কুরবানি পর্ব -৮

আলোচ্য আয়াত ২২ঃ৩৪-৩৬

আয়াত ২২ঃ৩৬

২য় অংশঃ

প্রচলিত অনুবাদ
-যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় (ফা ইযা ওয়াযাবাত জুনুবুহা)

  • তখন তা থেকে তোমরা আহার কর (ফা কুলু মিনহা)
  • এবং আহার করাও যে কিছু চায় না তাকে (ওয়া আতিমুল ক্বানি’আ)
  • এবং যে চায় তাকে (ওয়াল মু’তারা)
  • এমনিভাবে আমি এগুলোকে বশীভূত করে দিয়েছি (কাযালিকা সাখারনাহা)
    -তোমাদের (লাকুম)
    -যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (লা আললাকুম তাশকুরুনা)

-ফা ইযা ওয়াযাবাত জুনুবুহাঃ

এবং (ওয়া) যখন তারা আকারে বড় হয় (জাবাত বা জিবতি শব্দটা পাবেন ৪ঃ৫১ তে, যার অর্থ তাগুত হওয়া শক্তিশালী হওয়া বা আকারে বড় হওয়া।

পরের দুটো টার্মের প্রচলিত অনুবাদ মোটামুটি ঠিক আছে।

তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও তাদের যারা অভাব প্রকাশ করেনা এবং যারা সাহায্য প্রার্থী।

-কাযালিকা সাখারনাহাঃ

সাখারা শব্দের অর্থ হলো কারো অধীনে কাজ করা, বা অধীনস্থ। প্রচলিত অনুবাদে বশীভুত শব্দটা যায় না।

-তাশকুরুনাঃ

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

তাহলে ২২ঃ৩৬ ২য় অংশে সঠিক অনুবাদ “যখন তারা আকারে বড় হয়,তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও তাদের যারা অভাব প্রকাশ করেনা এবং যারা সাহায্যপ্রার্থী। এমনিভাবে তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”

উল্লেখ্য বোবা প্রাণীদের কিভাবে আহার করবেন সেটা আপনার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পশু জবাই করে খাবেন, নাকি অন্য কোনো উপায়ে পশুকে হত্যা করে খাবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আল্লাহর নামে বলি দেয়া/ জবাই করা প্যাগান রিচুয়াল।

আবার অন্য উপাস্যের নামে উৎসর্গীকৃত পশুও হারাম ৫ঃ৩। তার মানে এই নয় যে পশু জবাই বা হত্যার সময় প্যাগান রীতির মত আল্লাহর নাম নিতে হবে বা আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে হবে। এতে যেটা হচ্ছে তা হলো তারা আল্লাহকে প্যাগানদের উপাস্য গুলোর লেভেলে নামিয়ে এনেছেন । আল্লাহ কুরআনে কোথাও বলেননি যে পশু জবাই করার সময়ে আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করো। বলার কথাও না।

আল্লাহ পশুদের শরীরে নিয়ামত দিয়েছেন, সেখান থেকে আহার করবেন। শুধুই একটা শর্ত দিয়েছেন ২২ঃ৩৬ এ যে পশুগুলো যেন আকারে বড় হয়/পরিণত হয়। তাহলেই সেটা হালাল হবে।
৫ঃ৯৫ তে অপরিণত পশু হত্যার হুকুম হারাম।

তাহলে পূর্ণ অনুবাদটা দাঁড়াচ্ছেঃ

২২ঃ৩৪ “এবং প্রত্যেক উম্মাতের জন্য
নির্ধারণ করেছি সংশোধনের বিধান
যাতে তারা স্মরণ করে আল্লাহর গুণাবলি
যার মাধ্যমে তারা রিযিক গ্রহণ করে
বোবা প্রাণীদের নিয়ামত থেকে
আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই
তোমরা তাঁর প্রতি সমর্পন করো
এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও

২২ঃ৩৫ এবং তাদেরকে (সুসংবাদ দাও) যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে (যুকিরা) worried/চিন্তাগ্রস্হ (ওয়াজিলাত) থাকে এবং তাদেরকে যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্যশীল থাকে এবং তাদেরকে যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদেরকে যারা তাদের রিযিক্বকে সহজলভ্য রাখে (ইউনফিক্বুনা)

২২ঃ৩৬ এবং তাদের (বোবা প্রাণীদের) শরীর গুলোতে তোমাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা থেকে তোমাদের জন্যে মঙ্গল।
সুতরাং তোমরা আল্লাহর গুণাবলি স্মরণ করো বিস্তারিত ভাবে/তা বিস্তৃত করার মাধ্যমে। যখন তারা পরিণত/আকারে বড় হয়, তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও তাদের যারা অভাব প্রকাশ করেনা এবং যারা সাহায্য প্রার্থী। এমনি ভাবে তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

পুরো কনটেক্সটে জবাই, আল্লাহর নামে কুরবানি ইত্যাদি শব্দগুলোই নেই। আর প্রচলিত পার্সিয়ান অনুবাদ অনুসারে (২২ঃ৩৪-৩৬) ক্বাবার পাশে লাইন ধরে আল্লাহর নাম নিয়ে পশু জবাইয়ের কেচ্ছা কাহিনী তো একেবারেই নেই। সবই বানোয়োট।

সবসময় বিবেককে প্রশ্ন করবেন “যে বিধান প্যাগানরা পালন করে, সে বিধান কি একত্ববাদের ঘোষণা করা আল্লাহর কাছে থেকে আসতে পারে?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *