সালামুন আলা রাসুল কিয়ামত সম্পর্কে কোন ভবিষ্যৎ বাণী করেন নাই , আসুন তা আল কোরআন থেকে জেনে নেই।
কুরআনের আয়াত অনুযায়ী কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে আছে। কোন মানুষতো দূরের কথা নবীরা এই বিষয়ে জানতেন না। অথচ, কিয়ামত বিষয়ে অসংখ্য হাদীস তৈরি করে তা মুহাম্মাদের নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিয়ামতের লক্ষন তথা সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে, ইমাম মাহদি, দাজ্জালের আগমন ইত্যাদি কল্পকাহিনী রচনা করে শয়তানের অনুসারী ষড়যন্ত্র কারিরা পৃথিবীর মানুষকে আল্লাহর কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এরাই ইমাম মাহদির নেতৃত্বে যুদ্ধ করবে বলে সারা পৃথিবীতে জিহাদের নামে সন্ত্রাস করছে।
কিয়ামত বিষয়ক আয়াতঃ
1.তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও যমীনের উপর তা (কিয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষ ভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’। বল, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তাহলে নিজের জন্য অনেক বেশি ফায়দা হাসিল করে নিতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। যারা ঈমান আনবে আমি সেই সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া অন্য কিছু নই। (7:187,188)
2.লোকেরা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, আর তোমার কি জানা আছে, কিয়ামত হয়ত খুব নিকটে! (33:63)
3.তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কখন ঘটবে’? এর আলোচনার সাথে তোমার কী সম্পর্ক? এর প্রকৃত জ্ঞান তোমার রবের কাছেই। তুমিতো কেবল তাকেই সতর্ককারী, যে একে ভয় করে ।
যেদিন তারা এটা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাতের অধিক অবস্থান করেনি। (79:42-47)
4.নিশ্চয় কিয়ামত আসবে, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামাত বিশ্বাস করেনা এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপনে বাধা দিতে না পারে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।(20:15,16)
5.আল্লাহ, যিনি সত্যসহ কিতাব ও মীযান নাযিল করেছেন। আর কিসে তোমাকে জানাবে, হয়ত কিয়ামত খুবই নিকটবর্তী? যারা এটা বিশ্বাস করেনা তারাই এটা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা বিশ্বাসী তারা ওকে ভয় করে এবং জানে যে, এটা সত্য; জেনে রেখ, কিয়ামাত সম্পর্কে যারা বাক-বিতন্ডা করে তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে। (42:17,18)
6.নিশ্চয় কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে না।(40:59)
7.নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (31:34)
8.কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে,তাঁর অজ্ঞাতসারে কোন ফল আবরণ মুক্ত হয় না, কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। আর যেদিন আল্লাহ্ তাদেরকে ডেকে বলবেন, আমার শরীকরা কোথায়? তখন তারা বলবে, আমরা আপনার কাছে নিবেদন করি যে, এ ব্যাপারে আমাদের থেকে কোন সাক্ষী নেই।(41:47)
9.আর তিনি বরকতময়, যার কর্তৃত্বে রয়েছে আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু। আর কিয়ামতের জ্ঞান শুধু তাঁরই আছে এবং তারই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।(43:85)
10.আর তারা বলে, ‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’। অতঃপর তারা যখন তা* আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে এবং বলা হবে, ‘এটাই হল তা, যা তোমরা দাবী করছিলে’। (67:25,26,27)
11.আর তারা বলে, ‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। তারা তো কেবল এক বিকট আওয়াজের অপেক্ষা করছে যা তাদেরকে বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত অবস্থায় পাকড়াও করবে। (ক্বিয়ামত এমনই হঠাৎ আক্রমণ করবে যে) তারা না পারবে ওসীয়াত করতে আর না পারবে তাদের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যেতে। (36:48-50)
12.আর তারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে’? বল- তোমাদের জন্য আছে এক নির্ধারিত দিন যা তোমরা এক মুহূর্তকালের জন্য বিলম্বিত করতে পারবে না, আর ত্বরান্বিত করতেও পারবে না।(34:29,30)
13.আর তারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে’? বল, ‘আশা করা যায়, তোমরা যে বিষয়ে তাড়াহুড়া করছ তার কিছু অচিরেই হবে’।(27:71,72)
14.আর তারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে? তবে তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে তুমি বলে দিও, ‘আমি যথাযথভাবে তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। আর আমি জানি না তোমাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা কি নিকটবর্তী না দূরবর্তী’। আর সত্য ওয়াদার সময় নিকটে আসলে হঠাৎ কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে, ‘হায়, আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম বরং আমরা ছিলাম যালিম’ ।(21:38,109,97)
15.আর তারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে?বল, ‘আমি নিজের ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন’। প্রত্যেক উম্মতের রয়েছে নির্দিষ্ট একটি সময়। যখন এসে যায় তাদের সময়, তখন এক মুহূর্ত পিছাতে পারে না এবং এগোতেও পারে না।(10:48,49)
16.অবিশ্বাসীরা বলে, ‘আমরা কিয়ামতের সম্মুখীন হব না।’ বল, ‘অবশ্যই তোমাদেরকে তার সম্মুখীন হতেই হবে, আমার প্রতিপালকের শপথ; যিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তার থেকে ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু তাঁর অগোচর নয়;ওর প্রত্যেকটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ। (34:3)
17.আকাশসমূহ ও যমীনের অদৃশ্যের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই আছে। ক্বিয়ামাতের ব্যাপার তো চোখের পলকের মত বরং তাত্থেকেও দ্রুত। আল্লাহ সব কিছু করতেই সক্ষম। (16:77)
18.হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী বিস্মৃত হবে তার দুগ্ধ পোষ্য শিশুকে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে; মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি কঠিন। আর কিয়ামাত অবশ্যই আসবে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং যারা কবরে আছে আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করবেন। যারা অবিশ্বাস করেছে তারা ওতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না; যতক্ষণ না তাদের নিকট কিয়ামত এসে পড়বে আকস্মিকভাবে অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা (অশুভ) দিনের শাস্তি। (22:1,2,7,55)
19.আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত। (21:47,49)
20.বরং তারা কিয়ামাতকে অস্বীকার করেছে এবং যারা কিয়ামাতকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন। দূর হতে আগুন যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও প্রচন্ড চিৎকার শুনতে পাবে। (25:11,12)
21.আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে পড়বে। আর তাদের শরীকরা তাদের জন্য সুপারিশকারী হবে না এবং তারা তাদের শরীকদেরকে অস্বীকার করবে। আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। অতএব যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে তারা জান্নাতে আনন্দে থাকবে। আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াত ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে। (30:12-16)
22.আর যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে সেদিন অপরাধীরা কসম করে বলবে যে, তারা মুহূর্তকালের বেশী অবস্থান করেনি। এভাবেই তারা সত্যবিমুখ থেকেছে। আর যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে তারা বলবে, ‘তোমরা আল্লাহর বিধান মত পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ। আর এটি পুনরুত্থান দিবস। কিন্তু তোমরা জানতে না।’ সেদিন সীমা লংঘনকারীর ওযর আপত্তি তাদের কাজে আসবেনা এবং তাদেরকে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও দেয়া হবেনা। (30:55-57)
23.তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে। তাহলে কি তারা আল্লাহর সর্বগ্রাসী শাস্তি হতে অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে কিয়ামাতের আকস্মিক উপস্থিতি হতে নিরাপদ?(12:106,107)
24.আর যখন বলা হয়, ‘আল্লাহর ওয়াদা সত্য, আর কিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই’। তখন তোমরা বলে থাক, ‘আমরা জানি না কিয়ামত কী? আমরা কেবল অনুমান করি এবং আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী নই।’ তাদের মন্দ কাজগুলি তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করত তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে। আর বলা হবে- ‘আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব যেমন করে তোমরা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিলে। তোমাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম আর তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। এটা এজন্যই যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র বানিয়েছিলে এবং দুনিয়ার জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল’। সুতরাং আজ তাদেরকে তা (জাহান্নাম) থেকে বের করা হবে না এবং তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে না। (45:32-35)