দায়মুক্ত বা নির্দায় হবার কুরআনী শিক্ষা
নির্দায় হবার সাধারণ নীতি
পুরো কুরআন প্রতিটি ব্যক্তি সত্তাকে উদ্বুদ্ধ করে সংশোধিত পবিত্র হয়ে শিরক মুক্ত বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারী মুসলিম হিসেবে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তনে। কেউ কারও দায় নেয় না এবং নেবে না – এটা সৃষ্টির সার্বজনীন নীতি।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ-
হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর তোমাদের নিজেদের দায় বর্তায় (তোমরা নিজেদের চিন্তা কর)। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে বলে দেবেন, যা কিছু তোমরা করতে। -৫:১০৫
আর কিয়ামতে সবাই আল্লাহর সমীপে একাকী অবস্থায় হিসাব দিতে হাজির হবে।
وَكُلُّهُمْ آَتِيهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَرْدًا-
আর তাদের সকলকেই কিয়ামতের দিনে তাঁর কাছে আসতে হবে নিঃসঙ্গ অবস্থায়। -১৯:৯৫
কেননা আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজের বোঝা বহন করব, কেউ আমাদের বোঝা বহন করে দেবে না।
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى-
কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। -৬:১৬৪, ১৭:১৫, ৩৫:১৮, ৩৯:৭, ৫৩:৩৮
একই কথা আল্লাহ শেষনবীকে বলতেও ছাড়েন নাই।
শেষনবীকে নির্দায় হবার নির্দেশ
وَإِنْ كَذَّبُوكَ فَقُلْ لِي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ أَنْتُمْ بَرِيئُونَ مِمَّا أَعْمَلُ وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تَعْمَلُونَ-
আর যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে বলো, আমার জন্য আমার কর্ম, আর তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদের দায়দায়িত্ব নেই আমার কর্মের উপর এবং আমারও দায়দায়িত্ব নেই তোমরা যা কর সেজন্য। -১০:৪১
مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ-
তোমার উপরে তাদের হিসাবপত্রের বিন্দুমাত্র দায়দায়িত্ব নেই, আর তোমার হিসাবপত্রের কোনো দায়দায়িত্বও তাদের উপরে নেই। -৬:৫২
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُبِينٌ-
তুমি বলো- আমি রাসূলগণের মধ্যে প্রারম্ভিক নই, আর আমি ধারণা করতে পারি না আমার প্রতি কি (আচরণ) করা হবে এবং তোমাদের (সাথে কি ব্যবহার করা হবে সে) সম্পর্কেও নয়। আমি শুধু অনুসরণ করি আমার কাছে যা প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে তা বৈ তো নয়, আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী ব্যতীত আর কিছুই নই। -৪৬:৯
শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ কোনভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করলে তাঁর সকল আমল বরবাদ হয়ে যেত বলে হুমকি আছে কুরআনে। অর্থাৎ রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন, নবীর সারা জীবনের সকল আমলে ছালেহ ইত্যাদি একটি মাত্র অপরাধের কারণে পন্ড হয়ে যেত। কী ভয়াবহ কথা- যে ব্যাপারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে আল্লাহ কোন দ্বিধা করেন নাই।
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ-
আর তোমার কাছে ও তোমার আগে যারা ছিল তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে- যদি তুমি আল্লাহর শরিক স্থির কর তাহলে তোমার কাজকর্ম নিশ্চয়ই নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি নিশ্চয়ই হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যেকার। -৩৯:৬৫
সম্পূর্ণ একই বক্তব্য ১৮ জন নবীর নাম উল্লেখ করে সূরা আন’আমের ৮৩-৯০ আয়াতে বলা হয়েছে। তাই প্রসিদ্ধ সব ইমামগণের দোহাই দিয়ে আমরা পার পাব না, যদি আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত “চক্ষু, কর্ণ, অন্তঃকরণকে” কাজে লাগিয়ে আল্লাহ তাঁর মহিমান্বিত কুরআনে নিজে কী বলেছেন তা যাচাই না করি।
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَا كَسَبْتُمْ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ-
সে সম্প্রদায় অতীত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদের জন্যে এবং তোমরা যা করছো, তা তোমাদের জন্যে। আর তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে না ওরা যা করছিল সে সন্বন্ধে। -২:১৩৪, ২:১৪১
দুনিয়ার বাকী যাবতীয় বিষয় বোঝার জন্য সকল সময়-শ্রম-নিষ্ঠা-অর্থ ব্যয় করতে আমরা কার্পণ্য করি না; কুরআনের বেলায় কেন নিজে সেটা না করে অন্যদের উপর ভরসা করে থাকি? তাই অতীতে বিখ্যাত নামকরা ব্যক্তিবর্গ কে কী বলে গেছেন, তার উপর ভিত্তি করে আমরা নিজেরা আমাদের ঝুঁকি নিতে পারি না। আমরা আমাদের কাজের জন্য জিজ্ঞাসিত হব। নিজেরা চাইলেই যেটা যাচাই করতে পারি, সেটা না করে কারও অন্ধ অনুকরণের বিষয়ে কুরআনে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا-
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পেছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। -১৭:৩৬
আল কুরআনকে বলা হয়েছে ‘বাছায়িরু লিন্নাস’, মানে মানবজাতির চক্ষু উন্মোচনকারী; আরও বলা হয়েছে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী ‘ফুরকান’ –
قَدْ جَاءَكُمْ بَصَائِرُ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا وَمَا أَنَا عَلَيْكُمْ بِحَفِيظٍ-
নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে জ্ঞান-দৃষ্টি এসেছে, কাজেই যে কেউ দেখতে পায়, সেটি তার নিজের আত্মার জন্যে, আর যে কেউ অন্ধ হবে, সেটি তার বিরুদ্ধে যাবে। আর আমি তোমাদের উপরে তত্ত্বাবধায়ক নই। -৬:১০৪ (আরও -৭:২০৩, ৪৫:২০)
আমরা যাদের উপর আস্থা রেখে আমাদের ধর্মীয় জীবনকে রচনা করছি, সমাজের সেইসব দ্বীনের ‘আহবার-রূহবানরা’ যে আমাদের ঈমান-আমল নষ্ট করে দিচ্ছে কিনা, তা কে আমাদের ধরিয়ে দেবে যদি আমরা নিজেরাই উদ্যোগী না হই? কেননা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দই যে সম্পূর্ণ জেনেশুনে (আনতুম তা’লামুন) কুরআনী সত্যকে বাতিল বা মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেয় এবং বহু কুরআনী সত্যকে আমজনতা থেকে লুকিয়ে রাখে (কাতমুন); আবার দ্বীনকে দুনিয়া বাণিজ্যে রূপান্তরিত করে (ছামানান কলিলা)– সেই সকল ভেদ তো কুরআনই আমাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কুরআন মাজীদ কি আমরা যথাযথ ভাবে অধ্যয়ন, অধ্যবসায় (হাক্কা তিলাওয়া) করেছি এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা (তাদাব্বুর, তাফাখ্খুর) করেছি যেভাবে করতে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে?
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآَنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا-
কি! তারা কি তবে কুরআন সন্বন্ধে গভীর চিন্তা-ভাবনা করবে না, না কি হৃদয়ের উপরে সেগুলোর তালাসমূহ রয়েছে? -৪৭:২৪
সকল নবী-রাসূলগণের প্রতি নির্দায় হবার বা দায়মুক্ত থাকার সাধারণ শিক্ষাঃ
قُلْ أَيُّ شَيْءٍ أَكْبَرُ شَهَادَةً قُلِ اللَّهُ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآَنُ لِأُنْذِرَكُمْ بِهِ وَمَنْ بَلَغَ أَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُونَ أَنَّ مَعَ اللَّهِ آَلِهَةً أُخْرَى قُلْ لَا أَشْهَدُ قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ-
তুমি জিজ্ঞেস করো, সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষ্যদাতা কে? বলে দাও, আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আমার প্রতি এ কুরআন অবর্তীর্ণ হয়েছে – যাতে আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এ কুরআন পৌঁছে সবাইকে ভীতি প্রদর্শন করি। তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্যান্য উপাস্যও রয়েছে? তুমি বলে দাও, আমি এরূপ সাক্ষ্য দেব না। বলে দাও, তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই তোমাদের শিরক থেকে মুক্ত বা নির্দায়। -৬:১৯
فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَذَا رَبِّي هَذَا أَكْبَرُ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ-
অতঃপর যখন সূর্যকে (ইবরাহীম) চকচক করতে দেখল, বললঃ এটি আমার রব্ব, এটি বৃহত্তর। অতঃপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যেসব বিষয়কে শরিক কর, আমি সেসব থেকে মুক্ত। -৬:৭৮
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تُجْرِمُونَ-
তারা কি বলে? তুমি কুরআন রচনা করে এনেছো? তুমি বলে দাও, আমি যদি রচনা করে এনে থাকি, তবে সে অপরাধ আমার, আর তোমরা যেসব অপরাধ কর তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। -১১:৩৫
فَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ فَتَكُونَ مِنَ الْمُعَذَّبِينَ * وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ * وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ * فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تَعْمَلُونَ * وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ-
অতএব, তুমি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবে না; করলে শাস্তিতে পতিত হবে। তুমি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও। এবং তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হও। যদি তারা তোমার অবাধ্যতা করে, তবে বলে দাও, তোমরা যা কর, তা থেকে আমি মুক্ত। তুমি ভরসা করো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালুর উপর। -২৬:২১৩-২১৭
إِنْ نَقُولُ إِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ آَلِهَتِنَا بِسُوءٍ قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ-
আমরা বলি নি এ ছাড়া অন্য কিছু যে আমাদের কোনো দেবতা তোমাতে ভর করেছেন খারাপ ভাবে। তিনি (নবী হুদ) বললেন- নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহকে সাক্ষী করি, আর তোমরাও সাক্ষী থেকো যে আমি আলবাৎ সংস্রবহীন তাদের সঙ্গে যাদের তোমরা শরিক কর। -১১:৫৪
শয়তানও কোন দায় নেয় না এবং নিবে না
কেননা শেষবিচারে শয়তানও আমাদের থেকে নিজেকে দায়ভার মুক্ত ঘোষণা করবে – তার অনেক প্রমাণ কুরআনে বিদ্যামান। আমাদের কর্তব্য আল্লাহর দেয়া নেয়ামত চোখ ও আকল প্রয়োগ করে কুরআন থেকে তা দেখে বুঝে নেয়া।
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ-
আর যখন সুদৃশ্য করে দিল শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনাসামনি হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রুতপায়ে পেছন দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, আমি তোমাদের সাথে সংস্রবহীন – আমি দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন। -৮:৪৮
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ-
তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফির হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফির হয়, তখন শয়তান বলে- তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব রব্ব আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করি। -৫৯:১৬
কিয়ামতের ময়দানে মানবজাতির উদ্দেশ্যে শয়তানের চূড়ান্ত ভাষণটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ – অত্যন্ত পরিতাপ আর আফসোসের বিষয় কিয়ামতে ঘটমান শয়তানের এই আসল চেহারা আমাদের জন্য আল্লাহ করুণা করে পৃথিবীতে থাকতেই প্রকাশ করে দিয়েছেন; অথচ আম-মুসলিমকে এই আয়াতগুলো শোনানো হয় না।
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ وَمَا كَانَ لِي عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِنْ قَبْلُ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ-
যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই; এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতিপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরিক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালিম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। -১৪:২২
قَالَ قَرِينُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَكِنْ كَانَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ-
তার সঙ্গী শয়তান বলবেঃ হে আমাদের রব্ব, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথ ভ্রান্তিতে লিপ্ত। -৫০:২৭
তাই শয়তান যেভাবে আমাদের বিষয়ে আমাদের কোন বোঝা বহন করবেনা/ নির্দায়,/ সংস্রবহীন; আমরাও তার বিষয়ে এখনই সংস্রবহীন হবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করি।
لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا-
আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল শয়তান।