ঈদ পর্ব-০২

আল-কুর’আনে ঈদ!

Al-Ma’idah ৫:১১৪

قَالَ عِيْسَي ابْنُ مَرْيَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ ۚ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
ঈসা ইবনে মরিয়ম বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুযী দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রুযীদাতা।

কুরআনের আলোকে ঈদ/ইদ বা ঈদান (عِيدًا)
মূলত ঈদান (عِيدًا) শব্দটি একবারই এসেছে ৫:১১৪ আয়াতে।

আধুনিক ফার্সি (Modern Persian) ভাষাতেও ঈদ শব্দটি পাওয়া যায়।
যার অর্থ: আনন্দ/উৎসব/উৎসবের আনন্দ।

অন্যদিকে আরবি ঈদান (عِيدًا) শব্দটির অর্থ ব্যবহারিক ফার্সি ভাষার অর্থ নয়। আরবি ঈদ (عِيدًا) শব্দের আভিধানিক অর্থগুলো হলো: ১.পুনরুদ্ধার,
২.পুনরাবৃত্তি,
৩.ফেরানো,
৪.পাঠানো,
৫.সুনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি।

ঈদান (عِيدًا) শব্দের ধাতু– আইন ওয়া দাল (ع و د)। এ থেকে উদ্ভূত অন্যান্য শব্দের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হলো: ইউয়িদু (يُعِيدُ) যা ১১টি আয়াতে পাওয়া যায়। নিচে এসব আয়াত বিশ্লেষণ করা হবে।

ঈদান (عِيدًا) শব্দে যাবার আগে বোঝার সুবিধার্থে ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দটি দেখব। অভিধান ও প্রচলিত অনুবাদ অনুযায়ী ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দের অর্থ করা হয়েছে- পুনরাবৃত্তি বা REPEAT। এই অর্থ কি সঠিক? ১১টি আয়াতেই কি পুনরাবৃত্তি বা REPEAT শব্দটি ব্যবহার করা যায়?
যদি তা না-হয়, স্বাভাবিকভাবেই ‘পুনরাবৃত্তি’ অর্থটি গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ অবস্থায় ২টি ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রথমত,
এসব শব্দের মধ্যে সর্বাধিক উপযুক্ত শব্দটিই ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দের অর্থ হবে।
দ্বিতীয়ত, এসব অর্থের বাইরে ভিন্ন কোনো অর্থ হবে, যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।

চলুন, একটি আয়াত দিয়েই শুরু করা যাক।

৭১নং সুরা ‘নুহ’ দেখুন। ১৮নং আয়াতটিই অর্থ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Nuh ৭১:১৭

وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًا ۙ –
প্রচলিত অনুবাদ
আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন।

Nuh ৭১:১৮

ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا

অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন এবং আবার পুনরুত্থিত করবেন।

Nuh ৭১:১৯

وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا ۙ
প্রচলিত অনুবাদ
আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা।

Nuh ৭১:২০

لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
প্রচলিত অনুবাদ
যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে

সঠিক অনুবাদ
৭১:১৭, ১৮, ১৯, ২০ আর আল্লাহ তোমাদের বর্ধিত করেছেন (وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ) পৃথিবীতে সঠিক-বর্ধন (مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًاۙ); তারপর তাতে সংরক্ষণ (?!পুনরাবৃত্তি!?) করেন (ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا) এবং তোমাদের বের করবেন সম্পূর্ণ-বাহির (وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا); আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন সম্প্রসারিত (وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًاۙ )! তোমরা যেন চলতে পারো তাতে প্রশস্ত পথ-ঘাটে (لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا ࣖ)!
এখানে বোঝা যাচ্ছে, পুনরাবৃত্তি নয়, বরং সংরক্ষণ শব্দটিই বেশি উপযুক্ত।

প্রশ্ন উঠতে পারে, পৃথিবীতে মানুষর সব কর্ম (আমলনামা) সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু মানুষকে কেন সংরক্ষণ করা হবে?
এর কি কারণ হতে পারে?

এর উত্তর আছে ১০:৪ নং আয়াতে।
Yunus ১০:৪

اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيْعًا ؕ وَعْدَ اللّٰهِ حَقًّا ؕ اِنَّهٗ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ لِيَجْزِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ بِالْقِسْطِ ؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌۢ بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, তিনিই সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার পুনর্বার তৈরী করবেন তাদেরকে বদলা দেয়ার জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে ইনসাফের সাথে। আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের পান করতে হবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করতে হবে যন্ত্রনাদায়ক আযাব এ জন্যে যে, তারা কুফরী করছিল।

সঠিক অনুবাদ
১০:৪…নিশ্চয়ই তিনি আবির্ভূত করেন/অস্তিত্ব দেন সৃষ্টিকে তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) যাতে প্রতিফল দেওয়া যায়….

ভালো বা মন্দ কাজের প্রতিফলন দেওয়ার জন্য মানুষকে সংরক্ষণ করা হয়। এই সংরক্ষণের একটা পর্যায়/অবস্থা/দশা হলো পুনরুদ্ধার।
অর্থাৎ,
প্রতিফল দেবার জন্য মানুষকে কোনো একভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তা থেকে পুনরুত্থান/পুনরুদ্ধার করা হবে কেয়ামত পরবর্তী সময়ে।

মূল বিষয় হলো– সংরক্ষণ করা।

৭১:১৭-২০ আর আল্লাহ তোমাদের বর্ধিত করেছেন (وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ) পৃথিবীতে সঠিক-বর্ধন (مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًاۙ); তারপর তাতে/তার মধ্যে সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا) এবং তোমাদের বের করবেন সম্পূর্ণ-বাহির (وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا); আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন সম্প্রসারিত (وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًاۙ )! তোমরা যেন চলতে পারো তাতে প্রশস্ত পথ-ঘাটে (لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا ࣖ)!

পৃথিবীর কথা বলা হচ্ছে, যেখানে মানুষের জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু হয়। এখানেই মানুষকে সংরক্ষণ করা হয়। কিভাবে মৃত মানুষ সংরক্ষণ হতে পারে? সে বিষয়ে ভিন্ন আলোচনা থাকবে।

এ ছাড়া আরও একটি কারণে ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দের অর্থ পুনরাবৃত্তি বা REPEAT হতে পারে না।
Al-A’raf ৭:৫৭

وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖ ؕ حَتّٰۤي اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنٰهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰي لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব-যাতে তোমরা চিন্তা কর।

৭:৫৭ আয়াতের শেষাংশে মৃতদেরকে অন্ধকার এক সংরক্ষণাগার (পৃথিবী) থেকে বের করার কথা বলা হয়েছে।

ভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের পুনরাবৃত্তি হলো পুনরায় মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হবার গোটা প্রক্রিয়া আগা-গোড়া রিপিট করা।

অন্যদিকে মানুষকে সংরক্ষণ করা হয়, সেখান থেকে আবার বের করা হবে, কোনো পুনরাবৃত্তি না।

আরবি ঈদান (عِيدًا) বা ইদ শব্দটির ক্রিয়াবাচক শব্দ হলো ইউয়িদু (يُعِيدُ)। ঈদান (عِيدًا) শব্দের একবারই ব্যবহার পাওয়া যায় ৫:১১৪ আয়াতে। যেখানে নবী ও রসুল ঈসা আকাশ থেকে মাইদাতান /কিতাব নাযিল করার প্রার্থনা করেন। আমরা ২ আয়াত আগে থেকে দেখি।

৫:১১২ হাওয়ারিরা ঈসা নবীকে বলেছিল ‘আকাশ থেকে মায়িদাহ/কিতাব’ (مائدة من السماء) পাঠানোর জন্য; ঈসা নবী সতর্ক করে বলেন- আল্লাহর ব্যাপারে সজাগ-সচেতন-সতর্ক হও যদি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাকো (اتقوا الله إن كنتم مؤمنين)!

এরপর ৫:১১৩ তে হাওয়ারিগণ তাদের মায়িদাহ প্রত্যাশার কারণ ব্যাখ্যা করে। তা হলো: মায়িদাহ অবতীর্ণ (يُنَزِّلَ) হলে-

১. তারা পানাহার করবে (نَّأْكُلَ مِنْهَا)/কিতাব আত্মস্থ করবে/কিতাবের বিধান মেনে চলবে।
২. কিতাব আত্নস্থ করার ফলে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে/মন জুড়াবে (تَطْمَىِٕنَّ قُلُوْبُنَا)
৩. তারা এ বিষয়ে কিতাবের সাক্ষীদাতা হবে (ٱلشَّٰهِدِينَ)।

তারপরই ৫:১১৪ তে নবী ঈসা নিশ্চিত হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন:

মারিয়ামের ছেলে ঈসা বলেছিল (قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ), আল্লাহুম্মা আমাদের রব, আমাদের জন্য আকাশ থেকে রব, আমাদের জন্য আকাশ থেকে ‘মায়িদাতান’/কিতাব  অবতীর্ণ করুন (اللهم رَبَّنَآ اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَاۤىِٕدَةً مِّنَ السَّمَاۤءِ) যা-হবে আমাদের জন্য ‘ঈদ’ (تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا) পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের পরবর্তীদের জন্য এবং আপনার একটি নিদর্শন (لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْك) এবং আমাদেরকে রিজিক/জীবনোপকরণ দিন, আর আপনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা (وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ)।

এখানে, ‘মায়িদাতান’ ও ‘ঈদ’ শব্দ দুটি অনুবাদ করা হবে যুক্তি দিয়ে, যাতে সর্বোচ্চ সঠিক অর্থ পাওয়া যায়। এই শব্দ দু’টি একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আকাশ থেকে ‘মায়িদাহ’ /কিতাব পাঠালে ‘ঈদ’ হবে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, আল-কুর’আনের সব অনুবাদে আকাশ থেকে ‘খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা’ বা টেবিল-ভর্তি খাবার, a feast from heaven, a feast from the sky পাঠানোর যে ধারণা যোগ করা হয়েছে, তা মূলত খ্রিষ্টান ধর্মের বিশ্বাস থেকে আগত, যা The Last Supper বা ‘শেষ নৈশভোজ’ নামে পরিচিত।

খ্রিষ্ট ধর্মের ধারণা অনুযায়ী যিশুখ্রিষ্ট তার ১২জন শিষ্যকে নিয়ে মৃত্যুর আগে যে শেষ নৈশভোজ করেন- তাই যিশুর ‘শেষ নৈশভোজ‘ নামে পরিচিত। এই ভোজে যিশু তার বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মদ পান করেন ও রুটি খান।

এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বিখ্যাত চিত্রকর্ম আঁকেন। ছবিতে মাঝখানে যিশুখ্রীষ্টকে এবং তাঁর চারপাশে শিষ্যদের দেখা যায়। এই নৈশভোজের বর্ণনা রয়েছে সেইন্ট যোহন লিখিত সুসমাচারের ১৩:২১ ছত্রে; যেখানে যিশু বলেন যে, ১২জনের মধ্য থেকে একজন পরদিনই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।

Leonardo_da_Vinci_(1452-1519)-_The_Last_Supper(1495-1498)

অতএব,
খ্রিষ্ট ধর্ম থেকে অনুপ্রাণিত ও প্রবেশকৃত অনুবাদ—যার ভালো লাগবে তিনি বিশ্বাস করতেই পারেন। কোনো জ্ঞানী ও শীর্ষ পর্যায়ের মুত্তাকি মানুষ-নবী-রসুল আকাশ থেকে টেবিল ভর্তি খাবার পাঠানোর জন্য প্রার্থনা করবেন (!) এমন বিস্ময়কর চিন্তা আপনি তখনই করবেন, যখন আপনি নিজেও মহান রবের কাছে এমন প্রার্থনা করবেন! নিশ্চয়ই জীবনেও এহেন প্রার্থনা করেন নি, তাই না?

উপরন্তু,
ঈসা নবীর জন্মের সময়ও তার মহীয়সী মা মারিয়ামকে বলা হয়েছিল, খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে ঝাঁকা দাও, পাকা পাকা খেজুরগুলো পড়বে! তখনও আকাশ থেকে রাশি রাশি ভরা ভরা খাবারের ডালি দেখা যায় নি। বরং, তথ্য দেওয়া হয়েছিল- কোথায় পাওয়া যেতে পারে ক্ষুধার খাবার।

আসুন দেখি কুর’আনের ঈদ ও মায়িদাহ কি জিনিস!

ক্রিয়াবাচক শব্দ হলো ইউয়িদু (يُعِيدُ) অর্থ হলো ‘সংরক্ষণ করা’। সংরক্ষণ করা এর বিশেষ্যপদ (Noun) হলো ‘রক্ষা/সুরক্ষা’ save, saving, protection, defense, safeguard, guard।

আর আকাশ থেকে পাঠাতে বলা হলো মা+ইদাহ্ (ىِٕدَةً + مَاۤ= مَاۤىِٕدَةً)= মাইদাহ্। যার অর্থ হতে পারে,
১.কিতাব
২.বিধানাবলী
আর তাহলেই তা-হবে তাদের জন্য সুরক্ষার (تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا) গ্যারান্টি।

কে না জানে, পানীয় জলের জন্য প্রাচীনকাল থেকে জগৎজুড়ে কতই না যুদ্ধ সংঘাত হয়ে আসছে। যেখানে পাওয়া যেত সুমিষ্ট পানির জলাধার, সেখানেই গড়ে উঠেছিল উন্নত সভ্যতা, সেখানেই বিকশিত হয় মানবজাতি। হরোপ্পা-মহেনজোদ্দারো, ইউফ্রেতিস ও টাইগ্রিস নামের বৃহৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী মেসোপটেমীয় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, দুর্গম পর্বতের আড়ালে হলুদ নদীর তীরে চীনা সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা—সবই গড়ে উঠেছিল পানিকে কেন্দ্র করে!

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার কৃষিকাজ; Image Source imgur.com
এমনকি এত উন্নয়ন অগ্রগতির পর এখনও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশই সুপেয় পানি পানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

দেখুন, জাতিসংঘ কি বলছে:

https://www.unesco.org/en/articles/imminent-risk-global-water-crisis-warns-un-world-water-development-report-2023

বাংলাদেশের দুটি খবর দেখুন:
https://www.prothomalo.com/world/usa/wtmoeja6ht
https://www.kalerkantho.com/online/world/2023/03/22/1263595

হাজার হাজার বছর আগে, মারিয়ামের পুত্র ঈসা বলল, আল্লাহুম্মা আমাদের রব (قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللهم رَبَّنَآ), আমাদের জন্য অবতীর্ণ করুন (اَنْزِلْ عَلَيْنَا) আকাশ থেকে মায়িদাহ/কিতাব (مَاۤىِٕدَةً مِّنَ السَّمَاۤءِ) যা হবে আমাদের জন্য ঈদান/জলাধার (تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا) পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের পরবর্তীদের জন্য এবং আপনার একটি নিদর্শন (لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ); আর আমাদেরকে রিজিক/জীবনোপকরণ দিন আর আপনিই সর্বোত্তম আর-রজিকিন/রিজিকদাতা (وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ)। (৫:১১৪)

আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টির মত কিতাব পাঠানোর দোয়া করাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি? সেই প্রাচীন বেথেলহাম বা মরুময় এলাকায় আর কি হতে পারে এরচেয়ে দামি !!

এ কারণেই হাওয়ারিগণ তাদের মায়িদাহ্/কিতাব প্রত্যাশার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, মায়িদাহ বা কিতাব প্রাপ্তির ফলে তাদের মন সুপেয়, সংরক্ষণযোগ্য বৃষ্টির পানি মতো হবে যদি কিতাব অবতীর্ণ (يُنَزِّلَ) হয়।

১. তারা কিতাবের বিধান গুলো আত্মস্থ করবে (نَّأْكُلَ مِنْهَا)
২. যার ফলে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে/মন জুড়াবে (تَطْمَىِٕنَّ قُلُوْبُنَا) এবং
৩. এ বিষয়ে কিতাবের তারা সাক্ষী দাতা হবে। (ٱلشَّٰهِدِينَ)।

অর্থাৎ,
মায়িদাহ (مائدة) অর্থ টেবিল ভর্তি খাবার বা খাদ্য ভর্তি ডালা নয়, তা আকাশ থেকেও আসে না। মায়িদাহ (مائدة) অর্থ: কিতাব /বিধানাবলী যা পানযোগ্য ও সংরক্ষণ যোগ্য সুপেয় অঝোর ধারায় বৃষ্টি মত।
পাশাপাশি, ঈদান (عِيدًا) শব্দের অর্থ: জলাধার বা water reserve. নবী ও রসুল ঈসা আ.এর সেই বিশাল কিতাবের বিধান এখনো কুরআনে জলাধারার মত আছে। যেহেতু তিনি “পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের পরবর্তীদের জন্য এবং আপনার একটি নিদর্শন (لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ)” চেয়েছিলেন।

এই আয়াতে ঈসা নবীর প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে আকাশ থেকে (من السماء) মাইদাতান (مَاۤىِٕدَةً), যা হবে ঈদান এবং যার ধারাবাহিকতায় আসবে সর্বোত্তম রিজিকদাতার পক্ষ থেকে রিজিক/জীবনোপকরণ (ارْزُقْنَا)।

এই বিষয়টি ২নং সুরাতেও আছে।

Al-Baqarah ২:২২

الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً ۪ وَّاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।

২:২২… তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন আর তার সাহায্যে উৎপন্ন করেছেন নানা রকম ফল-ফলাদি তোমাদের জন্যে রিজিক/জীবনোপকরণ
(وأنزل من السماء ماء فأخرج به من الثمرات رزقا لكم)।

এ ছাড়াও আকাশ থেকে আসে আযাব।
Al-Baqarah ২:৫৯

فَبَدَّلَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا قَوْلًا غَيْرَ الَّذِيْ قِيْلَ لَهُمْ فَاَنْزَلْنَا عَلَي الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا رِجْزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
অতঃপর যালেমরা কথা পাল্টে দিয়েছে, যা কিছু তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল তা থেকে। তারপর আমি অবতীর্ণ করেছি যালেমদের উপর আযাব, আসমান থেকে, নির্দেশ লংঘন করার কারণে।

২:৫৯ আকাশ থেকে তাদের উপর নাযিল করলাম আযাব, কারণ তারা করেছিল ফাসেকি
(فأنزلنا على الذين ظلموا رجزا من السماء)

Al-Baqarah ২:১৬৪

اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِيْ تَجْرِيْ فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ مَّآءٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَآبَّةٍ ۪ وَّتَصْرِيْفِ الرِّيٰحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।

২:১৬৪…..আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেন আর তা দ্বারা যে মৃত্যুর পর জমিনকে জীবিত করেন…
. (وما أنزل الله من السماء من ماء فأحيا به الأرض بعد موتها)
An-Nisa’ ৪:১৫৩

يَسْـَٔلُكَ اَهْلُ الْكِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَيْهِمْ كِتٰبًا مِّنَ السَّمَآءِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰۤي اَكْبَرَ مِنْ ذٰلِكَ فَقَالُوْۤا اَرِنَا اللّٰهَ جَهْرَةً فَاَخَذَتْهُمُ الصّٰعِقَةُ بِظُلْمِهِمْ ۚ ثُمَّ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنٰتُ فَعَفَوْنَا عَنْ ذٰلِكَ ۚ وَاٰتَيْنَا مُوْسٰي سُلْطٰنًا مُّبِيْنًا

আপনার নিকট আহলে-কিতাবরা আবেদন জানায় যে, আপনি তাদের উপর আসমান থেকে লিখিত কিতাব অবতীর্ণ করিয়ে নিয়ে আসুন। বস্তুতঃ এরা মূসার কাছে এর চেয়েও বড় জিনিস চেয়েছে। বলেছে, একেবারে সামনাসামনিভাবে আমাদের আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। অতএব, তাদের উপর বজ্রপাত হয়েছে তাদের পাপের দরুন; অতঃপর তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ-নিদর্শন প্রকাশিত হবার পরেও তারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল; তাও আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং আমি মূসাকে প্রকৃষ্ট প্রভাব দান করেছিলাম।

৪:১৫৩ তে অবিশ্বাসীরা আকাশ থেকে কিতাব অবতীর্ণ করার দাবি জানায়!

এই ধারাবাহিকতায় ৫নং সুরাতে মায়িদাতান /কিতাব নাযিলের কথা জানা যায়।

এবার দেখা যাক,
আকাশ থেকে (السماء) বা আস-সামায়ি থেকে কি কি নাযিল হয়:

৭:৯৬ (بركات من السماء) আকাশ থেকে কিতাব/ বরকত সময় কিতাব/কল্যাণ।
৭:১৬২ (رجزا من السماء) আকাশ থেকে শাস্তি; ২৯:৩৪
৮:৩২ (حجارة من السماء) আকাশ থেকে পাথর
৬:৯৯ (من السماء ماء) আকাশ থেকে মা/ পানি, ১৩:১৭, ১৪:৩২, ১৫:২২, ১৬:১০, ৬৫, ২০:৫৩, ২২:৬৩, ২৩:১৮, ২৫:৪৮, ২৭:৬০, ২৯:৬৩, ৩০:২৪, ১০:২৪
১০:৩১ (يرزقكم من السماء) আকাশ থেকে রিজিক; ২:২২, ২৭:৬৪
১৫:১৪ (بابا من السماء) আকাশে আছে দরজা
১৭:৯৫ (من السماء ملكا رسولا) আকাশ থেকে আসে রসুল মালাক
১৮:৪০ (حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاۤءِ) আকাশ থেকে বিপর্যয়
২৪:৪৩ (النور) আকাশ থেকে বিপর্যয় আসার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে
২৬:৪ (نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَاۤءِ اٰيَةً) আকাশ থেকে আয়াত/নিদর্শন অবতীর্ণ হয় বা হতে পারে

এবার সংরক্ষণ করা (يُعِيْدُ) বা ইয়ুঈদু সম্পর্কিত বাকি আয়াত গুলোর সরল বঙ্গানুবাদ দেখুন।
Yunus ১০:৪

اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيْعًا ؕ وَعْدَ اللّٰهِ حَقًّا ؕ اِنَّهٗ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ لِيَجْزِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ بِالْقِسْطِ ؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌۢ بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, তিনিই সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার পুনর্বার তৈরী করবেন তাদেরকে বদলা দেয়ার জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে ইনসাফের সাথে। আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের পান করতে হবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করতে হবে যন্ত্রনাদায়ক আযাব এ জন্যে যে, তারা কুফরী করছিল।

১০:৪ তাঁরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন (اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيْعًاۗ); আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মহাসত্য (وَعْدَ اللّٰهِ حَقًّاۗ); নিশ্চয়ই তিনি আবির্ভূত করেন/অস্তিত্ব দেন/originates সৃষ্টিকে (اِنَّهٗ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ), তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) যাতে প্রতিফলন দেওয়া যায় যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে ন্যায্যতার সঙ্গে
(يَجْزِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ بِالْقِسْطِۗ);

আর যারা অস্বীকার/অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য উত্তপ্ত পানি ও বেদনাদায়ক শাস্তি
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌ ۢ) যেহেতু তারা অস্বীকার করতো (بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ)।
Yunus ১০:৩৪

قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ ؕ قُلِ اللّٰهُ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ فَاَنّٰي تُؤْفَكُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
বল, আছে কি কেউ তোমাদের শরীকদের মাঝে যে সৃষ্টি কে পয়দা করতে পারে এবং আবার জীবিত করতে পারে? বল, আল্লাহই প্রথমবার সৃষ্টি করেন এবং অতঃপর তার পুনরুদ্ভব করবেন। অতএব, কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছে?

১০:৩৪ বলো তোমাদের শরিকদের মধ্যে কে আবির্ভাব ঘটায়/সূচনা করে/originates কোনো সৃষ্টির
(قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَاۤىِٕكُمْ مَّنْ يَّبْدَؤُا الْخَلْقَ)
তারপর তা সংরক্ষণ করে (ثُمَّ يُعِيْدُهٗۗ); বলো আল্লাহই আবির্ভাব ঘটান কোনো সৃষ্টির
(قُلِ اللّٰهُ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ)
তারপর তা সংরক্ষণ করেন
(ثُمَّ يُعِيْدُهٗ)
অতএব কিভাবে তোমরা বিচ্যুত হও
(فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ)!

১৭:৫১ অথবা তোমাদের অন্তরের মধ্যে তা হতে বড় কোনো সৃষ্টি
(اَوْ خَلْقًا مِّمَّا يَكْبُرُ فِيْ صُدُوْرِكُمْ ۚ);
অতঃপর তারা বলবে, কে আমাদেরকে সংরক্ষণ করবে?
(فَسَيَقُوْلُوْنَ مَنْ يُّعِيْدُنَاۗ)
জানিয়ে দাও, যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন
(قُلِ الَّذِيْ فَطَرَكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍۗ)
; অতঃপর তারা তোমার দিকে মাথা গুলো নাড়বে
(فَسَيُنْغِضُوْنَ اِلَيْكَ رُءُوْسَهُمْ)
আর বলবে, তা কখন?
(وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هُوَۗ)
জানিয়ে দাও, ‘সম্ভবত তা নিকটবর্তী
(قُلْ عَسٰٓى اَنْ يَّكُوْنَ قَرِيْبًا)।

Al-Kahf ১৮:২০

اِنَّهُمْ اِنْ يَّظْهَرُوْا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوْكُمْ اَوْ يُعِيْدُوْكُمْ فِيْ مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوْۤا اِذًا اَبَدًا
প্রচলিত অনুবাদ
তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।
সঠিক অনুবাদ
১৮:২০ নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পর্কে তারা যদি জানতে পারে তারা তোমাদের পাথর মারবে (اِنَّهُمْ اِنْ يَّظْهَرُوْا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوْكُمْ)

অথবা তোমাদের ধরে রাখবে (সংরক্ষণ করবে) (اَوْ يُعِيْدُوْكُمْ) তাদের দলের/মতের/গোষ্ঠীর মধ্যে (فِيْ مِلَّتِهِمْ) এবং কখনো না- তোমরা কখনও সফল হবে না
(وَلَنْ تُفْلِحُوْٓا اِذًا اَبَدًا)!

২৭:৬৪ অথবা কে সৃষ্টিগুলোর আবির্ভাব ঘটান
(اَمَّنْ يَّبْدَؤُا الْخَلْقَ)
তারপর সংরক্ষণ করেন
(ثُمَّ يُعِيْدُهٗ)
আর কে তোমাদের জীবিকা দেন আকাশ থেকে ও পৃথিবীতে
(وَمَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَاۤءِ وَالْاَرْضِۗ)
আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহ আছে?
(ءَاِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ۗ)
বলো, নিয়ে আসো তোমাদের প্রমাণ
(قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ)
যদি তোমরা সত্যবাদী হও
(اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ)!

২৯:১৯ তারা কি খেয়াল করে না আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টিগুলোর আবির্ভাব ঘটান
(اَوَلَمْ يَرَوْا كَيْفَ يُبْدِئُ اللّٰهُ الْخَلْقَ)
তারপর তা সংরক্ষণ করেন
(ثُمَّ يُعِيْدُهٗ ۗ)
ঘটান, নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ
(اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللّٰهِ يَسِيْرٌ)।

৩০:১১ আল্লাহ সৃষ্টির আবির্ভাব ঘটান
(اَللّٰهُ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ)
তারপর তা সংরক্ষণ করেন
(ثُمَّ يُعِيْدُهٗ)
এরপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন
(ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ)।

৩০:২৭ আর তিনিই যিনি আবির্ভাব ঘটান সৃষ্টিগুলোর
(وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ)
তারপর তা সংরক্ষণ করেন
(ثُمَّ يُعِيْدُهٗ)
এবং তাঁর কাছে তা সহজতর
(وَهُوَ اَهْوَنُ عَلَيْهِۗ);
এবং আকাশ ও যমিনে তাঁরই জন্য সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত
(وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَعْلٰى فِى السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِۚ)
আর তিনি মহা-পরাক্রমশালী মহা-প্রজ্ঞাবান (وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ ࣖ)!

৩৪:৪৯, ৫০ ঘোষণা করো, মহা-সত্য এসে গেছে
(قُلْ جَاۤءَ الْحَقُّ)
আর বাতিলের উদ্ভব হবে না
(وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ)
আর না-হবে সংরক্ষণ
(وَمَا يُعِيْدُ)!
জানিয়ে দাও, যদি আমি পথভ্রষ্ট-বিভ্রান্ত হই (قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ)
তবে তা শুধুমাত্র আমার নিজের বিভ্রান্তি/ভ্রষ্টতা
(فَاِنَّمَآ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِيْۚ);
আর যদি সুপথ পাই
(وَاِنِ اهْتَدَيْتُ)
তবে তা আমার কাছে আমার রবের অনুপ্রেরণা/ওহি
(فَبِمَا يُوْحِيْٓ اِلَيَّ رَبِّيْۗ)
; নিশ্চয়ই তিনি খুব কাছে থেকে শোনেন
(اِنَّهٗ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ)!

৭১:১৭, ১৮, ১৯, ২০ আর আল্লাহ তোমাদের বর্ধিত করেছেন
(وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ)
পৃথিবীতে সঠিক-বর্ধন
(مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًاۙ)
; তারপর তাতে সংরক্ষণ করেন
(ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا)
এবং তোমাদের বের করবেন সম্পূর্ণ-বাহির (وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا);
আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন সম্প্রসারিত
(وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًاۙ )!
তোমরা যেন চলতে পারো তাতে প্রশস্ত পথ-ঘাটে
(لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا ࣖ)!

৮৫:১৩ নিশ্চয়ই তিনি আবির্ভাব ঘটান/অস্তিত্ব দেন
(اِنَّهٗ هُوَ يُبْدِئُ)
এবং সংরক্ষণ করেন
(وَيُعِيدُ)।

১০ঃ৪ এ মানুষকে সৃষ্টি করে পুনরাবৃত্তি করেন অর্থ বুঝতে হলে ৫৬ঃ৬০-৬১ পড়তে হবে। আখিরাত ও আজিলাত শব্দের অর্থ বুঝতে হবে ৭৫ঃ২০-২১।

মানুষের নফসও প্রকৃতির সবকিছুর মতই পুনরাবৃত্ত হয়। অর্থাৎ মানুষের নফসকে বিভিন্ন আকৃতিতে (৫৬ঃ৬১) পুনঃপুনঃ সুযোগ দেয়া হয় নফসে মুতমাইন্না হবার। নফসে মুতমাইন্না না হওয়া পর্যন্ত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (৪৮ঃ২৭-৩০) মুতমাইন্না মানে প্রশান্ত অনুবাদ করা হয়েছে, যা ভুল। এর অর্থ পরিপূর্নভাবে সংশোধিত। আদমের সময় যে নফস গুলো বৃক্ষের শাখা প্রশাখার ন্যায় বিভাজিত হয়ে শিরক করেছিল।

বর্তমানে চলছে আজিলাত বা অস্থিরতা। মানুষের নফসের development এখনও অস্থির।

ঈদান শব্দটা পুনরাবৃত্ত এর সমার্থক। কারণ জলাধার এমন একটি জিনিস যা পুনরায় বা ধারাবাহিক ভাবে পূরণ (Refill) না করলে তা শুকিয়ে যায়। আর যেন তেন পানি হলেই তা দিয়ে সেচ কাজ করা যায় না। লবনাক্ততা থাকলে সে পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাই বৃষ্টির মাধ্যমে বারবার সে জলাধার Refill করতে হয়। ঠিক তদ্রুপ ভাবে নিজকে পুনঃপুনঃ সংশোধের জন্য কিতাব/বিধান প্রয়োজন ছিল সেইটাই আবেদন করেছেন ইসা।

উক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারবো যে প্রচলিত ঈদের নামে যা হচ্ছে তা কুরআনের বিপরীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *