“কুরআনুন কারীমের আলোকে পারিশ্রমিক/মজুরি/বিনিময় প্রসঙ্গ:
(ক) আল্লাহ্ আল-আযীযুল হাকীম-এর আয়াতের বিনিময়/সেবামূল্য গ্রহণ না করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ:(i)وَآمِنُواْ بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقاً لِّمَا مَعَكُمْ وَلاَ تَكُونُواْ أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ وَلاَ تَشْتَرُواْ بِآيَاتِي ثَمَناً قَلِيلاً وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِআর তোমরা ঈমান আনয়ন করো ঐ বিষয়ে— যা আমি নাজিল করেছি সত্যতা-মান্যকারীরূপে তার— যা তোমাদের কাছে রয়েছে, আর তোমরা থেকো না এতে অবিশ্বাসকারীদের পুরোভাগে, আর বিক্রয় করো না আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে, আর আমারই প্রতি সচেতনাবলম্বী হও তোমরা। (২:৪১)(ii)فَلاَ تَخْشَوُاْ النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلاَ تَشْتَرُواْ بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلاً وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَঅতএব তোমরা ভয় করো না মানুষকে, বরং ভয় করো আমাকে, আর বিক্রয় করো না আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে; আর যারা বিচার-ফয়সালা করে না তার দ্বারা— যা নাজিল করেছেন আল্লাহ্, তবে ঐসব লোক— তারাই কাফির। (৫:৪৪ এর অংশবিশেষ)(খ) আল্লাহ্ আল-আযীযুল হাকীম-এর আয়াত গোপনকারী, আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণকারীরা প্রকৃতপক্ষে আগুন ভক্ষণকারী; তারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি ক্রয়কারী:(i)إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أُولَـئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌনিশ্চয় যারা গোপন করে যা নাজিল করেছেন আল্লাহ্ আল-কিতাব হতে, আর ক্রয় করে তার দ্বারা সামান্য মূল্য— এরাই, তারা খায় না তাদের পেটের মধ্যে আগুন ব্যতীত (অন্য কিছু), আর কথা বলবেন না তাদের সাথে আল্লাহ্ কিয়ামত পর্যায়ে, আর পরিশুদ্ধও করবেন না তাদের, আর তাদের জন্যে রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। (২:১৭৪)(ii)أُولَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ فَمَآ أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِএরাই তারা, যারা ক্রয় করে ভ্রান্তপথ— সঠিক পথের পরিবর্তে, আর শাস্তি— ক্ষমার পরিবর্তে; কাজেই কতই না সবর করবে তারা আগুনের ওপর! (২:১৭৫)(গ) আল্লাহ্ আল-আযীযুল হাকীম-এর আয়াত বিক্রয়কারীগণ ফাসিক, তারা লোকদের আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে:(i)كَيْفَ وَإِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ لاَ يَرْقُبُواْ فِيكُمْ إِلاًّ وَلاَ ذِمَّةً يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ وَتَأْبَى قُلُوبُهُمْ وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَকেমন করে (চুক্তি বহাল থাকবে)— অথচ তারা যদি স্পষ্ট হয় (প্রাধান্য লাভ করে) তোমাদের ওপরে, (তবে) তারা মর্যাদা দেবে না তোমাদের মধ্যে আত্মীয়তার বা প্রতিশ্রুতির দায়িত্বের? তারা রাজি করে তোমাদের— তাদের মুখগুলো দিয়ে, আর ফিরিয়ে নেয় তাদের কলবগুলো, আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক। (৯:৮)اشْتَرَوْاْ بِآيَاتِ اللّهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَصَدُّواْ عَن سَبِيلِهِ إِنَّهُمْ سَاء مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَতারা বিক্রয় করে আল্লাহর আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে, তাই তারা বাধাগ্রস্ত করে (লোকদেরকে) তাঁর পথ থেকে; নিশ্চয় তারা অতি নিকৃষ্ট— যা তারা আমল (কর্ম) করে যাচ্ছে। (৯:৯)(ঘ) রাসূল মুহাম্মদ (শান্তি তাঁর ওপর) দ্বীনি কর্মকাণ্ডের জন্য বিনিময়/পারিশ্রমিক/ মজুরি/উসুল/জীবিকা/আহার্য পাবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেননি এবং তিনি তা গ্রহণও করেননি:(i)قُل لاَّ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ هُوَ إِلاَّ ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَবলো— “আমি চাই না তোমাদের কাছে এর জন্যে কোনো মজুরি, নয় এটি জিকর (স্মরণিকা) ব্যতীত (অন্য কিছু) বিশ্ববাসীর জন্যে।” (৬:৯০ এর অংশবিশেষ)(ii)وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ هُوَ إِلاَّ ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَআর তুমি চাচ্ছ না তাদের কাছে এর জন্যে কোনো পারিশ্রমিক, নয় এটি জিকর (স্মরণিকা) ব্যতীত (অন্য কিছু) বিশ্বজগতের জন্যে। (১২:১০৪)(iii)أَمْ تَسْأَلُهُمْ خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَঅথবা তুমি কি যাচ্ঞা করছ তাদের কাছে কোনো উসুল? অথচ উসুল তোমার রাব্বেরই উত্তম, আর তিনিই উত্তম রিজিকদাতাদের মধ্যে। (২৩:৭২)(iv)قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِلَّا مَن شَاء أَن يَتَّخِذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًاবলো— “আমি যাচনা করি না তোমাদের (নিকট) এর জন্য কোনো মজুরি, (তবে) এ ব্যতীত যে, যে-কেউ ইচ্ছে করে সে যেন গ্রহণ করে তার রাব্বের অভিমুখে পথ।” (২৫:৫৭)(v)قُلْ مَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ فَهُوَ لَكُمْ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌবলো— “চাই না তোমাদের থেকে কোনো মজুরি, অতএব তা তোমাদের জন্যেই (রাখো), আমার মজুরি আল্লাহর নিকটে ব্যতীত তো নয়, আর তিনি সব-কিছুর ওপরে প্রত্যক্ষদর্শী।” (৩৪:৪৭)(vi)قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَতুমি বলো— “আমি চাই না তোমাদের কাছ থেকে এর ওপরে কোনো পারিশ্রমিক, আর নই আমি (সে) ভার চাপিয়ে দেওয়াদেরও অন্তর্ভুক্ত।” (৩৮:৮৬)(vii)ذَلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌঐটি— যার সুসংবাদ দিচ্ছেন আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের— যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে; তুমি বলো— “আমি চাই না তোমাদের কাছে এর ওপরে পারিশ্রমিক নৈকট্যঘটিত সৌহার্দতা ব্যতীত”; আর যে-কেউ অর্জন করবে কল্যাণময় কাজ, আমরা বৃদ্ধি করি তার জন্যে এতে কল্যাণ; নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, গুণগ্রাহী। (৪২:২৩)(viii)مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِচাই না আমি তাদের থেকে কোনো রিজিক (জীবিকা), আর চাই না আমি যে— তারা আমাকে খাওয়াবে। (৫১:৫৭)(ix)إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُনিশ্চয় আল্লাহ্— তিনিই রিজিকদাতা, শক্তিসম্পন্ন, পরাক্রান্ত। (৫১:৫৮)(x)أَمْ تَسْأَلُهُمْ أَجْرًا فَهُم مِّن مَّغْرَمٍ مُّثْقَلُونَঅথবা তুমি কি চাচ্ছ তাদের কাছে (কোনো) মজুরি, যার ফলে তারা দেনায় ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে? (৫২:৪০)(xi)أَمْ تَسْأَلُهُمْ أَجْرًا فَهُم مِّن مَّغْرَمٍ مُّثْقَلُونَঅথবা তুমি কি চাচ্ছ তাদের কাছে (কোনো) পারিশ্রমিক, যার ফলে তারা দেনায় ভারগ্রস্ত হয়ে গেছে? (৬৮:৪৬)(ঙ) যারা দ্বীনি কর্মকাণ্ডে বিনিময় যাচনা করে না— তারাই অনুসরণযোগ্য, তারাই সুপথপ্রাপ্ত:اتَّبِعُوا مَن لاَّ يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَঅনুসরণ করো তাদের— যারা যাচ্ঞা করে না তোমাদের কাছে কোনো মজুরি, আর তারাই সৎপথে চালিত। (৩৬:২১)## উপরিউক্ত আয়াতসমূহ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আল্লাহ্ আযীযুল হাকীম-এর আয়াতের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডে বা দিনি কিংবা ধর্মীয় কার্যক্রমে কোনো প্রকার বিনিময়, পারিশ্রমিক, মজুরি, উসুল, জীবিকা বা আহার্য গ্রহণ না করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু আয়াত বিক্রয়কারী দিনি কার্যক্রমকে রুটিরুজির উপায়-উপকরণ হিসেবে গ্রহণকারী ধর্মজীবী, ধর্ম ব্যবসায়ী, পরজীবী, অন্ধ মোল্লাতন্ত্র এসকল আয়াতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে অথবা এড়িয়ে গিয়ে এক বিকৃত ইসলাম সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছে। অথচ তারাই নিজেদের রাসূলের ওয়ারিশ, নায়েবে রাসূল হিসেবে দাবি করে। কিতাবাল্লাহ্ অনুযায়ী তারা প্রকৃতপক্ষে আগুন ভক্ষণকারী, কিয়ামত পর্যায়ে তাদের সাথে আল্লাহ্ আল-আযীযুল হাকীম কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও করা হবে না (২:১৭৪)। তারা হেদায়াতের পরিবর্তে ভ্রষ্টতা খরিদকারী (২:১৭৫)। মূলত তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখে, তারা আয়াত অস্বীকারকারী ফাসিক (৯:৮-৯; ২:৯৯)। তারা পথভ্রষ্ট (৭:১৭৫), আয়াতের প্রতি মিথ্যারোপকারী জালিম (৬২:৫)। কিতাবাল্লাহতে তাদের তুলনা করা হয়েছে হাঁপানো কুকুর (৭:১৭৬) এবং বোঝা বহনকারী গাধার সাথে (৬২:৫)।কিতাবাল্লাহ্ অনুযায়ী লক্ষণীয় যে, রাসূল মুহাম্মদ (শান্তি তাঁর ওপর) দিনি কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো প্রকার বিনিময়, পারিশ্রমিক, মজুরি, উসুল, জীবিকা বা আহার্য পাবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেননি এবং তিনি তা গ্রহণও করেননি। তবে তিনি শুধু চেয়েছেন নৈকট্যঘটিত সৌহার্দতা এবং তাঁর কওম যেন রাব্বের অভিমুখে পথ গ্রহণ করে। সুতরাং, অন্ধ মোল্লাতন্ত্র, ধর্মব্যবসায়ী, পরজীবী, ধর্মজীবীগণ প্রকৃতপক্ষে রাসূলের অনুসারী নয় এবং তারা কখনোই অনুসরণযোগ্য নয়।ইংশাআল্লাহ্ চলবে…