اذا قمتم-
সূরা মায়েদা ৬ নম্বর আয়াতের إِذَا قُمْتُمْ (ইযা কুমতুম) মানে যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াও – অনেকেই এই কুমু শব্দের অর্থ সালাতে দাঁড়াও মানে নামাজে দাঁড়ানো বা নামাজ পড়া সেটা বোঝায়
আসুন প্রথমে ক্বমু ক্রিয়ার আক্ষরিক অনুবাদ থেকে এর ব্যবহার দেখে নেই।
১. ওয়া ইযা আযলামু আলাইহিম- ক্বমু; যখন তাদের ওপর আঁধার আচ্ছন্ন হয়- তারা দাঁড়িয়ে যায় (ক্বমু) (রূপক-অর্থ) ২:২০;
২. ওয়া ক্বুমু লিল্লাহি; আল্লাহর জন্য দাঁড়াও (২ পা না !) ২:২৩৮
৩. ফাল-তাকুমু ত্বয়িফাতুন..; তখন একদল দাঁড়াক… (বিশেষ কাজ করা) ৪:১০২
৪. তাক্বুমু লিল ইয়াতামা বিল-ক্বিসতি; এতিমের জন্য দাঁড়াক ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে ৪:১২৭
৫. ১৮:১৪ আমি তাদের হৃদয়কে দৃঢ় করলাম যখন তারা দাঁড়ালো অতঃপর বলল …
ক্বমু নিয়ে সামান্য ক’টি উদাহরণ। মহাগ্রন্থ-জুড়ে এমন আরও ৩০/৪০টি উদাহরণ পাওয়া যাবে। যে কথা আগেও বলেছিলাম, ক্রিয়াপদের অর্থ নির্ভর করে বাক্যের সাবজেক্ট এবং যে বিষয়ের সঙ্গে ক্রিয়াপদটি যুক্ত, তার ওপর।
দাঁড়ানো নিয়েই বাংলা ভাষার উদাহরণ দেখুন।
–তুমি ৫ মিনিট দাঁড়াও, আমি আসছি। সে আমাকে ঘণ্টাখানেক দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
এখানে দাঁড়ানো মানে অপেক্ষা করা। সে শুয়ে বসেও অপেক্ষা করতে পারে।
–সমাজ ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়েছে। মানে? সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত।
–তার দুটি পা নেই। তবুও সে নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে দাঁড়ানো মানে স্বনির্ভরতা।
এভাবেই, আল্লাহর জন্য দাঁড়াও (ক্বুমু লিল্লাহি!), দুই পায়ে নয় বরং আল-হকের পক্ষে দাঁড়ানো। এতিমের ন্যায্যতার জন্য দাঁড়াও (কুমু); এটা কি দুই পা দিয়ে?!?!?
এমনকি ইংরেজি ভাষায় STAND কখনও বিশেষ্য (Noun – A position, opinion, or attitude on a particular issue), কখনও ক্রিয়াপদ। Stand Up ! দুই পায়ে দাঁড়ানো হলেও Stand for Truth ! সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো! Stand by me- আমার পাশে থাকো…।
এভাবেই মহাগ্রন্থে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে পিটি-প্যারেড শেখানো হয় নি। বিষয়টা আদতে পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো নয়, বরং যেসব বিষয়ে কথা বলা হয়ে, সেই বিষয়ের পক্ষে দাঁড়ানো, সত্য-ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো, দুর্বলের পক্ষে দাঁড়ানো ইত্যাদি অর্থই ক্বুমু ব্যবহৃত হয়েছে। আকিমুস-সালাত.. সালাতে দাঁড়ানো না !! বরং সালাতকে দাঁড় করানো বা প্রতিষ্ঠা করানো। এখন, সালাত অর্থ উল্টাপাল্টা করলেই কুমু/কিয়াম/আকিম অর্থ পাল্টে যাবে। বাবের সিগা না জানলেও, স্বাভাবিক ভাষা জ্ঞান দিয়ে তা বোঝা যায়।
اِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَ لَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیۡلًا
(সুরা নিসা ১৪২)
“মুনাফিকরা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায় অলসভাবে, লোক দেখাতে, আল্লাহ কে খুব কমই স্বরণ করে।”
মুনাফিকরা সালাতে দাঁড়াতো কিন্তু অলস ভাবে, লোক দেখাতে। এখানে কি প্রচলিত জামাতের সালাত বুঝাচ্ছে? প্রকাশ্য জামাত না হলে লোকে কেমনে দেখবে?
আয়াতে ক্বম মানে দাঁড়ানো নয়, আক্বিম শব্দের ক্রিয়া হলো ক্বম। এর অর্থ প্রতিষ্ঠা করা।
এখানে সালাত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে। যখন মুনাফিকরা সে কাজটা করে, তা লোক দেখানোর জন্য করে।
সালাত প্রতিষ্ঠা মানে হলো তার কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশাবলী প্রতিষ্ঠা করা। যেমন ওজনে কম না দেয়া,ভারসাম্য ঠিক রাখা হলো সালাত প্রতিষ্ঠা। মুনাফিকরা এই কাজটিও লোক দেখানোর জন্য করতে পারে। যেমন কেউ ৮ ঘন্টার চাকরিতে উপস্থিত থাকতেছে ঠিকই, কিন্তু চা সিগারেট নামাজ বিরতির নামে ২ ঘন্টা কাটিয়ে এসে ওজনে কম দিচ্ছে। কিন্তু লোকে বা বস দেখতেছে যে সে ৮ ঘন্টা অফিসেই আছে।
আবার কুরআন প্রচারও সালাত প্রতিষ্ঠা। মুনাফিকরা সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার লোভেও কুরআন প্রচার করতে পারে।
এখানে জামাতে নামাজ পড়ার কথা বলা হচ্ছে না।
কে কি উদ্দেশ্যে কি করতেছে সেটা আল্লাহ ভালমতই জানেন। আল্লাহর সাথে ধোকাবাজি চলবে না ৪ঃ১৪১-১৪২.
ওজু
ওজু/,গোসল /তায়াম্মুম/তাহির/ইউযাক্কি
(পর্ব-০১-০৫)
Al-Ma’idah ৫:৬
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا قُمْتُمْ اِلَي الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَي الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَي الْكَعْبَيْنِ ؕ وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ؕ وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤي اَوْ عَلٰي سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ ؕ مَا يُرِيْدُ اللّٰهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
ওযুর আয়াত ৫ঃ৬ এর অনুবাদটি ভুলে ভরা। যেমন তায়ম্মুম শব্দটার অনুবাদ ২ঃ২৬৭ এ করেছে Aim at বা লক্ষ্য নির্ধারণ, অথচ ৫ঃ৬ এ শব্দটা এভাবেই রেখে দিয়েছে, কোনো অনুবাদ করেনি।
“হে যারা ঈমান এনেছো!
যখন তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠিত (ক্বুম, যা কিয়াম এর ডেরিভেটিভ) করো”
part 1
ফা ইঘসিলু- Then wash/purify (ধাতু- ঘাইন-সিন-লাম, ঘুসল (গোসল) করা)। এখানে purify শব্দটা বেশি ফিট করে।
উজুহাকুম-Your direction , তোমাদের অভিমুখিতা/লক্ষ্য
ওয়া আইদিয়াকুম – And your preconceptions/conceptions (তোমাদের পূর্ববর্তী ধারণা), ধাতু ইয়া-দাল-ইয়া থেকে উৎপন্ন আরেকটি শব্দ হলো yad, বা স্মরণ করা)
ইলাল মারাফিকি- towards the resting place (18:29, 18:31) স্থিরতার/নিশ্চয়তার দিকে।
এই পর্যন্ত বাক্যটি দাঁড়ায়ঃ
Purify your direction and your preconceptions towards the resting place. (পরিশুদ্ধ করো তোমাদের অভিমুখিতা ও তোমাদের পূর্ববর্তী ধারণা নিশ্চয়তা/স্থিরতার দিকে।
part 2
ওয়া ইমসাহু- And Save/Preserve/Concentrate/Focus বা সংরক্ষণ করা বা মনোনিবেশ করা (ধাতু মিম-সিন-হা, থেকে উৎপন্ন জনপ্রিয় আরেকটি শব্দ হলো মাসিহা বা Saviour বা উদ্ধারকারী)।
বি রুসি কুম – your heads (তোমাদের মাথা), Thinking pattern বা চিন্তাধারা বা চিন্তাশীলতাও বলা যায়।
ওয়া – আরজুলা কুম ( And your feet/foundation, তোমাদের ভিত্তি
ইলা- towards/till পর্যন্ত
আল কা’বাইনি- এটির অর্থ কুরআনে (মজার ব্যাপার হলো এটাই সেই কা’বা যাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি মানুষ চরকির মত ঘুরতেছে, অথচ প্রচলিত অনুবাদে এটিকে অনুবাদ করেছে “গোড়ালি”)। সম্ভবত “সমৃ্দ্ধি অর্জন”।
এই পর্যন্ত বাক্যটি দাঁড়ায়ঃ
And Preserve your thinking pattern and foundation towards the achievement of Prosperity
“এবং তোমাদের চিন্তাশীলতা ও ভিত্তিকে সমৃদ্ধি অর্জনের প্রতি সংরক্ষণ/মনোনিবেশ/প্রয়োগ করো।”
part 3
ওয়া ইন কুনতুম জুনুবাহান- And if you are uncertain (তোমরা যদি অনিশ্চিত থাকো)
ফা- ইত্তাহারু- Then Purify yourselves (তাহলে নিজেদের পরিশুদ্ধ করো)।
ওয়া ইন কুন তুম মারদা- And if you are sick/weak
আও আলা সাফারিন- Or in a journey (transition) (দোদুল্যমান বা ভ্রাম্যমাণ)
আও জা আহাদুন মিনকুম মিনাল ঘাইতি-
Or if any of you has come from Low Lying areas (ঘাইতি- Low Lying area, Lughat Al Quran vol 3 lexicon)
আও লামাসতুমুল নিসা
- Or contacted/accompanied/distracted by women (ভাবার্থে সাংসারিক কাজে ব্যস্ত)
ফালাম তাজিদু মান ফাতায়াম্মামু (aim at, 2:267) সাইয়িদান তাইয়িবান- if you donnot find clarity (পানির মত স্বচ্ছতা) then aim at (তায়াম্মুম) further clarification (সাইয়িদান) to be clear.
Part 3 সামারি করলে দাঁড়ায়।
And if you are uncertain, then purify yourselves and if you are weak or in a journey (transition) or if any of you came from low lying areas/lower state or accompanied/distracted by women, if you dont find clarity, then aim at further clarification to be clear.
part 4:
ফা ইমসাহু বি উজুহিকুম ওয়া আইদাকুম মিনহুঃ
Then focus on your directions and your conceptions within it (clarity).
অতঃপর তোমার অভিমুখিতা এবং ধারণাকে ইহার মধ্যে মনোনিবেশ করো।
পুরো অনুবাদ 5:6 একসাথে।
O you who have believed! When you establish your Salat,
Purify your direction and your preconceptions towards the resting place.
And Preserve your thinking pattern and foundation towards the achievement of Prosperity.
And if you are uncertain, then purify yourselves. And if you are weak or in a journey (transition period) or if any of you came from low lying areas/lower state or accompanied/distracted by women, if you dont find clarity, then aim at further clarification to be clear. Then focus on your directions and your conceptions within it.
God does not intend to make difficulty for you, but He intends to purify you and complete His favor upon you that you may be grateful.
“হে যারা ঈমান এনেছো! যখন তোমরা সম্পর্ক/প্রতিশ্রুতি/অনুসরণ (সালাত) প্রতিষ্ঠিত করো,
পরিশুদ্ধ করো তোমাদের অভিমুখিতা ও তোমাদের পূর্ববর্তী ধারণা নিশ্চয়তা/স্থিরতার দিকে।
এবং তোমাদের চিন্তাশীলতা ও ভিত্তিকে সমৃদ্ধি অর্জনের প্রতি সংরক্ষণ/মনোনিবেশ করো।
এবং তোমরা যদি অনিশ্চিত থাকো, তাহলে নিজেদের চিন্তাকে পরিশুদ্ধ করো, এবং তোমরা যদি দুর্বল হও বা ভ্রাম্যমান/দোদুল্যমাণ থাকো (transition period) বা চিন্তার নিচুস্তর থেকে আসো বা কোনো নারীসঙ্গে থাকো, যদি তোমরা স্বচ্ছতা খুঁজে না পাও, তাহলে স্বচ্ছতা অর্জনের লক্ষ্যে (তায়াম্মুম) কাজ করে যাও যতদিন স্বচ্ছতা না আসে।
অতঃপর তোমার অভিমুখিতা/লক্ষ্য এবং ধারণাকে ইহার (স্বচ্ছতার) মধ্যে সংরক্ষণ/মনোনিবেশ করো।
আল্লাহ তোমাদেরকে বোঝা /কষ্ট দিতে চান না, তবে তিনি তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে চান (তুতাহিরু) এবং তোমাদের উপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো”
অন্য ভাবে বলা যায় আমাদের হাতের শক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শন, মুখের দ্বারা অন্যায় আচরণ /কথা/আদেশ , আল্লাহর আইন বিরোধী সকল চিন্তা-চেতনা মাথা থেকে দূর করা , পা দ্বারা অন্যায় পদচারণ হতে আমাদেরকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ ৫ঃ৬ আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখা হলো আল্লাহর যাবতীয় সালাত প্রতিষ্ঠার পূর্বে মনের ভিতরে সকল সন্দেহ, দ্বিধাদ্বন্দ,হাত মুখ,চিন্তা, পা দ্বারা সংগঠিত সব অন্যায়, পূর্ববর্তী ধারণা/বিশ্বাস ও দূর্বলতাকে ঝেড়ে ফেলে স্থির লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করে,আল্লাহর প্রত্যেকটি সালাত প্রতিষ্ঠার মিশন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
ওজু পর্ব ০২
” ওজু “/গোসল এবং ” তাহির ” /তাহারাত শব্দের মধ্যে পার্থক্য।
ওজু করতে কি পানি লাগে?
অনেকে বলেন, প্রচলিত দ্বীনের বিধান মতে প্রস্রাব পায়খানা করলে ওজু ভঙ্গ হয়, এই কথাটি সুরা বাকারার ২ঃ১৫১ / ইমরানের ৩ঃ১৬৪ নং আয়াতের পরিপন্থী। কারণ এই আয়াতে ওজুর বিষয়টা রসুলের সাথে সম্পর্ক যুক্ত । তাই রসুলের মাধ্যমে কৃত দ্বীনের অঙ্গীকার ভঙ্গ করলেই ওজু ভঙ্গ হয়। তখন সে আর মুমিন থাকে না ৪৮ঃ১০ / ৪৮ঃ১৮। তবে প্রস্রাব পায়খানা করলে তাহির ভঙ্গ হয়। সেক্ষেত্রে সালাত সমূহ প্রতিষ্টার পূর্বে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করণের মাধ্যমে তাহির হতে বলা হয়েছে ৫ঃ৬। “
অনেকে বলেন " ওজু " এবং " তাহির " একই শব্দ, একই উদ্দেশ্য। কিন্তু না, তাদের বুঝ ঠিক নয়। আরবি " ইউজাক্কিকুম " শব্দ হতে ওজু শব্দের উৎপত্তি। ইউজাক্কিকুম শব্দের অর্থ আত্নার পবিত্রতা। পবিত্র কুরআনের ২ঃ১৫১/৩ঃ১৬৪ / ৬২ঃ২ আয়াত তিন টিতে ইউজাক্কিকুম শব্দ আছে। যার অর্থ আত্নার পবিত্র (যাকে আমরা ওজু বলে জানি)। আর এই পবিত্র বা ওজু পানি দ্বারা অংগ প্রত্যংগ ধৌতের ওজু নয়। এই ওজু হল কুরআনের বিধান দিয়ে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহন করে আল্লাহর বিধানের মাধ্যমে অহংকার বর্জিত আত্নিক উন্নতি বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা।এই ওজু বা পবিত্র করতে এক মাত্র কুরআন রাসুলই পারেন, মর্মে কুরআনে নির্দেশ এসেছে ২ঃ১৫১/৩ঃ১৬৪।
ওজু শব্দ দ্বারা দেহের আভ্যন্তরিন বা আত্নিক পরিশুদ্ধতা করা হয়, আত্নিক পবিত্রতা করতে হয়। এখানে পানি দ্বারা কোন কিছু ধৌত করার নির্দেশ, আবশ্যকতা নেই। কুরআন রাসুল মান্য করার মাধ্যমে ওজু করতে হয়। আর কুরআন রাসুল আমাদের ওজু বা আত্নিক ভাবে পবিত্র করেন ২ঃ১৫১/৩ঃ১৬৪।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে ” খান্নাস ” রুপে
১.কাম
২. ক্রোধ
৩. লোভ
৪. মোহ
৫.মদ
৬ মাৎসর্য্য নামক ছয়টি ঋপু বা অসুর বা প্রবৃত্তি আস্টে পিষ্টে আঁকড়ে ধরে আছে। মানুষের সপ্ত ইন্দ্রীয় দ্বার পথে তথা চোখ + কান + মুখ + জিহ্বা + ত্বক + নাক + মন= এই সপ্ত ইন্দ্রীয় দ্বার পথে আগত মোহরাশি বা পাপ রাশি অনবর্ত মস্তিস্ক নামক চ্যাম্বারে প্রবেশ করে এবং কর্মেন্দ্রীয় দ্বারা পাপ কাজ গুলি সংঘটিত করে। রিবা, ঘুষ, জিনা, হিংসা,খুন, লুণ্ঠন, প্রতারনা, ইত্যাদি অসুররীয় কর্ম- স্বভাব গুলি আভ্যন্তরিন বিষয়। মস্তিস্ক এগুলির উৎপত্তিস্থল। বিধায় এই বিষয় রাশি বা মোহরাশি গুলি বাহ্যিক ওজুর দ্বারা দুরিভুত হয়না। আউজু বিল্লাহি মিনাশ শয়তানের রাজিম ” নামক তাআউজু সারা জীবন পাঠ করে মুখে ফেনা তুললেও শয়তান দুরিভুত হয়না। সালাতীরা দৈনিক যতবার এই তাআউজুটি পাঠ করে তাতে শয়তান তাদের মনে অবস্থান করার কথা নয়। কিন্তু না, শয়তান দুরিভুত করার প্রক্রিয়া তাদের জানা নেই বিধায় তারা শয়তানের সংশ্লিষ্ট মুক্ত নয়। যেমনটি দুরিভুত হয়নি অনেক কুরআন বিরোধীতাকারি নামধারী মুসলিমদের, অফিস আদালতে বহু অসৎ কর্মকর্তাদের। এরা যতই পানি দ্বারা অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ ধৌত করুক তাদের ওজু হয়না তথা আত্নিক পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়না। তবে বাহ্যিক ভড়ং ভাড়ং অর্জিত হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ” তোমাদের স্ত্রী – স্বামী, সন্তান – সন্ততি, ধন – সম্পদ সেই দিন কোন কাজে লাগবেনা, পবিত্র কলব বা অন্তর ছাড়া ” ২৬ঃ৮৮-৯১।
” তাহির “
তাহির শব্দটি আরবি ” ফাত্তোয়াহাহারু ৫ঃ৬ ” শব্দ হতে উৎপত্তি। যার অর্থ পরিচ্ছন্নতা , পবিত্র হওয়া, আত্মীক উন্নতি লাভ ইত্যাদি । দেহের বাহিরের ময়লা, আবর্জনা,নোংরা বস্তু পরিস্কার, করার জন্য ধোয়ার জন্য তাহির শব্দটি কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সালাতের পুর্বে তাহির বা নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পানি দ্বারা ধৌত করা আবশ্যক নয়। বরং আত্নীক পরিচ্ছন্নতা অবশ্যক ৫ঃ৬।
আর ওজু বা ইউজাক্কিকুম (২ঃ১৫১/৩ঃ১৬৪/৬২ঃ২) হতে পানি লাগেনা। এই তাহির ও ওজুর আয়াতের উদ্দেশ্য না বুঝে আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করা যাবেনা ২২ঃ৫১।
যারা আয়াত কে অস্বীকার করে , তাদের জন্য শাস্তি আছে ‘৭ঃ৪০/৩ঃ২০-২১।
যারা সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে তাদের কে জাহান্নাম ডাকবে ৭০ঃ১৭।
অনেকে বলেন, বেশির ভাগ মানুষই তো ওজু ও তাহির কে এক বলে জানে। এই অধিকাংশ মানুষের মতে চলা লোক দের উদ্দেশ্যে কুরআন বলছে, ” যারা অধিকাংশ লোকের কথায় চলে তারা আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত হবে ৬ঃ১১৬। কেননা ন্যায় ও সত্যের দিক হতে আল্লাহর কথাই পরিপুর্ন ৬ঃ১১৫।
সুতরাং
বুঝা যাচ্ছে যে আয়াতে উল্লখিত তাহির/তাহারাত হচ্ছে শরীরে কোন ময়লা লাগলে তা পরিস্কার করা
আর
গোসল/ অজু হচ্ছে আত্মার পরিচ্ছন্ন হওয়ার নাম।
ওজু পর্ব ৩
5:6 আয়াত নাকি আনুষ্ঠানিক সালাতের জন্য! কিন্তু সেই আনুষ্ঠানিক সালাত কোরআনের কোন আয়াত অনুসারে বা তার পদ্ধতি কি প্রশ্ন করলে কারও কাছ থেকেই সঠিক জবাব পাওয়া যায় না।!!কুরআন ধারণকারিদের এই ভাবার্থের প্রতি লক্ষ্য করতে অনুরোধ করছি-
মা’ইদাহ: 6
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغْسِلُوا۟ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى ٱلْمَرَافِقِ وَٱمْسَحُوا۟ بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى ٱلْكَعْبَيْنِۚ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَٱطَّهَّرُوا۟ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰٓ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَآءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ ٱلْغَآئِطِ أَوْ لَٰمَسْتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوا۟ مَآءً فَتَيَمَّمُوا۟ صَعِيدًا طَيِّبًا فَٱمْسَحُوا۟ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُۚ مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُۥ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সৎকর্মের জন্যে প্রস্তুত হও, তখন মুখ ও হাত ধৌত কর। অর্থাৎ মুখ দিয়ে আল্লাহর নির্দেশের বাইরে কিছু করবে না- যেমন হারাম খাবে না মিথ্যা বলবে না মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না গীবত করবেনা পরচর্চা করবে না। হাতের ক্ষেত্রেও তাই। মাথা হতে খারাপ মুছে ফেল এবং পদযুগল যতদূর যায় তাও। যদি এর পরেও খারাপ থেকে থাকে তবে পবিত্র হও এবং যদিও তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ নোংরা কর্মের চেতনা আসে নারীদের সাথে, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা সংখিপ্ত পবিত্র হওয়ায় সংকল্প কর অর্থাৎ, স্বীয় লক্ষ্য গুলো ও হস্তদ্বয় দ্বারা মন্দ মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ থাকতে পার ।
(১নং পর্বে এই আয়াতটির আরো একটা মর্মার্থ দেয়া আছে দেখে নিতে পারেন)
নিজেকে আত্নীক অপবিত্র রেখে কুরআন বুঝা সম্ভব না।
নিজেকে পবিত্র করতে হবে সকল প্রকার শয়তানী কর্মকাণ্ড থেকে।
আল্লাহ্ বলেই দিয়েছেন, আত্নীক পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নাজিলকৃত (কিতাব আল-কুরআন)-কেউ স্পর্শ করো না।
(৫৬:৭৯-৮০)
আত্মার পরিশুদ্ধি ছাড়া আল্লাহর কিতাব বুঝা যায় না। যেমন অহংকার, অন্ধত্ব, পৌত্যলিক মনোভাব ইত্যাদি। এগুলো থেকে নিজেকে পবিত্র করলেই কেবল আল্লাহর কিতাব বুঝা সম্ভব। আল্লাহ এখানে কাউকে বলেননি যে, কেহ এটা স্পর্শ করবে না। বরং তিনি বলেছেন আত্নীক পবিত্র হতে। কারণ আত্নীক অপবিত্রতা প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে। শয়তানী নোংড়ামি গুলো পরিহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকাই আল্লাহর নির্দেশ।
অথচ ৫৬:৭৯ কে একদমই ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সমাজের প্রচলিত আলেমদের দ্বারা।
উল্লেখ্য মুমিন কখনো শারীরিক অপবিত্র হয়না। তবে আত্নীক অপবিত্র হয়।
ওজু পর্ব ৪
কুরআন ওযূ ছাড়া ধরা না ধরা নিয়ে নানা তর্ক বিতর্ক!!
প্রচলিত ওযু কি??
প্রথমত ওযু কুরআন অনুসারে আল্লাহ শুধু সালাতের আগে আত্নীক পবিত্রতা অর্জন করতে বলেছেন।পরিষ্কারে উদ্দেশ্যে,এটা কোন পবিত্র বা অপবিত্র ব্যাপার নয়।আয়াতটি।
আল-মা’ইদাহ ৫:৬
this a common sence আপনি কোন অপরিষ্কার কাজ করে আসলে সেই হাত দিয়ে নিশ্চয় ভাত খাবেন না?কুরআন তা বলে নি but আপনার জন্য যা ক্ষতি তা কুরআনে তা নিষেধ করেছেন ও পরিষ্কার থাকতে বলেছেন এখন একজন বিবেকবান হয়েও নিশ্চয় আপনি তা করবেন না। ঠিক তেমনি আপনি যদি কোন অপরিষ্কার কাজ করে আসেন কুরআন ধরার আগে অবশ্যই পরিষ্কার করে নেবেন সেই জায়গা।
কিন্তু ওযুই করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা আল্লাহ কুরআনে কোথাও করে নাই।
বরং আল্লাহ বলেছেন
ইউনুস ১০:৬১
আর তুমি যে অবস্থায়ই থাক না কেন, আর যে কোন অংশ হতে কুরআন পাঠ কর এবং তোমরা (অন্যান্য লোক) যে কাজই কর, আমার কাছে সব কিছুরই খবর থাকে, যখন তোমরা সেই কাজ করতে শুরু কর। কণা পরিমাণও কোন বস্তু তোমার রবের (জ্ঞানের) অগোচর নয় – না যমীনে, না আসমানে। আর তা হতে ক্ষুদ্রতর, কিংবা বৃহত্তর, সমস্তই সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে) লিপিবদ্ধ রয়েছে।
“মুসলিমরা কখনও অপবিত্র নয় অপবিত্র মুশরিকরা”
আত-তাওবাহ ৯:২৮
হে মু’মিনগণ! মুশরিকরা হচ্ছে অপবিত্র(খাবিস) অতএব তারা যেন এ বছরের পর মাসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে, আর যদি তোমরা দারিদ্রতার ভয় কর তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন, যদি তিনি চান। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় জ্ঞানী, বড়ই হিকমাতওয়ালা।
“আপনি যদি অপবিত্র ভেবে কুরআন না ধরেন তাহলে মুখ দিয়ে কেন আয়াত বলেন ওযু ব্যতিত?”
এখন যে কিতাব আমরা স্পর্শ করতে পারি না কারন তা লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। সে কিতাবের কথা আল্লাহ বলেছেন।
আল-ওয়াকিয়া ৫৬:৭৭
নিশ্চয়ই ঐটি সম্মানিত কুরআন –
আল-ওয়াকিয়া ৫৬:৭৮
যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে
“এখানে লক্ষ করুন৷ ‘ইন্নাহু আল কুরআন ‘হু’ হলো আরবী তে গায়েব বলে। যা সামনে উপস্থিত থাকে না যা ইংরেজিতে Third person বলে। আর সামনাসামনি কোন কিছুকে ইঙ্গিত করলে হতো, “হাযা আল কুরআন অর্থ-এই কুরআন(৬ঃ১৯)”সুতরাং “হু” সর্বনাম দিয়ে আল্লাহ সেই মূল Texts লাওহে মাহফুজের সুরক্ষিত কিতাবকে ইংগিত করলেন। এই কিতাব এখন শুধু আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকা অনুগত বা পবিত্ররাই স্পর্শ করতে পারে।
কারন এ দুনিয়াবি কিতাব সুরক্ষিত নয় যে কেউ নষ্ট করতে,ছিড়তে,বা পোড়াতে পারে। সুতরাং এটি দুনিয়াবি কিতাব নয়।শয়তানের কুরআন থেকে দূরে রাখতে এটি একটি বড় চক্রান্ত।
ওজু পর্ব-০৫
আল কোরআনে বর্ণিত সালাত প্রতিষ্ঠার সাথে অজু বা গোসলের কোন সম্পর্ক নাই, আসুন তা আল কুরআন থেকে জেনে নেই।
প্রচলিত ধারণা হলো- ‘অজু ছাড়া কুরআনে বর্ণিত সালাত প্রতিষ্ঠা করা, কুরআন স্পর্শ করা/ধরা যাবেনা, গুনাহ হবে। কথাটি মুসলিম সমাজে ব্যাপক ভাবে চালু আছে।
প্রচলিত মতানুসারে মানুষের জাগ্রত জীবনের অধিকাংশ সময় ওযু থাকে না। তাই অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না কথাটি অধিকাংশ মুসলিমের জাগ্রত জীবনের অধিকাংশ সময় কুরআন ধরে পড়া তথা কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে এক বিরাট বাধা। কথাটি চালু না থাকলে সকল মুসলিমের পকেটে বা ব্যাগে কুরআন থাকতো এবং বাসায় অফিসে বা পথে-ঘাটের যেকোনো অবসর সময়ে তা পড়তে কোন অসুবিধা হতো না। ফলে মানুষের কুরআন পড়ার সময় অনেক বেড়ে যেত। একটি বিশেষ স্বার্থন্বেষী মহল শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে মুসলীমদের বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। এই কাজটি তারা সার্থকভাবে করতে পেরেছে। এমনিতেই সাধারণ মানুষ অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ধর্মের উপর জ্ঞান চর্চা খুব কমই করে থাকে। তার উপর অজু ছাড়া কুরআনের বর্ণিত সালাত প্রতিষ্ঠা করা যাবে না,কুরআন স্পর্শ করে/ধরে পড়া যাবে না এই ধারণার কারণে মুসলিমদের মধ্যে কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী লোক একেবারেই কম। অথচ একজন মুসলিম দাবিদার ব্যাক্তির পার্থিব চলমান জীবনের যে কোন ধরনের সমস্যা নিরসনের জন্য কুরআনে দেওয়া ব্যাখ্যাই নিতে হবে। আর কুরআনের বাণীগুলি যে Theory of Relativity বা Quantum Mechanics বুঝার মতো কঠিন কোনো বিষয় নয়; তা স্বয়ং আল্লাহই বলেছেন। কুরআন কে সাধারণ মানুষের কাছে Melodramatic-ভীতি প্রদর্শন করে কুরআনকে Untouchable করে রেখে কুরআনের উপদেশ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত রাখা শয়তানের কাজ। ২০/৩০বছর আগে প্রায় মুসলিম বাড়িগুলিতে কুরআনকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে আলমারির মাথার উপরে কাঠের রেহেলের উপর সযত্নে রক্ষিত থাকতো। বাড়ির বয়স্ক মানুষদের কেউ প্রচলিত অজু করে অত্যন্ত যত্নের সাথে কিতাব টা নামিয়ে চুমু খেতে খেতে বুকে ধরে মধুর সুরে তেলাওয়াত করতেন। এতে না তিনি কিছু বুঝতেন না শ্রোতারা কিছু বুঝতেন!! এখন সময় বদলেছে। কাঠের আলমারির জায়গায়, উন্নত বুকসেলফ, ওয়্যারড্রোব এসবের উপরে কোনো বাসাবাড়িতে কুরআন থাকতে দেখা যায়, যদিও উন্নত বাইন্ডিং এর কারনে আর লাল কাপড়ে মুড়িয়ে রাখতে হয় না কিন্তু পড়ার বিষয়ে এখনো সেই ধারনাই আছে। সওয়াব কামাইয়ের জন্য প্রচলিত অজু করে, না বুঝে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কেউ একটু পড়লো অতটুকুই।
∆কুরআন তেলাওয়াত শুরু করতে হবে (বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই) এবং (পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে) পড়ার মাধ্যমে একথা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন এভাবে-
অর্থ: যখন তোমরা কুরআন পড়বে তখন (অবশ্যই) অভিশপ্ত শয়তানের (ধোঁকাবাজি) থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে। (নাহল/১৬:৯৮)
অর্থ: পড়ো (অধ্যায়ন করো) তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। (আলাক/৯৬:১)
কিন্তু কুরআনের কোথাও আল্লাহ কুরআন স্পর্শ/ধরা বা পড়ার আগে বা কুরআনের বর্ণিত সালাত প্রতিষ্ঠার আগে প্রচলিত ওযু, গোসল বা তায়াম্মুম করার আদেশ, উপদেশ দেন নাই।আসুন সঠিক জানি, সঠিক মানি, কুরআনকে রাখি সাথে। যখন, তখন হলে প্রয়োজন, সিদ্ধান্ত নেই, কুরআন দেখে।
হাশরের মাঠে রাসূল আমাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বলবে……. হে আমার রব! আমার জাতি এ কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে’ (25:30)।
কুরআন পরিত্যাগ হলো-
১.কুরআনের প্রতি ইমান না আনা।
২.কুরআন অনুশীলন পরিত্যাগ করা।
৩.কুরআন শ্রবণ না করা।
৪.কুরআনের আয়াতের প্রতি মনোযোগ না দেয়া।
৫.কুরআনের আমল পরিত্যাগ করা।
৬.কুরআন অনুযায়ী ফয়সালা না করা।
৭.কুরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা ছেড়ে দেয়া এবং এর মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা না করা।
৮.কুরআনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ত্রুটির চিকিৎসা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
আসুন! কুরআন পড়ি, কুরআন বুঝি। কুরআনের আলোয় আলোকিত করি আত্মা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে। আমাদের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠুক আল্লাহর বাণীতে।
আল্লাহ বলেন,নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।(43:43,44
১.পরম করুণাময়, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।(55:1-4)
২.পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে। পড়, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।(96:1-5)
৩.তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন, যে অবস্থাতেই তুমি কুরআন হতে যা কিছু পাঠ কর না কেন এবং তোমরা যে কাজই কর না কেন, আমি তোমাদের উপর রয়েছি প্রত্যক্ষদর্শী, যখন তোমরা তাতে পূর্ণরূপে মনোনিবেশ কর। (10:61)
৪.আর তোমার কাছে ওয়াহীকৃত তোমার রবের কিতাব থেকে তুমি পাঠ করে শুনাও । (18:27)
৫.তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে পাঠ করে শুনাও ।(29:45)
৬.আর যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে।(16:98)
৭.আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা কখনো তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।(41:36)
৮.আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর,নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করছে, তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রনা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সাথে সাথেই তাদের চোখ খুলে যায়।(7:201,202)
৯.আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ হয়ে থাক; যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।(7:204)
আল কোরআন পড়ার সাথে অজু বা গোসলের কোন সম্পর্ক নাই, তবে যে সব কাজ করতে হবে তা হলো….
১. “আর যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে।(16:98)
আল কুরআন পড়ার আগে নিম্নে উল্লেখিত আরো কিছু দোয়া আমারা পড়তে পারি –
১.পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে’।(27:30)
২.‘হে আমার রব! আমি শয়ত্বানের কুমন্ত্রণা হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, হে আমার রব! যাতে তারা আমার কাছে আসতে না পারে।’ (23:97,98)
৩. ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ হে আমার রব,আমার জন্য আমার বক্ষ/বুদ্ধিমত্তাকে প্রশস্ত করে দিন, আর আমার জন্য আমার কাজকে সহজ করে দিন, আর আমার জিহ্বার জড়তা/কুরআন বুঝতে অক্ষমতা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।(20:114,25-28)
৪.‘হে আমার রব, আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন (26:83)
কুরআন বুঝতে পারলে কি লাভ?
১.হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,তাহলে তিনি তোমাদেরকে (ফুরকান) ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল।(8:29)
২..আর যারা সৎ পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে মুত্তাকী হবার শক্তি দান করেন।(47:17)
৩.তারা বলবে, ‘অবশ্যই আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, কিন্তু আমরা তাদেরকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি, তোমরা তো মহা বিভ্রান্তিতে রয়েছ।’ রোষে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে, যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখনই তাদেরকে তার রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি?’ আর তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না।(67:9,10)
৪.নিশ্চয় তুমি মৃতকে তোমার কথা শোনাতে পারবে না এবং বধিরকেও তোমার আহবান শোনাতে পারবে না; যখন তারা মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। আর তুমি অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে পথে আনতে পারবে না। তুমি শুধু তাদেরই শুনাতে পারবে, যারা আমার আয়াত সমূহ বিশ্বাস করে,কারণ তারা আত্মসমর্পনকারী। (30:52,53)(27:80,81)
ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করার বিপক্ষে যাদের অবস্থান, তাদের যুক্তি হলো-ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ না করা বিষয়টি হলো কুরআন কে সন্মান দেখানো। আসলে কি তাই? কোনো গ্রন্থ, বিশেষ করে ব্যবহারিক (Applied) গ্রন্থের সবচেয়ে বড় সন্মান হলো, তার জ্ঞান অর্জন করা এবং সে জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা। যে কোন জিনিসের সবচেয়ে বড় সম্মানের ব্যাপারে ব্যাপক বাধা সৃষ্টিকারী বিষয় ওই জিনিসের সম্মানের বিষয় হতে পারে না। তা হবে ওই জিনিসটিকে অসম্মান করামূলক বিষয়। অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না কথাটি কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে এক বিরাট বাধা। তাই Common sense এর সর্বসম্মত রায় হলো- অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ কথাটা কুরআন নামক ব্যবহারিক গ্রন্থের সম্মানসূচক কথা অবশ্যই নয়। এটি কুরআনকে চরম অসম্মান মূলক একটি কথা। এটি ইসলাম সিদ্ধ কোন কথা হতে পারে না।
আমাদের সামনে কুরআন থাকুক সদা-সর্বদা উন্মুক্ত !!!
কুরআনুল কারীম পুরো মানবজাতির জন্য তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের মুক্তি ও কল্যাণের বার্তাবাহক, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। কোন প্রয়োজনীয় কথা বলতেই আল্লাহ তা’য়ালা এখানে কোন রাখঢাক করেন নাই; কোন ক্ষুদ্র তুলনা দিতেও লজ্জাবোধ করেন নাই।
শুধু তাই নয়, যেসব মহান নবী-রাসূলগণকে তিনি মনোনিত করেছিলেন, তাঁদের আচরণের কোন ভুল-ত্রুটিকে প্রকাশ্য কুরআনের আয়াত হিসেবে নাযিল করেই তা ধরিয়ে দিয়েছেন। এমন নয় যে, আমজনতা বা বিশ্ববাসীর কাছে সংশ্লিষ্ট নবী-রাসূলগণের কোন ইজ্জত হানি হতে পারে চিন্তা করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে তা সংশোধন করে মানবজাতি থেকে লুকিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, সেইসব নির্বাচিত মহামানবগণ শিরকের মতো কোন অপরাধ করেন নাই, কিন্তু করলে আল্লাহ তাঁদেরকে মোটেই ছেড়ে দিতেন না; বরং তাঁদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যেত বলে স্পষ্ট হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শেষ নবীর প্রতি নাযিলকৃত বিষয়কে তিনি যদি কারও প্ররোচনায় পড়ে জাল বা বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করতেন, তবে আল্লাহ তাঁকে ইহজীবনে এবং মৃত্যুকালে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতেন (১৭:৭৩-৭৫) বলে দ্ব্যর্থহীন সতর্কবানী ঘোষিত হয়েছে।
যে কুরআন এত অকপট, সরাসরি, বলিষ্ঠ সেই কুরআনকে আমরা ঘরে ঘরে শেলফে সাজিয়ে রেখে দিতে পারি না। কুরআনের জন্য কখনই কোন গিলাফের প্রয়োজনীয়তা নেই; কুরআন আবৃত, আচ্ছাদিত হয়ে থাকবার গ্রন্থ নয়; সকলের কাছে সর্বদা প্রকাশিত, উন্মুক্ত ও বিকশিত হবার স্মারক ও উপদেশ গ্রন্থ।
কুরআন পড়বার, ধরবার জন্য ‘অযু’ নামক শারীরিক ও অন্যান্য মানসিক বাধা দূর করতে হবে সর্বাগ্রে। কুরআন এবং মানুষের মাঝে শয়তানী শক্তিসমূহের তৈরিকৃত সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা থেকে কুরআনকে আমাদের মুক্তি দিতে হবে।
সেই কুরআন থাকবে আমাদের বাসস্থল, কর্মস্থল, ধর্মস্থলে সদা-সর্বদা উন্মুক্ত যেন চলতে ফিরতে আমরা চাইলেই কোন সময় ক্ষেপন ব্যতিরেকে এর চিরন্তন, শাশ্বত আয়াত সমূহে চোখ বুলাতে পারি, কুরআনের প্রতি অভিনিবেশ করতে পারি; উঠতে বসতে এর বাণী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করতে পারি।
কুরআনের বিষয়ে আমাদের অস্থি-মজ্জার মধ্যে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয়া জড়তা, কুণ্ঠা, ভীতি, দ্বিধা ইত্যাদি যাবতীয় শয়তানী প্রতিবন্ধকতা ও অন্তরায় দূর হোক চিরতরে! আমাদের টেবিলে কুরআন থাকুক সদা-সর্বদা উন্মুক্ত !!!
আল কুরআন : শয়তানের সবচেয়ে বড় জ্বালার কারণ
আল কুরআন নাযিল হবার পর কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র কুরআন মজিদই মানবজাতির হিদায়াত ও মুক্তির সন্ধান লাভের মূল উৎস। তাই আল কুরআন থেকে এবং কুরআন অনুধাবন, অনুসরণ ও বাস্তবায়ন থেকে মানব সমাজকে দূরে রাখার জন্যেই নিয়োজিত থাকে শয়তান, তার দলবল ও চেলা চামুন্ডাদের সর্বাধিক চেষ্টা। তাদের ধোকা, প্ররোচনা, প্রলোভন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও প্রতারণার জাল বিস্তার প্রধানত মানুষকে কুরআন থেকে দূরে রাখার জন্যেই নিয়োজিত থাকে। সে জন্যেই মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন :
অর্থ: যখনই তুমি আল কুরআন অধ্যয়নের সংকল্প করবে, তখন ধিকৃত অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে নিও। (সূরা ১৬ আন নহল : আয়াত ৯৮)
অর্থ : যদি কোনো সময় শয়তান তোমাকে উস্কানি দেয় তাহলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ২০০)
অর্থ : যারা সতর্ক-মুত্তাকি, শয়তানের কারণে কোনো মন্দ ভাব তাদের মনে জাগার সাথে সাথেই তারা সাবধান সতর্ক হয়ে যায়। তখন তারা স্পষ্ট দেখতে পায় (তাদের জন্যে সঠিক পথ কোনটি)। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ২০১)
শয়তানের প্ররোচনা থেকে সবসময় এভাবে দোয়া করতে থাকুন
অর্থ : প্রভু! শয়তানের প্ররোচনা থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। প্রভু! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার নিকট তাদের (শয়তানদের) উপস্থিতি থেকে। (সূরা ২৩ আল মুমিনূন : আয়াত ৯৭-৯৮)
অর্থ :আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। (১১৩,সূরা ফালাক্ব:১-৫)
অর্থ :আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,মানুষের অধিপতির,মানুষের মা’বুদেরতার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরেজ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।(১১৪,সূরা নাস:১-৬)
দ্বীন নিয়ে যারই ইচ্ছা বা আগ্রহ আছে সেই কথা বলবে, প্রশ্ন করবে| কারো ভিন্নমত থাকলে বা উত্তর জানা থাকলে সুনিদ্দিষ্ট রেফারেন্সসহ মন্তব্য করতে পারেন। মানুষ তার বুদ্ধি বিবেক অনুযায়ী যাচাই করবে| কিন্তু অমুকের আলোচনা শোনা যাবে না, তমুকের আলোচনা শুনলে গোমরাহ হবেন এসব গোঁজামিল দিয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ভেড়ার পাল বানানো যায়; ধার্মিক বানানো যায় না|….
কোরআনে যা নেই তা আল্লাহর বিধান নয়! কোরআনে যা আছে তা-ই সিলেবাস, সেটুকু পালন করলেই পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর নিয়ে পাশ!! আমি কোন ব্যক্তি পূজারী বা কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুসারী নই, কারো কোন কথা যদি কুরআনের সাথে মিলে যায় তবে সেটা গ্রহণ করবো, আর তা কুরআনের বিরুদ্ধে গেলে প্রত্যাখ্যান করবো ইনশাআল্লাহ। আমি, আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাসী একজন মুসলিম(আত্মসমর্পণকারী) (43:69)(27:81)(30:53)। আমি একজন মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) একমাত্র আল্লাহর কিতাব আল কোরআন মেনে চলি, কারণ আল্লাহ কুরআনে বলেছেন
১.”যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে আর এর উত্তমগুলো মেনে চলে। ওরাই হল তারা আল্লাহ যাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন আর ওরাই হল জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন।” (39:18)
যে কোন বিধান সম্পর্কে শুনলে তা কোরআনে করতে বলেছে কিনা — তা’ নিজের চোখে কোরআন থেকে পড়ে নিয়ে পালন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এক্ষেত্রে কারো কথা শুনে পালন করার কোনও দরকার নেই।
কারণ – আল্লাহ্র বিষয়ে কোনও উপদেশ দেয়ার ‘ সোল এজেন্সি আল্লাহ্ কাউকে দেননি, একমাত্র কোরআন ব্যতীত।
ওজু
5:6 (শব্দে শব্দে সঠিক অনুবাদ)
হে বিশ্বস্ত অনুসারীগণ/ ওহে যারা আনুগত্যের শপথ নিয়েছ, যখন তোমরা সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হও, কার্যতঃ সাহচর্যে /সহযোগীতায় তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের সহযোগীদেরকে সঠিক/সংশোধন কর, এবং তোমাদের মাথা খাটিয়ে ( বুদ্ধিমত্তার সাথে) সিদ্ধান্ত নাও/পর্যবেক্ষন কর/ সম্মত হও, এবং তোমরা নিজেরা সমস্যার মূলের দিকে প্রাণপণে হাঁট /দৌড়াও, এবং যদি একটি পক্ষপাতমূলক পরিস্থিতি/প্রতারণা/প্রতিরোধ/দ্বন্দ্ব/বিবাদ হয়ে থাকে তাহলে এটাকে অবশ্যই দূর করে/সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তা হবে স্বেচ্ছায় বা মীমাংসার ভিত্তিতে অথবা তোমাদের মধ্যে কেউ যদি শান্ত অবস্থায় উপনীত হয় কিংবা মহিলারা উপলব্ধি/অনুভব/লক্ষ্য করেছে, অতঃপর তারা কোন উপায় খুঁজে পায়নি/তারা বিষয়গুলোর সমাধান করতে পারেনি, তাহলে প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে ভালো হওয়ার (সমাধানের) পরামর্শ দাও। তোমাদের উপর কঠোর সরল পথ নির্ধারণ করতে অবশ্যই তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের সহযোগীরা ইহা (উপরোক্ত নির্দেশনা) মেনে চল, যা আল্লাহর চাওয়া এবং তোমাদের কৃতজ্ঞতার ন্যায্যতা প্রমাণে/প্রতিপাদনে তোমাদের উপর তাঁর আশীর্বাদ পরিপূর্ণ করার জন্য এখনও তিনি তোমাদের পরিশুদ্ধ করতে চান। ৫:৬
: 5:6 (সরল অনুবাদ)
হে বিশ্বস্ত অনুসারীগণ, যখন তোমরা পারস্পরিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হও, সাহচর্যের ক্ষেত্রে তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের সহযোগীদেরকে সংশোধন কর এবং তোমাদের বুদ্ধিমত্তার সাথে সিদ্ধান্ত নাও, এবং তোমরা নিজেরা (সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে) সমস্যার মূলে যাও, যদি একটি পক্ষপাতমূলক পরিস্থিতি থাকে তাহলে এটাকে অবশ্যই দূর করে ফেল এবং তা হবে স্বেচ্ছায় বা মীমাংসার ভিত্তিতে অথবা তোমাদের মধ্যে কেউ যদি শান্ত অবস্থায় উপনীত হয় কিংবা যদি মহিলারা উপলব্ধি করে অতঃপর তারা কোন উপায় খুঁজে না পায়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে সমাধানের পথ দেখাও। আল্লার চান যে, কঠোরভাবে সরল পথের উপর থাকতে অবশ্যই তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের সহযোগীরা ইহা (উপরোক্ত নির্দেশনা) মেনে চল এবং এখনও তিনি তোমাদের কৃতজ্ঞতার প্রতিদানে তোমাদের উপর তাঁর আশীর্বাদ পরিপূর্ণ করার জন্য তোমাদের পরিশুদ্ধ করতে চান।