সালাতের অর্থ সংযোগ বা যোগাযোগ – এবং আরও নির্দিষ্টভাবে, আল্লাহর সাথে মানুষের সংযোগ বা যোগাযোগ। আল্লাহ মানুষের সাথে যোগাযোগ করেন রাসুলের মাধ্যমে কিতাব/গ্রন্থ পাঠিয়ে এবং ওহী করে , আর মানুষ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে সালাতের মাধ্যমে।]
মানুষ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ (সালাত) করে দোয়ার মাধ্যমে। দোয়া /دعاء হল একটি আরবি শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ হল কাউকে ডাকা। এই অর্থে মুসলিমদের জীবনে দোআ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ দোয়া হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে কথোপকথনের মতো , যেখানে আমরা আমাদের প্রয়োজনগুলি তাঁর সামনে রাখি এবং আমাদের সমস্যার সমাধানে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। আমরা যখন দোয়া করি তখন আমরা বাস্তবে সমগ্র বিশ্বজগতের মালিক এবং স্রষ্টার সামনে আমাদের আবেদন উপস্থাপন করি এবং তাঁর পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহতে বিশ্বাসী একজন মুসলিমের জন্য দোয়ার মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে কথা বলা মানসিক প্রশান্তিদায়ক ।
যেহেতু আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সৃষ্টি এবং তিনি যে কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, তাই আমাদের ইহকাল ও পরকালের জীবনের সাথে সম্পর্কিত আমাদের প্রতিটি প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা উচিত এবং আমাদের দোয়াতে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সম্বোধন করা উচিত। এবং কুরআনেও আল্লাহ আমাদের এমনটিই শিখিয়েছেন:
{إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।১:৫}
Ghafir ৪০:৬০
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِيْنَ
Bengali – Bayaan Foundation
আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
৪০:৬০}
Az-Zumar ৩৯:৫৩
قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
Bengali – Bayaan Foundation
বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
৩৯:৫৩}
দোয়ার মাধ্যমে মূলত আমরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করি। দোয়াকে মুমিনের অস্ত্র বলা যায় কারণ এটি ঈমান বৃদ্ধি করে, দুস্থদের আশা ও স্বস্তি দেয় এবং প্রার্থনাকারীকে হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করে। এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আল্লাহ আমাদের সমস্ত প্রয়োজন, ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষার জন্য তাঁর কাছে ডাকতে উৎসাহিত করেন।
Al-Baqarah ২:১৮৬
وَاِذَا سَاَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَاِنِّيْ قَرِيْبٌ ؕ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ
Bengali – Bayaan Foundation
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।২:১৮৬
আল্লাহ আমাদের নিকটেই আছেন , গ্রীবাস্থিত ধমনীর থেকেও নিকটে। আমাদের প্রয়োজনে আমরা যখন ইচ্ছা তাকে ডাকতে পারি , তার কাছে দোয়া করতে পারি। এবং আমরা দৈনন্দিন জীবনে সেটা করে ও থাকি। এর জন্য কোন আনুষ্ঠানিক সময়ের অপেক্ষা করা লাগে না। নদীর মাঝখানে ঝড় উঠলে আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহকে ডাকি , কোন অঙ্গভঙ্গী করি না। নবী যা-নুন(ইউনুস) মাছের পেটের ভিতর থেকে আল্লাহকে ডেকেছিলেন:
Al-Anbiya ২১:৮৭
وَذَا النُّوْنِ اِذْ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنْ لَّنْ نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادٰي فِي الظُّلُمٰتِ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ ۖ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ ۚۖ
আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ ।
Al-Anbiya ২১:৮৮
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ ۙ وَنَجَّيْنٰهُ مِنَ الْغَمِّ ؕ وَكَذٰلِكَ نُــْۨجِي الْمُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।
{এবং যা-নুনের কথা স্মরণ করুন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, তার উপরে আমার ক্ষমতা নেই। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্য থেকে আহবান করলেনঃ তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমিই মহিমা আমি অন্ধকারাচ্ছন্ন। অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। ২১:৮৭-৮৮}
পরিশেষে
এটাই বলব , বহু বছর আগে পার্শি ইমামরা সালাতের মানে নামাজ নামক আজকের অনুষ্ঠানিক উপাসনায় পরিবর্তন না করলে , এত কিছু লেখার প্রয়োজন পড়ত না। কুরআন বুঝে পড়লেই সালাত কি তা সকলে জানতে পারত। আনুষ্ঠানিক নামাজের ধারনা জন্ম থেকেই আমাদের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। তাই কুরআন পড়ার সময় আমরা নামাজকেই খুজি , সালাতকে নয়। খুজলে কি হবে , নামাজের কিছুই কুরআনে নাই! বিশ্বের ১২০ কোটি মুসলমানের তুলনায় তা নিতান্তই নগন্য। যারা পড়ছে তাদের জন্যেও নামাজ বাদ দেয়া এত সোজা নয়।