সালাত শব্দের সঠিক বিশ্লেষণঃ

( Lughat- ul- Quran, Dictionary of Quran. Volume 1,2,3,4):

“সালাত” শব্দটির আদি মূল (Prime Root) হচ্ছে “সল” (সোয়াদ-লাম), আর ত্রিআক্ষরিক মূল (Triliteral Root) হচ্ছে “সল্লি” (সোয়াদ-লাম-লাম)/(صَلِّ) যার অর্থ “১.অনুসরণ করা/Follow,
২.সংলগ্ন থাকা/Adhere,
৩.সংযুক্ত করা/Link/Connect/Attach,
৪.সম্পর্কিত কারা/Relate,
৫.নিজের মতে মত করানো/Persuade,
৬.দেখভাল করা/আলোচনা করা/Deal,
৭.সাক্ষাৎ করা/Meet,
৮. নিকটে এগিয়ে যাওয়া/Approach,
৯. সহায়তা করা/Support.
যত বড় Word Engineering করেন না কেন,যত নতুন নতুন শব্দের প্রয়োজন হোক না কেন, মূলের (Root) এই অর্থের সাথেই আপনাকে সংলগ্ন থাকতে হবে।

উদাহরণ সহ একটু বুঝিয়ে বলি।
যেমন,

“রিবা” শব্দের আদিমূল (Proto Root) (র-বা) এর অর্থ:
১.শ্বাসরোধ
২.শ্বাসকষ্ট Strangulation/Asthma”,
৩.অতিমূল্যায়ন/Overcharging”.
এখন, Medical Science এর অগ্রগতির ফলে Bronchial Asthma কে একটু আলাদাভাবে চিহ্নিত করার দরকার হলো। তো সেটিকে বলা হলো, “আর-রাবু”। মূল (Root) “রিবা” অর্থ “শ্বাসরোধ বা শ্বাসকষ্ট” থাকার কারণে এই নতুন শব্দ উৎপন্ন করা হয়েছে “মূল (Root)” এর সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে।
আরবি ভাষায়, মূল অর্থ থেকে সরে গিয়ে ইচ্ছামত “নতুন শব্দ” গঠন করা যায় না। কারণ আরবী Semitic Language, আর এই Language এর Natural Feature হচ্ছে, এর সমস্ত শব্দ, তার মূল (Root) থেকেই উৎসারিত।

এবার আসল কথায় আসি। “মুসল্লী” হচ্ছে সালাত সম্পাদনকারী/Salaat Performer. এখানে, Create থেকে যেমন Creator শব্দটি উৎপন্ন হয়,, ঠিক তেমনি সলা থেকে মুসল্লী (Follow-Follower). “মুসল্লী” হচ্ছে রেসের সেই ঘোড়া, যে ঘোড়া, সাবিক/মুযাল্লী/Champion ঘোড়ার পদচিহ্ন (Footsteps/signs) কে অনুসরণ করে (Follow). তো মানুষ রূপ মুসল্লীর Lead এ আছেন আল্লাহ। অতএব, আল্লাহর Footsteps/Signs/আয়াত, যা প্রকৃতিতে (ফি’লী হাদীস হিসেবে), আর কোরআনে (ক্বওলী ও তাক্বরীরি হাদীস হিসেবে) বিদ্যমান, তাকে অনুসরণ করতে হবে।

74/42-43 নম্বর আয়াতে, মুসল্লী তারা, যারা আল্লাহ যেমন রিযিকদাতা, ঠিক তেমনি আল্লাহর পদচিহ্ন অনুসরণ করে (within his ability) অভাবীকে আহার দান করেন।

70/34-35 নম্বর আয়াতে, মুসল্লী তারা, যারা আল্লাহ যেমন সমস্ত সম্পদের মালিক, ঠিক তেমনি আল্লাহর পদচিহ্ন অনুসরণ করে (within his ability) মালিক হওয়া সত্ত্বেও সে সম্পদে অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, অর্থাৎ অন্যের অধিকার আছে বলে মনে করে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে।

প্রত্যেকটি আয়াতের আগে-পিছে পড়লে বিষয়টি Clear হবে। “মুসল্লী” শব্দটাকে ভালোভাবে না বোঝা পর্যন্ত “সালাত” জিনিসটাকে বুঝা যাবে না, কারণ মুসল্লী হচ্ছে আসল “সালাত সম্পাদনকারী” (Actual Salaat Performer)।

আরব বিশ্বে ব্যবহারিক জীবনে এখনো পর্যন্ত “সালাত” শব্দের আদিমূল (Prime Root) “সল” (পেশ/যের/যবর বিহীন সোয়াদ-লাম) দ্বারা তৈরি প্রথম শব্দ “সল” (সোয়াদ-যবর-লাম), যার অর্থ দরোজার কব্জা (Door Hinge), যেটা দরোজার Movement কে “অনুসরণ করে”, দরোজার সাথে দরোজার ফ্রেম এর “সংযোগ/সংযুক্তি/সাক্ষাৎ (Link/Attachment/Meet) ঘটায়”, “সম্পর্ক তৈরি করে” (make Relationship), দরোজা ও দরোজার ফ্রেমকে সহায়তা করে (Support), দরোজা ও দরোজার ফ্রেম এর সাথে সংলগ্ন থাকে (Adhere).
সুতরাং কোরআনের কোন আয়াত, তার পূর্বের ও পরের আয়াতগুলো দ্বারা সৃষ্ট যে “প্রেক্ষাপটে রচিত” (অর্থাৎ মুতাশাবিহাত 3:7), সেই প্রেক্ষাপটে বলে দেওয়া আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুসরণের “কর্তব্য” (Duty) এর সাথে “সংলগ্নতা/সংযুক্তি/সম্পর্ক/যোগাযোগ” তৈরি করাই সালাত।
বলে রাখা ভালো, সলাতের পরোক্ষ অর্থ “কর্তব্য” (পেক্ষাপট অনুযায়ী), যা কোরআনের প্রত্যেকটা আয়াত এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সালাত মানে কুরআনের নিরবিচ্ছিন্ন অনুসরণ Close Following Quran .

Al-Baqarah ২:১৯৩

وَقٰتِلُوْهُمْ حَتّٰي لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلّٰهِ ؕ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ اِلَّا عَلَي الظّٰلِمِيْنَ

আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা যদি বিরত হয়, তাহলে যালিমরা ছাড়া (কারো উপর) কোন কঠোরতা নেই।

মানুষ যদি প্রকৃত অর্থে কুরআনের সালাত বুঝতো তবে নামাজ এবং মসজিদ নির্মানের জন্য প্রতিযোগিতা করে অযথা সময় এবং অর্থ ব্যয় করত না,বরং সমাজে শান্তিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং সুস্থ বিচার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তাদের জান মাল দিয়ে তারা কিতাল অর্থাৎ চেষ্টা সাধনা ও সংগ্রাম চালিয়ে যেত, (২:১৯৩)।

তাছাড়া কোরআনের এই সালাতের সাথে মিসকিনকে খাদ্য খাওয়ানো ও অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সম্পর্ক রয়েছে (১০৭:১—-৭)।
Al-Ma’un ১০৭:১-7
(1) اَرَءَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ؕ
(2) فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ۙ
(3) وَلَا يَحُضُّ عَلٰي طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ ؕ
(4) فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ۙ
(5) الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ۙ
(6) الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ۙ
(7) وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ

(1) তুমি কি তাকে দেখেছ, যে হিসাব-প্রতিদানকে অস্বীকার করে?
(2) সে-ই ইয়াতীমকে কঠোরভাবে তাড়িয়ে দেয়,
(3) আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না।
(4) অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ,
(5) যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী,
(6) যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে,
(7) এবং ছোট-খাট গৃহসামগ্রী* দানে নিষেধ করে।

*ماعون
গৃহস্থালীর ছোট-খাট সামগ্রী। যেমন, পানি, লবণ, দিয়াশলাই, বালতি ইত্যাদি।

অথচ
প্রচলিত এই নামাজ
প্রথমতঃ ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দ্বিতীয়তঃ সূরা মাউন (১০৭:১–৭) এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
এবং তৃতীয়তঃ এর সাথে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন ব্যবস্থা এবং সুস্থ বিচারব্যবস্থার কোন সম্পর্ক নেই, এবং নেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কোন সম্পর্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *