কুরবানি-পর্ব ৭

কুরবানী ৬ষ্ঠ পর্বে ২২ঃ৩৪ নিয়ে আলোচনা করেছি।

এই পর্বে দেখবো ২২ঃ৩৬ নিয়ে পার্সিয়ান অনুবাদের খেল তামাশা।

প্রচলিত অনুবাদঃ

১ম অংশঃ

  • এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে (ওয়াল বুদনা)
  • আমি নিদর্শন করেছি (জা’আলনাহা)
  • তোমাদের জন্যে (লাকুম)
  • আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন (মিন শাইরি আল্লাহি)
  • এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে (লাকুম ফিহা খায়রুন)
  • সুতরাং তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর (ফা উজকুরু ইসমা আল্লাহি)
  • সারিবদ্ধ ভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় ( আলাইহা সাওয়াফা)

২য় অংশঃ

  • অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় (ফা ইযা ওয়াযাবাত জুনুবুহা)
  • তখন তা থেকে তোমরা আহার কর (ফা কুলু মিনহা)
  • এবং আহার করাও যে কিছু চায় না তাকে (ওয়া আতিমুল ক্বানি’আ)
  • এবং যে চায় তাকে (ওয়াল মু’তারা)
  • এমনি ভাবে আমি এগুলোকে বশীভূত করে দিয়েছি (কাযালিকা সাখারনাহা)
    -তোমাদের (লাকুম)
    -যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (লা আললাকুম তাশকুরুনা)

আসেন এবার ব্র্যাকেটে দেয়া আরবি শব্দগুলো সিরিয়ালি বিশ্লেষণ করি।

  • বুদনা (prural) এ শব্দটি এসেছে বদন বা শরীর থেকে। ধাতু বা-দা-না। ১০ঃ৯২ তে “বিবাদানিকা” শব্দকে অনুবাদ করছে “তোমার শরীর”। এখানে অনুবাদ করছে “ক্বাবার জন্য উৎসর্গীকৃত উটকে”।
    কেন এই অনুবাদ??
    এই অংশের সঠিক অনুবাদ হবে “এবং তাদের শরীর গুলোতে”

এখানে তাদের বলতে আগের পোস্টে ২২ঃ৩৪ এ বর্ণিত “বোবা প্রাণীদের শরীরের” কথা বলা হচ্ছে।

-জা’আলনাহা লাকুমঃ

শব্দটি ২২ঃ৩৪ এও আছে। সেখানে অনুবাদ আছে “তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছি”।

-মিন শাইরি আল্লাহি: শাইরি (ধাতু শিন-আইন রা) শব্দটাকে অনুবাদ করছে “নিদর্শন/symbol”। অথচ নিদর্শনের আরবি আল্লাহ দিয়েছেন কুরআনে, আর তা হলো আয়াত। শাইরি মানে কবিতা। একই শাইরি থেকে উৎপন্ন আরেক শব্দ ইয়াশুরনা,তাশুরনার অর্থ করেছে perceive/realize/অনুধাবন করা (২ঃ৯, ২ঃ১২, ২ঃ১৫৪, ৩ঃ৬৯, ৬ঃ২৬, ৬ঃ১২৩)। আরবে কবিদের শাইর বলা হতো (সেখান থেকে এসেছে উর্দুতে শায়ের/কবি) যে তার কল্পনাশক্তি/সৃষ্টিশীলতা দিয়ে কবিতা (শাইরি) সৃষ্টি করতো। এই অংশের সঠিক অনুবাদ হবে “আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা থেকে”

  • লাকুম ফিহা খায়রুনঃ

তোমাদের জন্য মঙ্গল।

  • ফা উজকুরু ইসমা আল্লাহিঃ

এর অর্থ আগের পোস্টে করেছি। অতএব “তোমরা আল্লাহর গুণাবলি স্মরণ করো”

  • আলাইহা সাওয়াফাঃ

এই প্রচলিত অনুবাদটা ইন্টারেস্টিং। দেখতেই পাচ্ছেন যে নিজেদের মনগড়া শব্দ ঢুকাইছে পার্সিয়ানরা।

একই ধাতু থেকে উৎপন্ন “সাফফাতিন” শব্দটা আছে ২৪ঃ৪১ আয়াতে যেখানে পাখি তার ডানা “বিস্তৃত করে” আল্লাহকে তাসবিহ করে। ৬৭ঃ১৯ এও আছে এর অর্থ বিস্তৃত করা।

কাজেই “আলাইহা (by his) সাওয়াফা” সঠিক অনুবাদ হবে “তা বিস্তৃত করার মাধ্যমে/বিস্তারিত ভাবে”

তাহলে ১ম অংশের অনুবাদ দাঁড়াচ্ছেঃ

-এবং তাদের শরীরগুলোতে নির্ধারণ করা হয়েছে (ওয়াল বুদনা জা’আলনাহা) তোমাদের জন্যে (লাকুম) আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা থেকে (মিন শাইরি আল্লাহি) তোমাদের জন্যে মঙ্গল (লাকুম ফিহা খায়রুন)
সুতরাং
তোমরা আল্লাহর গুণাবলি স্মরণ করো (ফা উজকুরু ইসমা আল্লাহি) বিস্তারিতভাবে/তা বিস্তৃত করার মাধ্যমে (আলাইহা সাওয়াফা)

তাহলে বোঝা যাচ্ছে এখানে সারিবদ্ধ ভাবে ক্বাবাঘরে পশু/উট কুরবানির কথা কোনোভাবেই বলা হচ্ছে না।

বরং ২২ঃ৩৪ এ বোবা প্রাণীদের নিয়ামত ঘোষণা করে তাদের শরীরে আল্লাহ তার সৃষ্টিশীলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যে নিয়ামত/provisions রেখেছেন মানুষদের মঙ্গলের জন্য সেকথা বলা হচ্ছে। এবং আমরা যেন আল্লাহর গুণাবলি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি বিস্তারিত ভাবে।

২য় অংশের অনুবাদ পরের পর্বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *