ঈদ عيد
উৎসব
আনন্দ
পর্ব-৩
দুই ঈদ কিভাবে চালু হলো?
ঈদ কি কুরআনে আছে ??
আল্লাহ কি ঈদ করতে বলেছেন ??
Al-Ma’idah ৫:১১৪
قَالَ عِيْسَي ابْنُ مَرْيَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ ۚ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ
ঈসা ইবনে মরিয়ম বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা আমাদের প্রতি আকাশ থেকে মায়িদা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে ঈদ বা আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রিযিক দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রিযিক দাতা। [সুরা মায়েদা – ৫:১১৪]
قَالَ اللّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ فَمَن يَكْفُرْ بَعْدُ مِنكُمْ فَإِنِّي أُعَذِّبُهُ عَذَابًا لاَّ أُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ-
আল্লাহ বললেনঃ নিশ্চয় আমি সেটা তোমাদের প্রতি অবতরণ করব। অতঃপর যে ব্যাক্তি এর পরেও অকৃতজ্ঞ হবে, আমি তাকে এমন শাস্তি দেব, যে শাস্তি বিশ্বজগতের অপর কাউকে দেব না। [সুরা মায়েদা – ৫:১১৫]
এই ঈদের আয়াত ছাড়া আর কোন আয়াত কুরআনে নেই !!
ঈদ ইবাদত হলে আল্লাহর অনুমোদন লাগবে আয়াতটি একটু বুঝার চেস্টা করুন আকাশ থেকে মায়িদা চেয়েছিল এবং আকাশ থেকে মায়িদা দিলে ঐ দিন থেকে ইদ উৎযাপন করবে ইসা (আ:) এর অনুসারিরা আল্লাহ বললেন আমি মায়িদা দিব কিন্তু এর পরে নাফারমানি করলে পৃথিবীতে এ যাবৎকালে মানুষকে যে শাস্তি আমি দেয়নি তার চেয়েও ভয়ানক শাস্তি তোমাদেরকে দিব এর পরে হাওয়ারিগন তা প্রত্যাখ্যান করে আর ঈদ উৎযাপিত হয়নি !!
এই শাস্তির আয়াতের উপর ভিত্তি করে কি ঈদ করা যায় ??
আল্লাহ আনন্দ উল্লাসের জন্য আমাদের পাঠান নি !!
তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হলো বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২০]
মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে ;
১.প্রবৃত্তির ভালবাসা-
২.নারী
৩.সন্তানাদি
৪.রাশি রাশি সোনা-রূপা
৫.চিহ্নিত ঘোড়া
৬.গবাদি পশু
৭.ও শস্যখেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগ সামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তন স্থল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪
আর আপনি তাদের জন্য পেশ করুন দুনিয়ার জীবনের উপমা: তা পানির মতো, যা আমি আসমান থেকে বর্ষণ করেছি। অতঃপর তার সাথে মিশ্রিত হয় জমিনের উদ্ভিদ। ফলে তা পরিণত হয় এমন শুকনো গুঁড়ায়, বাতাস যাকে উড়িয়ে নেয়। আর আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান”। [সূরা কাহাফ, আয়াত: ৪৫]
আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশার জন্য নয়। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না? ৬/৩২
পার্থিব এ জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া কিছু নয়, আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন- তারা যদি জানত!
আনকাবুত ২৯
আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল ইমরান ১৭১
আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের আল কুরআনের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। আল মায়িদাহ ১১৪
Al-Ma’idah 5:27
.إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلْمُتَّقِينَ
আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’।
দুই ঈদ কিভাবে চালু হলো?
ঈদ মূলত ব্যবসায়িক শ্রেনীর মানুষ আর তথাকথিত ধর্মীয় নেতা ও লোকজন তাদের ইনকামের জন্য চালু করেন। যার মাধ্যমে তারা লক্ষ কোটি টাকার বানিজ্য করেছেন।
ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহার নাম গুলো আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেননি এবং কোন ইবাদত ও দেননি এগুলো পূর্বপুরুষদের দেয়া নাম চলুন কোরআন থেকে দেখা যাক:
An-Najm 53:23
إِنْ هِىَ إِلَّآ أَسْمَآءٌ سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَٰنٍۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَمَا تَهْوَى ٱلْأَنفُسُۖ وَلَقَدْ جَآءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ ٱلْهُدَىٰٓ
এগুলো কেবল কতিপয় নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলীল-প্রমাণ নাযিল করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেরা যা চায়, তার অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াত এসেছে।
Yusuf 12:40
مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَٰنٍۚ إِنِ ٱلْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ –
‘তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না’। এটিই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না’।
Al-A’raf 7:71
قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ رِجْسٌ وَغَضَبٌۖ أَتُجَٰدِلُونَنِى فِىٓ أَسْمَآءٍ سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَٰنٍۚ فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ-
সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আযাব ও ক্রোধ পতিত হয়েছে। তোমরা কি এমন নাম সমূহের ব্যাপারে আমার সাথে বিবাদ করছ, যার নামকরণ করেছ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি’।
Ar-Ra’d 13:33
أَفَمَنْ هُوَ قَآئِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْۗ وَجَعَلُوا۟ لِلَّهِ شُرَكَآءَ قُلْ سَمُّوهُمْۚ أَمْ تُنَبِّـُٔونَهُۥ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى ٱلْأَرْضِ أَم بِظَٰهِرٍ مِّنَ ٱلْقَوْلِۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا۟ عَنِ ٱلسَّبِيلِۗ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِنْ هَادٍ –
তবে কি প্রতিটি নাফ্স যা উপার্জন করে যিনি তার দায়িত্বশীল এতদসত্ত্বেও তারা আল্লাহর সাথে অনেক শরীক সাব্যস্ত করেছে। বল, ‘তোমরা এদের পরিচয় দাও’। নাকি তোমরা তাকে যমীনের এমন কিছু জানাবে যে ব্যাপারে তিনি জানেন না? নাকি তোমরা ভাসাভাসা কথা বলছ? বরং যারা কুফরী করেছে তাদের নিকট তাদের ষড়যন্ত্রকে শোভিত করা হয়েছে এবং তারা সরল পথ হতে বাধা প্রদান করেছে। আর আল্লাহর নিকট যে পথহারা হয় তার কোন হিদায়াতকারী নেই।
কার বিধান অনুযায়ী ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে?
ঈদ নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি বন্ধ করুন
ঈদ ছিল মূলত একটি Arab Festival তথা Cultural যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না (আল কুরআন অনুযায়ী)। যদি এটাকে কেবল একটি সাধারন বার্ষিক Festival গ্রহণ করা হতো তাহলেও হয়তো এটা উদযাপন করার একটা যুক্তি থাকতো। কেননা যতক্ষণ পর্যন্ত না Cultural Activities তে মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করার উপকরণ, কোন ধরণের নিষিদ্ধ কার্যক্রম (যা আল কুরআন এ বর্ণনা করা হয়েছে), কোন কাজ যা মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে, কোন ধরনের অযৌক্তিক কুসংস্কার যুক্ত থাকে, কিংবা জমিনের বিপর্যয় সৃষ্টি করে অথবা মানুষকে এবং অন্য কোন প্রাণীকে কষ্ট প্রদান করে, ততক্ষন পর্যন্ত যেকোন Cultural Activities/Festival উদযাপন করা যেতে পারে (তবে অবশ্যই তা দ্বীনের অংশ মনে না করে)।
কিন্তু সমস্যাটা তখনই যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জনপদের বা দেশের নিজস্ব Cultural Festival কে দ্বীনের অংশ মনে করা হয় এবং এর সাথে Cultural Activities গুলোকে Ritual Activities হিসেবে Perform করা হয় পূণ্যের আশায়।
ঈদ উদযাপন করার বাধ্যবাধকতা বা প্রয়োজনীয়তাও নেই। বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সংস্কৃতির। বরং যারা একান্তই ভাবে এই দিন উদযাপন করতে চায় সেই মানুষগুলোকে এই দিনকে সরাসরি ভাবে বর্জন করার চাইতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই দিনে ভালো ভালো কাজ করার জন্য এবং একে দ্বীনের অংশ মনে না করার জন্য, সেই সাথে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার জন্য। ইতিবাচক পন্থায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে আরব সংস্কৃতি নয় বরং মহান আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন নিয়ে আনন্দিত হওয়ার জন্য। ১০:৫
আল্লাহ বলেন
“হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” (৪৯:১৩)
কখনো ভেবে দেখেছেন কেনো মহান আল্লাহ আমাদের কেনো বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছেন? না ভেবে থাকলে একটু ভাবুন এবং মনে রাখুন এসব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মহান আল্লাহর জন্য নয় এগুলো আমাদের জন্য একটি নিদর্শন যেন আমরা একে অন্যকে চিনতে পারি (এবং এ থেকে উৎকৃষ্ট পথ অনুসরণ করতে পারি)। তবে মহান আল্লাহ্ দেখবেন যে আমাদের মধ্যে কে অধিক আল্লাহ সচেতন।
মহান আল্লাহ সর্ব বিষয় অবগত ও পরাক্রমশালী। তিনি ফয়সালা করে দিবেন সব বিষয় ।