে পৌছাতে পারি যে , আল্লাহ যার উপর করুনা করতে চান তার জন্য ফেরেশতাদের অনুমতি দেবেন তার ভাল কাজের সাক্ষ্য তথা সুপারিশ করতে|

শিক্ষা- শাফায়াতের আশা ভুলে যান। শাফায়াত /সুপারিশ শুধু আল্লাহর জন্য
অন্য কেউ সুপারিশ করতে পারবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *