হজ্ব কি?
সাফা মারওয়া কি?
পর্ব ২

Al-Baqarah ২:১৫৮

اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللّٰهِ ۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا ؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاكِرٌ عَلِيْم

প্রচলিত অনুবাদ

নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা’আলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।

হজ্ব শব্দকে বিকৃত অনুবাদ করা প্রতিটি আয়াতের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে পরের সকল পর্বে।

আজকে দেখবো ২ঃ১৫৮।

প্রথমেই বলে নিই যে এই আয়াতের কনটেক্সট হলো ২ঃ১৫৩ যেখানে আল্লাহ মুমিনদের সম্বোধন করে তাদের ধৈর্যশীল হবার উপদেশ দিচ্ছেন। এই কনটেক্সটটা মাথায় রাখেন।

প্রচলিত অনুবাদ ২ঃ১৫৮

-নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া (ইন্না আল-সাফা ওয়া আল-মারওয়া)
-আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম (মিন শাইরি আল্লাহি)
-সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে (ফামান হাজ্জাল বাইতা আওয়ি উ’তামারা)
-তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। (ফালা জুনাহা আলাইহি আন ইয়াততাওয়াফা বিহিমা)
বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে (ওয়ামান তাতাওয়ান খাইরান)
তবে আল্লাহ তা’আলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন (ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলিমুন)

প্রশ্নঃ
১) আয়াতে ক্বাবা ঘর শব্দটা নেই।
২) সাফা মারওয়া পাহাড় হলে সেখানে তাওয়াফ করা কেন? তাওয়াফ আর ওঠানামা করা তো এক কথা নয়। তাওয়াফ মানে come and go around something। প্রচলিত তাওয়াফ অনুসারে কেউ পাহাড়ের চারপাশে প্রদক্ষিণ করেনা/চক্কর কাটেনা।
৩) পাহাড়ে ওঠানামা করলে সেটা “খায়রুন” বা কি হিসাবে ভালো? এতে শরীরের মেদ কমে তাই?
৪) শেষ ৪ শব্দের অনুবাদ এত বড় কেন? অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে মনগড়া বাক্য বসাইছে।

এবার শব্দগুলো বিশ্লেষণ করি।

-সাফাঃ

সাফা শব্দের bilateral রুট সোয়াদ-ফা। প্রচলিত রুট সোয়াদ-ফা-ওয়া যার মানে chosen/clean/pure

আমরা যেমন সব ধুয়েমুছে সাফ করি।

২ঃ১৩০ “ আমরা তাকে দুনিয়ার আকর্ষণ থেকে পরিশুদ্ধ (আছতাফুনাহু) করেছিলাম”

৪৭ঃ১৫ “পরিশুদ্ধ (মুসাফা) মধু”

৩৮ঃ৪৭ “অবশ্যই তারা হলো আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত/বিশুদ্ধ (মুছতাফিনা)

আর সাফা শব্দের trilateral রুট হলো সোয়াদ-ফা-ফা যার অর্থ

বিস্তৃত করা/বিস্তারিত।

২৪ঃ৪১ পাখি তার ডানা বিস্তৃত করার (সাফফাতিন) মাধ্যমে তাসবিহ করে।

একই শব্দ আমরা পাই ২২ঃ৩৬ এ “আলাইকা সাওয়াফা” যার অর্থ বিস্তারিত/বিস্তৃতভাবে

-মারওয়াতাঃ

মারওয়াতা শব্দটার পার্সিয়ান রুট করে মিম-রা-ওয়াও। যদিও bilateral রুট হবার কথা মিম-রা। শেষে কোনো vowel যুক্ত হবার কথা না। মিম-রা রুটকে trilateral করলে সেটা দাঁড়ায় মিম-রা-রা।

মিম-রা-রা রুট শব্দের অর্থ হলো চিরস্থায়ী/forever/intense

৫৩ঃ৬ এ আল্লাহকে “জুমিররাহ” বা চিরস্থায়ী বলা হয়েছে।

কারণ আল্লাহ ও আল্লাহর বিধান চিরস্থায়ী।

-মিন শাইরি আল্লাহি: শাইরি (ধাতু শিন-আইন রা) শব্দটাকে অনুবাদ করছে “নিদর্শন/symbol”। অথচ নিদর্শনের আরবি আল্লাহ দিয়েছেন কুরআনে, আর তা হলো আয়াত। শাইরি মানে কবিতা। একই শাইরি থেকে উৎপন্ন আরেক শব্দ ইয়াশুরনা,তাশুরনার অর্থ করেছে perceive/realize/অনুধাবন করা (২ঃ৯, ২ঃ১২, ২ঃ১৫৪, ৩ঃ৬৯, ৬ঃ২৬, ৬ঃ১২৩)। আরবে কবিদের শাইর বলা হতো (সেখান থেকে এসেছে উর্দুতে শায়ের/কবি) যে তার কল্পনাশক্তি/সৃষ্টিশীলতা দিয়ে কবিতা (শাইরি) সৃষ্টি করতো। এই অংশের সঠিক অনুবাদ হবে “আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা অংশ”

লক্ষ্য করুন এই বাক্যটি ২২ঃ৩৬ আয়াতেও আছে।

-উ’তামারাঃ

উ’তামারা শব্দটা এসেছে আইন-মিম-রা রুট থেকে, যার অর্থ age/life/maintain/extend শব্দটির আগে আলিফ আছে, কাজেই এটি আদেশ মূলক শব্দ, যার অর্থ extend time বা সময়কে প্রসারিত/দীর্ঘ করা।

২ঃ৯ ইয়ুআ’ম্মারু (দীর্ঘ জীবন)

১৫ঃ৭২ লাআ’মরু (জীবনের পথ)

-বাইত

এই শব্দের অর্থ plan/constitution/সংবিধান।

হাজ্জাল বাইত মানে যু্ক্তির সংবিধান, যে সংবিধান আল্লাহ রচনা করেছেন সেই ইব্রাহিমের সময় থেকে। আল্লাহর এই যৌক্তিক সংবিধান (হাজ্জাল বাইত) হলো Monotheism বা ওয়াহদানিয়াত বা একত্ববাদ।

-তাওয়াফ

এই শব্দের অর্থ কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ দেখানো, কোনো কিছুকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করা।

এখানে আল-সাফা (শুদ্ধ) এবং আল-মারওয়া (চিরন্তন) হলো মিন শাইরি আল্লাহ বা আল্লাহর সৃষ্টিশীলতার অংশ।

তাহলে কাছাকাছি অনুবাদটা হবে

“নিশ্চয়ই শুদ্ধতা/purity (আল-সাফা) এবং চিরন্তনতা/eternity (ওয়াল মারওয়াতা) আল্লাহর সৃষ্টিশীলতার অংশ (মিন শাইরি আল্লাহ)। যারাই (ফামান) যৌক্তিক সংবিধানে (হাজ্জাল বাইতা) দীর্ঘ সময় প্রসারিত করে (উ’তামারা) তবে তার জন্য কোনো দোষ নাই যদি সে আগ্রহ ধরে রাখে (ফালা জুনাহা আলাইহি আন ইয়াততাওয়াফা) এবং যারা ভালভাবে/যথাযথ ভাবে অনুগত থাকে (ওয়ামান তাতাওয়া খাইরান), আল্লাহ তাদের প্রচেষ্টা appreciate/উৎসাহিত (শাকিরুন) করেন অবগত (আলিমুন) থেকে।

খেয়াল করেন ২ঃ১৫৩ তে মুমিনদের ধৈর্যশীল হবার উপদেশ দিচ্ছেন আল্লাহ। এখানে হাজ্জাল বাইত বা যৌক্তিক সংবিধান (একত্ববাদ) কে আল্লাহর সৃষ্টিশীলতার অংশ বলা হচ্ছে কারণ এটি শুদ্ধ (আল-সাফা) ও চিরন্তন (আল-মারওয়াতা)। আল্লাহর যৌক্তিক সংবিধানকে (হাজ্জাল বাইত) দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রসারিত করা চাট্টিখানি কথা নয়। দীর্ঘদীন ধরে পরিশ্রম ও ধৈর্য্যধারণ করতে হয়। “দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রসারিত করার (উ’তামারা)” অর্থ যা বুঝলাম তা হলো ধৈর্যসহকারে সময় নিয়ে আল্লাহর যৌক্তিক সংবিধান (হাজ্জাল বাইত) যথাযথ ভাবে বোঝার চেষ্টা করা। তবে কেউ যদি আগ্রহ ধরে রাখতে পারে এবং যথাযথ ভাবে/ভালোভাবে অনুগত থাকে, তাহলে আল্লাহ তাকে দোষ দিবেন না সময় দীর্ঘায়িত করার কারণে। আল্লাহ তার প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করেন এবং তিনি অবগত আছেন।

পাঠকরা এবার বলেন কোন্ অনুবাদটি যৌক্তিক এবং ২ঃ১৫৩ এর কনটেক্সট এর সাথে মিলে যায়?

পর্ব ৩

One thought on “Hajj হজ্ব পর্ব ২”
  1. […] হজ্ব শব্দের বিকৃত অনুবাদের আয়াত গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ থাকবে পরের পর্ব গুলোতে ইনশাআল্লাহ।পর্ব ২ […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *