কুরবানি- ০৬
সৃষ্টিকর্তার নামে পশু জবাই এর মত প্যাগান রিচুয়াল কি আল্লাহর আদেশ হতে পারে?
আসেন দেখি আল্লাহর আয়াত নিয়া পার্সিয়ানরা কি কি খেলা খেলছে!
প্রচলিত অনুবাদঃ ২২ঃ৩৪
“এবং প্রত্যেক উম্মাতের জন্য (ওয়া লিকুল্লি উম্মাতিন)
নির্ধারণ (জা আলনা) করেছি
কুরবানীর (??) বিধান (মানসাকান)
যাতে তারা উচ্চারণ করে (লি ইয়াজকুরু)
আল্লাহর নাম (ইসমা আল্লাহি)
জবাই (??) করার সময় (আলা মা রাযাক্বাহুম)
ওই পশুদের (মিন বাহিমাতিল আনামি)
আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই (ফা ইলাহুকুম ইলাহুন ওয়াহিদুন)
তোমরা তাঁর আজ্ঞাধীন হও (ফালাহু আসলিমু)
এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও (ওয়া বাশিরিন মুখবিতিনা)
আমি ব্র্যাকেটে দেয়া সেসব শব্দ সিরিয়ালি বিশ্লেষণ করবো, যেগুলোর অনুবাদ নিয়ে আমার আপত্তি রয়েছে।
মানসাকানঃ
ধাতু নুন-সিন-কাফ। আদি/মূল অর্থঃ ধৌতকরা ও পরিষ্কার করা। ভাবার্থে “কোনো কিছুকে সংশোধন করা।”
মানসাকান শব্দটা অন্য কোনো আয়াতেই (২ঃ১২৮, ২ঃ২০০) “কুরবানির বিধান” হিসাবে অনুবাদ করে নাই। তবে এই শব্দটিকে “Ritual” বা “Act of worship” হিসাবে পার্সিয়ান অনুবাদ করেছে সবখানেই।
ইয়াজকুরুঃ
যিকর এর verb. যিকর হলো সতর্ক বার্তা/Reminder বা কুরআন/কিতাব। ইয়াজকুরু মানে কোনো ভাবেই উচ্চারণ করা হয় না, বরং Remind বা স্মরণ করা বলা যায়।
ইসমা আল্লাহিঃ
আল্লাহর গুণাবলি। “আসমাউল হুসনা” মানে আল্লাহর সুন্দর গুণাবলি। আল্লাহর প্রতিনিধি (২ঃ৩০) হতে হলে মানুষকে আল্লাহর গুণাবলি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। যেমন আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন তাই তিনি চান আমরা সালেহীন হই, চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে সমাজে ভারসাম্য রক্ষা করি। আল্লাহ ন্যায় বিচারক, তাই তিনি চান আমরা সমাজে ওজন প্রতিষ্ঠা/ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বিনয়ী, তাই তিনি চান আমরাও বিনয়ী ও নিরহংকারী হই।
আলা মা রাযাক্বাহুমঃ
এখানে জবাই (জবেহ) শব্দটা কোথা থেকে এলো? রাযাক্বাহুম হলো রিযিক এর verb, রিযিক গ্রহণ করা। এই অংশের অর্থ হলো “ যার মাধ্যমে তারা রিযিক গ্রহণ করে (আলা মা, preposition: by which)
মিন বাহিমাতিল আনামিঃ
এই অংশে বাহিমাতির ধাতু বা-হ্বা-মিম যার আদি/মূল অর্থ দূর্বোধ্য বা যা বোঝা মুশকিল। তবে ভাবার্থে “বোবা প্রাণী” যার ভাষা দুর্বোধ্য, আমরা বুঝিনা।
আনামি এর ধাতু নুন-আইন মিম, যেখান থেকে উৎপন্ন আরেক শব্দ হলো নিয়ামত (৪৪ঃ২৭)।
১৬ঃ৮৭ঃ “এরপর তিনি সম্পূর্ণ করলেন তার অনুগ্রহ/favour (নিয়ামাত) তোমার প্রতি”
অর্থাৎ “মিন বাহিমাতিল আনামি” অর্থ “বোবা প্রাণীদের নিয়ামত/অনুগ্রহ/favour থেকে”
তাহলে দেখা যাচ্ছে পার্সিয়ানরা কম চেষ্টা করেনাই অসংখ্য গোঁজামিল দিয়া তাদের বলি দেবার প্যাগান রিচুয়াল চাপায় দেয়ার। যে আয়াতে কুরবানি শব্দ নাই, জবেহ শব্দ নাই, সেখানে সেগুলো জোর করে ঢুকানো মানে আল্লাহর আয়াত নিয়ে খেল তামাশা করা।
তাহলে সঠিক অনুবাদটি হবেঃ
“এবং প্রত্যেক উম্মাতের জন্য (ওয়া লিকুল্লি উম্মাতিন)
নির্ধারণ (জা আলনা) করেছি
সংশোধনের বিধান (মানসাকান)
যাতে তারা স্মরণ করে (লি ইয়াজকুরু)
আল্লাহর গুণাবলি (ইসমা আল্লাহি)
যার মাধ্যমে তারা রিযিক গ্রহণ করে (আলা মা রাযাক্বাহুম)
বোবা প্রাণীদের নিয়ামত/অনুগ্রহ/favour থেকে (মিন বাহিমাতিল আনামি)
আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই (ফা ইলাহুকুম ইলাহুন ওয়াহিদুন)
তোমরা তাঁর প্রতি সমর্পন করো (ফালাহু আসলিমু)
এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও (ওয়া বাশিরিন মুখবিতিনা)
এই আয়াতের অর্থ একেবারেই পানির মত পরিষ্কার।
আল্লাহ প্রত্যেক সম্প্রদায়কে সংশোধনের বিধান দিয়েছেন যাতে আমরা নিজেদের সংশোধন করে তার গুণাবলি স্মরণ/অর্জন করি, যে আল্লাহর মাধ্যমে/অনুগ্রহে আমরা রিযিক পাই বোবা প্রাণীদের নিয়ামত থেকে। বোবা প্রাণীদের থেকে আমরা দুধ, চামড়া, মাংস ইত্যাদি রিযিক পাই আল্লাহর আমাদের অনুগ্রহ করেন বলে।
অর্থাৎ
আল্লাহ এখানে প্রত্যেক মানুষকে নিজেকে সংশোধন করে আল্লাহর গুণাবলি স্মরণ/অর্জন/যিকর করতে বলেছেন এবং তার অনুগ্রহে পাওয়া বোবা প্রাণীদের রিযিক হিসেবে পাবার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকারের মাধ্যমে বিনয়ী হবার উপদেশ দিচ্ছেন। কারণ আয়াতের শেষ অংশেই আছে “বিনয়ীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।” এখানে কোথাও পশু জবাই এর কথা বলা হচ্ছেনা।
আল্লাহ আমাদেরকে এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়কে সংশোধনের বিধান হিসাবে কি দিয়েছিলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর ২ঃ১৮৩ তে আছে। “আমি তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দিয়েছি, যা দিয়েছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তীগণের জন্য, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।”
আর সিয়াম যে সংশোধন মূলক বিধান তা এসব আয়াতে আছে ৪ঃ৯২, ৫ঃ৮৯, ৫ঃ৯৫। আমার লেখা সিয়ামের পোস্টেও পাবেন যে মুমিনদের জন্য এবং অতীতেও সিয়াম ছিল নিজেকে সংশোধনের বিধান (৩ নং সিয়াম)।
মুত্তাকী
আর সিয়ামের উদ্দেশ্য মুত্তাকি হওয়া। মু্ত্তাকি শব্দের অর্থ হলো ;
১.আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করা।
২.আল্লাহর গুণাবলি অর্জন করা।
৩.নিখুঁত মানুষ (প্রতিনিধি) হওয়া (২ঃ২-৩)।
৪.এবং নিজেকে সংশোধনের মাধ্যমেই নিখুঁত মানুষ হওয়া যায়, আল্লাহর গুণাবলী অর্জন/স্মরণ করা যায় (২২ঃ৩৪)