কুরআন পাঠ কিংবা শ্রবণে ৮টি জরুরী বিষয় :
(কুরআন গবেষণা ও দর্শনগত বিশ্লেষণ থেকে)
বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক, সুরে কিংবা বেসুরে আমরা সবাই কমবেশী কুরআন পাঠ করতে এবং কুরআন শ্রবণ করতে পছন্দ করি। দেশে বিদেশে রয়েছে অনেক নামী-দামী ক্বারী যাদের সুমধুর কুরআন তেলাওয়াত শুনে আমরা সম্মোহিত হয়ে পড়ি। অনেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনে ঝর ঝর কাঁদতে থাকে, গায়ের
লোম খাড়া হয়ে যায় কুরআন শ্রবণে। অনেক সময় কুরআন না বুঝেও কুরআন শ্রবণে চোখে পানি চলে আসে হৃদয়গ্রাহী সুরের কারণে।
অবশ্য, মুশরিকদের নাম কির্তনেও অশ্রুর বন্যা বয়ে যায় মন্দির গুলোতে। সুর এমনই মোহিনী শক্তির অধিকারী যে, শিরকের কথাগুলোও যদি সুর দিয়ে বলা হয়, কান্নার রোল পড়ে যায়।
কুরআন এ রয়েছে ছন্দের এক অনবদ্য কম্বিনেশন। হাইপার মেট্রিক ছন্দের এক অনন্য, অতুলনীয় গীতিকাব্য হলো কুরআন।
যেভাবেই আমরা কুরআন পাঠ করিনা কেন, কুরআন পাঠ ও শ্রবণের সময় ৮টি জরুরী বিষয়ের উপর অবশ্যই আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে।
নতুবা কুরআন পাঠ কিংবা কুরআন শ্রবণ হবে নিস্ফল।
আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কুরআনের সহি-শুদ্ধ ও সুরেলা উচ্চারণে মনোযোগী হলেও জরুরী ৮টি বিষয়ে উদাসিন। ফলে, কুরআন পাঠ, কুরআন খতম ঠিকই হচ্ছে কিন্তু হেদায়েত হচ্ছে না। কুরআনের নিয়মিত পাঠকরাও কুরআন মানছেন না।
তাই জরুরী ৮টি বিষয় কি কি তা’ বুঝার জন্য আসুন কিছু আয়াত পাঠ করি — সূরা আরাফ, আয়াত ২০৩ – ২০৬:
১.২০৩ > হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে।[শেষ অংশ]
২.২০৪ আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।
৩.২০৫ আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না
৪.২০৬ নিশ্চয়ই যারা তোমার রবের সান্নিধ্যে রয়েছেন, তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহঙ্কার করেন না এবং স্মরণ করেন তাঁর পাওয়ারফুল সত্তাকে; আর তাঁকেই সেজদা করেন/মান্য করেন।
উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে আমরা কুরআন পাঠের ক্ষেত্রে যে ৮টি জরুরী বিষয় পেয়েছি তা’হল–
২০৩ থেকে–
১. ঈমানের সাথে কুরআন পাঠ করতে হবে এ ভাবনা নিয়ে যে, এটা আল্লাহর উত্তম বাণী যা হেদায়েতের পথ নির্দেশ করে। অর্থাৎ কুরআন পাঠ থেকে কি কি হেদায়েতের কথা শিখতে পারছি তা খেয়াল রাখতে হবে।
২০৪ থেকে–
২. কান লাগিয়ে অর্থাৎ গভীর মনোনিবেশের সাথে কুরআন পাঠ বা শ্রবণ করতে হবে।
৩. নিশ্চুপ ভাবে এবং নিরিবিলি পরিবেশে কুরআন পাঠ বা শ্রবণ করতে হবে, যাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
২০৫ থেকে–
৪. কুরআন পাঠকালে নিজের মধ্যে আল্লাহর স্বত্তাকে এমনভাবে স্মরণ করতে যেন, স্বয়ং আল্লাহর পক্ষে থেকে আমরা বাণীগুলো শুনছি অর্থাৎ আমাদের মুখ দিয়ে যেন আল্লাহ নিজেই ডিক্টেশন দিচ্ছেন, আর আমরা শুনছি।
৫. অনুচ্চ স্বরে ক্রন্দনের মাধ্যমে ভীত-সন্ত্রস্ত চিত্তে কুরআন পাঠ করতে হবে যেন গায়ের লোমগুলো কাঁটা দিয়ে ওঠে।
৬. কুরআন পাঠ করতে হবে হুঁসের সাথে ভোরবেলা এবং সন্ধ্যাকালে। অবশ্য অন্য আরো কিছু আয়াতে গভীর রাতে কুরআন পাঠের নির্দেশও আছে এবং গভীর রাতে কুরআন পাঠ আরো বেশী কার্যকর।
২০৬ থেকে–
৭. কুরআন পাঠকালে অবশ্যই মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের সন্নিকটে আছেন এবং তিনি শুনছেন যা কিছু আমরা পাঠ করছি।
৮. কুরআন পাঠ শেষে অহংকার মুক্ত ভাবে পূর্ণ আনুগত্যের সাথে তা অকপটে মেনে নিতে হবে।
এভাবে আত্ম-সমর্পনই হলে প্রকৃত সালাত। সালাতে আমরা যে কুরআন পাঠ করি, তাতে উপরিউক্ত ৮টি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে ইনশা’আল্লাহ আমরা সফল হতে পারব।
সালাতের বাইরে কিংবা ভিতরে যখনই আমরা কুরআন পাঠ করি, আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কুরআন কোন হাল্কা গ্রন্থ নয়। কুরআন এতই ভারী যে, আল্লাহ কুরআনকে সুউচ্চ পাহাড় এবং আকাশের কাছে আমানত রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পাহাড় ও আকাশ কুরআনের ভার বহনে প্রকম্পিত অবস্থায় ফেটে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ে এবং কুরআনের ভার বহন করতে সক্ষম হননি। কিন্তু বোকা মানুষ জাতি আমরা এ ভারী কুরআনের ভার গ্রহন করেছি।(সুরা হাশর)
অথচ, কুরআন পাঠ করছি হাল্কাভাবে।
তাই, উপরিউক্ত ৮টি বিষয় মাথায় রেখে অত্যন্ত সিরিয়াস চিত্তে অর্থ বুঝে কুরআন পাঠ করতে হবে। আর এভাবেই কুরআন পাঠ ও সালাত থেকে আমরা আল্লাহর রহমত ও হেদায়েত লাভ করতে সক্ষম হব ইনশা’আল্লাহ।