মুত্তাকি

তাকওয়া تقوي
মুত্তাকি
পর্ব:- ০১
তাক্বওয়া শব্দটির সঠিক বিশ্লেষণ ও বিভ্রান্তি নিরসনঃ

“তাক্বওয়া” ধারণাটি মুসলিমদের জীবনে এক মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, যা মুসলিম মাত্রই অর্জন করতে চায়। সে কারণে এ বিষয়ে প্রচলিত বিভ্রান্তি নিরসনে সঠিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

এ শব্দটির বানোয়াট মূল (Root) ধরা হয়েছে “ওয়াক্বী” (وقی)/(ওয়াও-ক্বফ-ইয়া) যা‌ থেকে “تقی” (তাক্বী), “تقو” (তাক্বু), “تقا” (তাক্বা) এবং “اتق” (আতাক্ব) ইত্যাদি আরবি শব্দগুলো উদ্ভূত এবং সমাজে already প্রতিষ্ঠিত। যদিও প্রচলিত নিয়ম অনুসারেও তা “আক্বী” (হামযা-ক্বফ-ইয়া) হওয়ার কথা, যার আবার আদিমূল (Proto Root) হবে “আক্বা” (হামযাহ-ক্বফ), যার অর্থ ১.Pity-দয়া দেখানো/করুণা করা, ২.Protect-রক্ষা করা,
৩.Guard against-কোন কিছু থেকে বেঁচে থাকা,
৪.Be cautious/beware of-কোন কিছুর ব্যাপারে সতর্ক থাকা,
৫.prevent-বাধা দেয়া/ঠেকানো প্রভৃতি।
আর এই শব্দমূলের “বাড়তি অর্থ” বানানো হয়েছে Fear-ভয় করা, কারণ তা “আত্তাক্বুল্লাহ” বা fear Allah/আল্লাহকে ভয় করো – এই অর্থ করলে তার সাথে যেন “কোন রকমে” একটু মানানসই হয়ে ওঠে। অথচ আল্লাহ কোন “ভীতিকর সত্ত্বা” নন। কিন্তু তারপরেও যদি এগুলোর অর্থ তাদের বানানো “শব্দমূল” অনুযায়ী করা হতো, তাহলে “আত্তাক্বুল্লাহ” এর অর্থ হতো “আল্লাহকে রক্ষা করো, আল্লাহ থেকে এড়িয়ে/বেঁচে থেকো, আল্লাহকে করুণা করো, আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক থাকো, আল্লাহকে বাধা দাও/ঠেকাও ” – কি বিশ্রী ব্যাপার হতো! এ জন্য সামান্য Change করে, “আল্লাহকে ভয় করো” এ অর্থ করা হয়েছে। “তাক্বওয়া”র বিষয়টা আমরা মুসলিমরা এভাবে 100% ভুল জানি। আর এই ভুল বুঝানোর জন্য পার্শিয়ান স্কলাররা “ওয়াক্বী” নামক নতুন শব্দমূল (Root) প্রবর্তন করেছে। মূলের মধ্যে যে “তা” অক্ষরটি হবে, তা তারা চাপা রেখেছে (Suppressed).

অথচ…

“তাক্বওয়া”র প্রকৃত শব্দমূল হবে “তাক্বা”, (তা-ক্বফ-হামযাহ)। আর এর 100% প্রমাণ হচ্ছে (65:4) নম্বর আয়াতে থাকা (يَتَّقِ) শব্দটি, যে শব্দটি দেখে কল্পনাতেও এর মূল হিসেবে “ওয়াক্বী” কে আনা যায় না। আরো Confusion মুক্ত হয়ে বোঝার জন্য উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, “তাত্তাক্বুন” (2:183) এবং “মুত্তাক্বীন” (2:2) শব্দ ২টির কথা। “তাত্তাক্বুন” (তাত্+তাক্বুন) এর ক্ষেত্রে “তাক্বা” এর পূর্বে অতিরিক্ত 2টি “তা”এখানে already চলে এসেছে। আর “মুত্তাক্বীন” (মুত্+তাক্বীন) এর ক্ষেত্রে “তাক্বা” এর পূর্বে অতিরিক্ত একটি “তা” আগেই চলে এসেছে, সুতরাং এর মূল “তাক্বা” না হয়ে উপায় নেই; যার প্রকৃত অর্থ হবে
১. Desire/Crave/Long for/Eager-আকাঙ্ক্ষা করা,
২. Trust-আস্থা রাখা/আস্হা স্থাপন করা, ৩.Concentrate-মনোযোগ দেয়া,
৪.Depend/Rely-নির্ভর করা,
(আবার, সলাত এর synonym হিসেবে) ৫.Attach,
৬.Connect,
৭.Link,
৮.Join,
৯.Unite – সংযুক্ত করা,
১০.Follow/Pursue/Chase – অনুসরণ করা,
১১.Merge- একীভূত করা,
১২.Adhere- লেগে থাকা/সংলগ্ন থাকা,
১৩.Be perfect- নিখুঁত হওয়া।

অতএব, একজন “মুত্তাক্বী” ব্যক্তি হচ্ছেন কোরআনে বর্ণিত বিধি-বিধান পালনে একজন নিখুঁত হতে চাওয়া/বিধানের অনুসারী/বিধানের অন্বেষী/বিধানের সাথে লেগে থাকে এমন ব্যক্তি (Craving/Following/Attached/Adherent/Pursuing/Perfect Person)।

আল্লাহ সচেতন হওয়া (God conscious), কোরআনের দাবি, তবে তা “মুত্তাক্বী” শব্দের অর্থ নয়।

মুত্তাকি

মুত্তাকীর কুরআনী সংজ্ঞাঃ “….. উলাইকা হুমুল মুত্তাকুন”
**
মহিমান্বিত কুরআনে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের বর্ণনার সাথে সাথে তাদের সংজ্ঞাও নিরুপন করে দেয়া হয়েছে।

সহজ কথায় তাকওয়াবানদের আমরা ‘মুত্তাকী’ হিসেবে চিহ্নিত করি। একজন মুত্তাকীর পুরো পরিচয় আমরা পুরো কুরআনের বিভিন্ন আলোচনা থেকে নেবার চেষ্টা করব।

তবে সুনির্দিষ্ট ভাবে কারা মুত্তাকী তা দু’টি আয়াতে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ পূর্বক বলে দেয়া হয়েছে। আমার কি সেইসব বৈশিষ্ট্য সমূহের অধিকারী- নিজেরাই নিজেদের যাচাই করে নেই কুরআনী মানদন্ডে।

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآَتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآَتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে,
১.ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, মালাইকাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর,
২.আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে।
৩.আর যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে,
৪.যাকাত নিয়ে আসে
৫.এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী
৬. এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও কষ্টের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী
তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই মুত্তাকী । -২:১৭৭

চারিত্রিক ইতিবাচক দিকগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ

ক) আল্লাহর প্রতি, আখেরাতের দিনের প্রতি, মালাইকাদের প্রতি, কিতাবের প্রতি, আর নবীদের প্রতি পরিশুদ্ধ ঈমান;

খ) যে আল্লাহর প্রতি মহব্বত বা ভালোবাসায় ধন-সম্পদ দান করে আ‌ত্মীয়-স্বজনদের, এতীমদের, মিসকিনদের, পথচারীদের, ভিখারীদের, আর দাসদের মুক্তিপণ বাবদ;

গ) আর যে সালাত কায়েম করে ও পরিশুদ্ধ (তাযকিয়াতুন) হয়;

ঘ) আর যারা প্রতিজ্ঞা করার পরে তাদের ওয়াদা রক্ষা করে;

ঙ) আর অভাব-অনটনে ও আপৎকালে ও আতঙ্কের সময়ে ধৈর্য অবলম্বন করে।

মুত্তাকীদের চারিত্রিক দৃঢ়তা কিয়ামতের প্রেক্ষাপটে অতি সংক্ষেপে বলে দেয়া হয়েছে সূরা যুমারের ৩৩ নং আয়াতে।

وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

যারা সত্য নিয়ে আগমন করছে এবং সত্যকে সত্য মেনে নিয়েছে; তারাই তো মুত্তাকী । -৩৯:৩৩

তবে, মুত্তাকীর পুরো স্বরূপ বুঝতে আমাদেরকে কুরআনের আরও বহু আয়াতের শরনাপন্ন হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধ মুত্তাকী হিসেবে কবুল করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *