নবী ইব্রাহিম না ছিলেন ইহুদী , না ছিলেন খৃষ্টান। উনি এমনই আদর্শবান মুসলীম ছিলেন যে , আল্লাহ , রসূলকে আদেশ করেছেন ইব্রাহিম নবীকে অনুসরন করার জন্য।
“অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শির্ককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।১৬:১২৩”
রসূল ও তার অনুসারীগন সেটাই করেছেন আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।

“যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, “আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।” আর আহলে কিতাবদের এবং মূলকেন্দ্রের লোকদের বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌঁছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।৩:২০”

তাহলে কেনো আজ মুসলমানগন হাদীস সাহিত্যের এক বিতর্কিত চরিত্র আবু হুরায়রাকে অনুসরনের ফাঁদে আটকে গেছে? কোরআনের শিক্ষাকে অস্বীকার করেও তারা কি ভাবছে তারা সঠিক পথে আছে?
আল্লাহ বলেছেন:

“আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তা এজন্য যে, তারা বলে থাকে যে, জাহান্নামের আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না; তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। নিজেদের উদ্ভাবিত ভিত্তিহীন কথায় তারা ধোকা খেয়েছে।৩:২৩-২৪”

আজকের মুসলমানেরাও একি কথা বলে থাকে যে , জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না; আর যদি করেও তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। এগুলো সবই ভিত্তিহীন কথাবাত্রা। আসলেই আল্লাহ্‌র সুন্নতে কোন নড়চড় নেই।

শাহাদা


প্রতিটি মুসলমানকে সুন্নি মাযহাব মোতাবেক ঘোষনা দিতে হয় যে , “আমি সাক্ষ্য দিতেছি আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিতেছি যে মুহম্মদ আল্লাহ্‌র রসূল।” আরবিতে “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ।” এই যে সাক্ষ্য দেয়া , একেই শাহাদা বলে। নুতন কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে সর্ব সমক্ষে এই ঘোষনা পাঠ করতে হয় এবং যারা জন্মগতভাবে মুসলমান , তাদের এই শাহাদা মুখস্ত জানা ও বলা আবশ্যকীয়। অন্যদিকে কেউ যদি এই সাক্ষ্য দিতে রাজি না হয় , তবে সে আর মুসলমান থাকে না। একারনেই এই শাহাদাকে পার্শি ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম বা প্রধান স্তম্ভ হিসাবে গন্য করা হয়। শুধু তাই নয় , নামাজের ভিতরে এই শাহাদা না পড়লেও নামাজ হয় না।

প্রচলিত কালিমা শাহাদাতের ইতিহাস


এই অতি গুরুত্বপূর্ন শাহাদাত কিভাবে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হলো। এই শাহাদার উৎপত্তি আবু হুরায়রা থেকে এবং এটা হাদীসগ্রন্থে রসূলের হাদীস হিসাবে লিপিবদ্ধ। এই হাদীসের অনেকগুলো ভার্সান আছে , যা তিরমিজি ও অন্যান্য গ্রন্থে পাবেন। হাদীসটি নিম্নরুপ-সুত্র “Mishkat-ul-Masabih”, translation by Maulana Fazlul Karim, Volume 1, Chapter 1, no.27.

একদিন আবু হুরায়রা লোকজনের কাছে যেয়ে বল্লেন , রসূল তাকে বলেছেন লোকজনকে জানাতে যে এখন থেকে এই শাহাদাত আবৃত্তি করা লাগবে , ” আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ।”
অন্য হাদীসে এসেছে ” মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।” আবু হুরায়রা প্রথম যে ব্যক্তির সামনে পড়লেন , তিনি হলেন কথিত ২য় খলিফা ওমর। ওমর তার এই শাহাদার কথা শুনেই তার বুকে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে বল্লেন , এই মিথ্যা অবমাননাকর কথা বল , তোমার এত সাহস!! আবু হুরায়রা কাঁদতে কাঁদতে বল্লেন , রসূল নিজেই তাকে একথা মানুষজনকে জানাতে বলেছেন। ওমর একথায় সন্তুষ্ট না হয়ে যখন তাকে আরো মারতে লাগলেন , তখন আবু হুরায়রা এক জোড়া চামড়ার জুতা দেখিয়ে বল্লেন , রসূল তাকে এই জুতা জোড়া দিয়েছেন প্রমান হিসাবে। ওমর যখন দেখলেন এটা সত্যিই রসূলের জুতা , তখন তিনি শান্ত হলেন। এরপর থেকে সকলেই খুশিমনে এই শাহাদাত আবৃত্তি করা শুরু করল। সেই শুরু , যা এখনো চলছে।

এই হলো আবু হুরায়রার শাহাদার অবিশ্বাস্য ইতিহাস। এই ইতিহাসকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে কিছু প্রশ্নের জবাব জানা প্রয়োজন। প্রথমত আবু হুরায়রা রসূলের সঙ্গ পেয়েছিলেন রসূলের মৃত্যুর আগের ২ বছর। তাহলে ইসলামের প্রথম দিকের মুসলমানরা কোন শাহাদা পড়ে মুসলমান হতেন বা আবৃত্তি করতেন?
দ্বিতীয়ত আবু হুরায়রার শাহাদার মধ্যে কি এমন অবমাননাকর বক্তব্য ছিল যে , ওমর এমন ক্ষেপায় ক্ষেপলেন যে আরেক সাহাবীর উপরে চড়াও হয়ে মারধর করলেন?
কোরআন আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, “প্রসংশিত আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।৪৮:২৯”
ওমরের আবু হুরায়রার উপরে চড়াও হয়ে মারধোর করা কি সহানুভূতিশীলতার উদাহরন?

আরেক হাদীসে এই ঘটনার ধারাবাহিকতাই বর্ননা করা হয়েছে যে , ওমর রসূলকে চ্যলেন্জ করে জানতে চেয়েছেন – তিনি সত্যিই কি আবু হুরায়রাকে নিজের জুতা দিয়ে পাঠিয়েছেন মানুষের মাঝে এই শাহাদা প্রচারের জন্য? রসূল উত্তর দিলেন – হ্যাঁ। তখন ওমর দ্বিমত পোষন করে বল্লেন – এই শাহাদা মানুষকে ‘অলস’ করে ফেলবে। শাহাদা মানুষকে কিভাবে অলস করে ফেলবে , তার ব্যাখ্যা হাদীস বিশারদরাই ভালো দিতে পারবেন। তবে এই অবান্তর হাদীসের বর্ননাকারী ও কিন্তু ঐ আবু হুরায়রা। অবান্তর বল্লাম , কারন এই হাদীস ও কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থি। ওমর , যিনি একজন মুমীন ছিলেন , তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন –
“মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম।২৪:৫১”
এরপরেও কি ওমরের পক্ষে সম্ভব রসূলের সাথে দ্বীমত পোষন করা? আমার তো এই হাদীস দুটি রামের জুতা জোড়ার কথা স্মরন করিয়ে দেয় , যা ভরত সিংহাসনে রেখে রামের অবর্তমানে দেশ শাসন করেছিলেন। ইসলামের ভিত্তি কি এইরকম গল্পের উপরে দাড় করানো সম্ভব!!

তবু ও না হয় শাহাদা মেনে নেয়া যেত বা benefit of doubt দেয়া যেত যদি না এই শাহাদা প্রতি নামাজে বৈঠকের সময় আবৃত্তি করা বাধ্যতামূলক করা হত। কারন এটা শির্কের সমতুল্য।

কোরআনের আলোকে আবু হুরায়রার শাহাদা কেন গ্রহনযোগ্য নয়?


রসূলের সত্যিকারের শিক্ষার সাথে আবু হুরায়রার শাহাদার বিরোধ কোথায়? রসূলের শিক্ষা হলো কোরআনের বানী , যা আল্লাহ তাঁর কাছে নাযিল করেছেন। ওহী পাওয়ার পরে তিনি প্রথমে তার সঙ্গী সাথী বা সাহাবাদের জানিয়েছেন , তারপরে ধীরে ধীরে জগৎ সংসারের বাকি মানুষ ,যাদের কাছে এই বানী পৌঁছেছে , তারা জেনেছে। কোরআনকে আল্লাহর বানী এবং রসূলের হাদীস ও বলা যায় , কারন কোরআনের বানী রসূলের মুখ দিয়েই কথা আকারে এসেছে। কোরআনের বানী আল্লাহ গ্রন্থাকারে পাঠান , যেমনটি তিনি মূসার কাছে পাথরের ট্যবলেটে লিখে পাঠিয়েছিলেন।

একারনেই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি , রসূলের সত্যিকার শিক্ষাই হলো কোরআনের বানী । কোরআন ছাড়া বাকি যেসব দাবী করা হয় , তা রসূল পরবর্তী আলেম , ওলামা , মুনাফিকদের বানানো মন গড়া কল্পনা মাত্র , যার সাথে সত্যিকারের ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

আল্লাহ রসূলকে আদেশ করেছেন আমাদের জানানোর জন্য –
“মসজিদ সমূহ/আল্লাহর বিধান পালন আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না।৭২:১৮”

আমরা আবু হুরায়রার শাহাদায় আল্লাহর সাথে সাথে মুহম্মদের সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং তা মসজিদে নামাজে ও আজানে এই শাহাদা বলার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সাথে মুহম্মদকেও স্মরন করে চলেছি যা শিরক।

আজকের মুসলমান স্কলাররা বলে থাকেন , এটা রসূলের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য বলে থাকেন এবং একি সাথে এটা ও স্মরন করিয়ে দেন যে , এই শাহাদা প্রতি বৈঠকে না পড়লে নামাজ হবে না। এটাকে আল্লাহর উপাসনার সাথে সাথে ব্যক্তি (মুহম্মদ) উপাসনা ছাড়া আর কি বলা সম্ভব? এটাকে শির্ক না বল্লে আর কোনটাকে শির্ক বলবেন?

শাহাদা হবে শুধুমাত্র আল্লাহর


মানুষের একটা বড় দুর্বলতা হলো , তদের পক্ষে অদেখা গায়েবি আল্লাহ বা গডে বিশ্বাস করা কষ্টকর। এমনকি ইব্রাহিম ও মূসা নবীর ও এই সমস্যা ছিল।

“তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার রব কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কস্মিনকালেও দেখতে পাবে না, …. ৭:১৪৩”

মানুষ তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি দিয়েই সব কিছু গ্রহন করতে চায়।
একারনেই
১.খৃষ্টানরা জেসাস/জিসু /ইসাকে প্রথমে গডের পুত্রে উন্নীত করলো , তারপর স্বয়ং গডেরি অংশ বানিয়ে ফেললো।
২.হিন্দুরা মানুষ রাম এবং কৃষ্ণকে দেবতা বা ভগবান বানিয়ে পুজা করতে শুরু করল। ৩.মুসলমানরা ও পিছিয়ে থাকবে কেন? তারাও মুহম্মদের নামে হামদ্‌ নাত বানিয়ে , নামাজে তার নাম ঢুকিয়ে , মিলাদ মাহফিল করে , তার কবর জিয়ারতকে হজ্বের সময় আত্যাবশ্যকীয় বানিয়ে , তার সুপারিশকে জান্নাতে ঢোকার চাবি বানিয়ে , তাকে ঐশী স্তরে নিয়ে গেছে এবং আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। আজকের মুসলমানদের তাই মোহামেডান বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত।

তারা যে মোহামেডান হয়ে গেছে এটা বলার কারনে কত গালিই না সইতে হচ্ছে বা হবে। কোরআন ওনলি যিন্দিক শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা। বস্তুত তারা খেয়াল করে না ,রাসুল নিজেই আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন –

“যখন এক (اللَّهُ وَحْدَهُ ) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে। ৩৯:৪৫”

যদি শুধুমাত্র ” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা হয় , তাহলে মোহামেডানরা কিভাবে ক্ষেপে ওঠে!! আর যদি এর সাথে “মুহম্মদ রাসুলুল্লাহ” বলা যায় , তাহলে তারা শান্ত হয় , আনন্দিত হয়।

আল্লাহ রসূলকে জানিয়েছেন যে এই শাহাদা আসলে হিপোক্রাট মুনাফেকদের শাহাদা। রসূলের চারিপাশে মুনাফেকরা বর্তমান ছিল , রসূল তাদের চিনতেন না।

“আর কিছু কিছু তোমার আশ-পাশের মুনাফেক এবং কিছু লোক মদীনাবাসী কঠোর মুনাফেকীতে অনঢ়। তুমি তাদের জান না; আমি তাদের জানি। ৯:১০১”

একারনে , মুনাফেকরা চিন্তিত ছিল যে , হয়তো বা আল্লাহ তাদের পরিচয় ফাঁস করে দেবেন।
“মুনাফেকরা এ ব্যাপারে ভয় করে যে, মুসলীমদের উপর না এমন কোন বিধান নাযিল হয়েছে, যাতে তাদের অন্তরের গোপন বিষয় অবহিত করা আছে । সুতরাং আপনি বলে দিন, ঠাট্টা-বিদ্রপ করতে থাক; আল্লাহ তা অবশ্যই প্রকাশ করবেন যার ব্যাপারে তোমরা ভয় করছ।৯:৬৪”

আল্লাহ রসূলকে তাদের পরিচয় ফাঁস করেছেন-
“মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।৬৩:১”

তাহলে দেখতে পাই মুনাফিকরাই সাক্ষ্য দেয় , মুহম্মদ আল্লাহর রসূল। এটাই আবু হুরায়রার শাহাদার দ্বিতীয় অংশ।

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন , আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। আর কোন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই।

‎مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللّهِ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولاً وَكَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি রসূল হিসাবে। আর আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। ৪:৭৯

আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং মালাইকাগণও সাক্ষী। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ৪:১৬৬

এ ছাড়াও আল্লাহ রসূলদের ব্যাপারে সাক্ষী হতে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং এটা সম্ভবও নয় কেউ যে রসূল , তার সাক্ষ্য দেয়া। নবীর কাছে যে ওহী আসে তা আল্লাহ ছাড়া আর কোন মানুষের পক্ষে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে জানা সম্ভব না।

“মূসাকে যখন আমি নির্দেশ নামা দিয়েছিলাম, তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না।২৮:৪৪”

তাহলে সঠিক শাহাদা কোনটি?


যা মুসলীমগন দৃঢ়তার সাথে ঘোষনা দিতে পারে বা যা ঘোষনা করে নব্য মুসলীমেরা মুসলীমদের দলভুক্ত হতে পারে? হয়তো বা সাহাবারা এই একি প্রশ্ন নবীকেও করেছিলেন এবং হয়তো বা তিনি উত্তর দিয়েছিলেন –

“তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি, তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবর্তীর্ন হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।৬-১১৪-১১৫”

তাহলে দেখা যাচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর বা শাহাদা অবশ্যই কোরআনে থাকতে হবে। ইব্রাহিম নবী এর প্রকৃষ্ট উদাহরন –

“যে আল্লাহর কাছে নিজেকে (أَسْلَمَ وَجْهَهُ) সমর্পন করে , সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের মিল্লাত অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন, তার চাইতে উত্তম মিল্লাত কার? আল্লাহ ইব্রাহীমকে খলিল রূপে গ্রহণ করেছেন।৪:১২৫”

স্মরনে রাখা প্রয়োজন যে , এই আয়াতটি নবীর কাছে নাযিল হয়েছিল এবং তিনিই প্রথমে সাহাবীদের কাছে এই আয়াত তেলোয়াত বা আবৃত্তি করেছিলেন , অতঃপর কোরআনের মাধ্যমে এই আয়াত আমাদের কাছে পৌঁছেছে।
সুতরাং আমাদের সকলের উচিৎ ইব্রাহিমের মিল্লাত অনুসরন করা।

“ইব্রাহীমের মিল্লাত থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই আমি তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।২:১৩০”

শুধু বোকারাই ইব্রাহীমের মিল্লাত থেকে মুখ ফেরায়। তাহলে মুসলমানদের , যারা কোরআনে বিশ্বাস করে ও বোকা না হতে চায় , তাদের উচিৎ ইব্রাহিম যা করতো , তাই করা। ইব্রাহিম কি করতো? পরের আয়াতেই তা বলা আছে –

“স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ নিজেকে সমর্পন কর(أَسْلِمْ)। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের কাছে নিজেকে সমর্পন করলাম (أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ)।২-১৩১”

এটাই , যা আমরা খুঁজতেছি। যখন আল্লাহ ইব্রাহিমকে সঠিক দ্বীনের নির্দেশনা দিলেন , তখন তিনি ইব্রাহিমকে আত্মসমর্পন (আসলিমু) করতে বল্লেন এবং ইব্রাহিম বল্লেন,
“আসলামতু লি রাব্বিল আলামিন”।

এভাবেই সকল মুসলীমদের ঘোষনা বা শাহাদা হওয়া উচিৎ।
কোন কোর্টে যদি কেউ সাক্ষ্য দেয় , ” হুজুর , আমি চোখে দেখিনি বা ঘটনাস্থলেও উপস্থিৎ ছিলাম না” , তাহলে সেই সাক্ষ্য কোন জড়বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ছাড়া আর কারো কাছে গ্রহনযোগ্য হবে কি? তেমনি আবু হুরায়রার শাহাদাও গ্রহনযোগ্য নয়। কারন আমরা কেউ আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখিনি বা মুহম্মদের নবুয়ত্ব পাওয়ার বা রসূল হওয়ার ঘটনাস্থলে উপস্থিৎ ছিলাম না। এব্যপারে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।

ইব্রাহিমের গল্পের ধারাবাহিকতায় পরের আয়াত বা প্রমান


“এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলীম না হয়ে (আত্মসমর্পন না করে) কখনও মৃত্যুবরণ করো না।২:১৩২”

“তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের ইবাদত করব। তিনি একক উপাস্য। আমরা সবাই তাঁর কাছে আত্মসমর্পন করলাম।২:১৩৩”

তাহলে দেখা যাচ্ছে ইব্রাহিম ও তার বংশধরগন সকলেই আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পন করেছিলেন। এটাই সত্য ঘটনা , এটাই কোরআনের বানী। কোরআনে নবীকে আদেশ করা হয়েছে ইব্রাহিমকে অনুসরন করার জন্য। –

“তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের মিল্লাতে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম…..।২:১৩৫-১৩৬”}

এই একি নির্দেশনা আল্লাহ কোরআনে আবারো দিয়েছেন এবং যারা এই সত্যকে গোপন করে তাদের জন্য –

“অথবা তোমরা কি বলছ যে, নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানগন ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান ছিলেন? আপনি বলে দিন, তোমরা বেশী জান, না আল্লাহ বেশী জানেন? তার চাইতে অত্যাচারী কে, যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার কাছে প্রমাণিত সাক্ষ্যকে গোপন করে? আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। ২:১৪০”

তাহলে মানুষ কেনো এই শাহাদা বা সাক্ষ্য গোপন করে? ইব্রাহিম ঘোষনা দিয়েছিলেন –
“আসলামতু লি রাব্বিল আলামিন”।
অর্থাৎ আমি দুই জাহানের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করলাম।
এবং তিনি তার সন্তানদের ও জ্যকবকে/ইয়াকুবকেও এই একি কাজ করতে আদেশ করেছিলেন।

নবী ও সাহাবাদের ও এই একি শাহাদা দেয়া হয়েছিল । তাহলে কেন আজ সকলে সঠিক শাহাদা গোপন করে মুনাফিকদের শাহাদা আকড়ে ধরে আছে?

পরবর্তী রাসুলগন কার অনুসরণ করেছিলেন?


এতে কোনই সন্দেহ নেই যে , রসূলগন ইব্রাহিমের বিশ্বাসকেই অনুসরন করেছিলেন।

“অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শির্ককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।১৬:১২৩”

নবী ও আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী ঠিক এটাই করেছিলেন। যদি কেউ মুসলীম হতে চায় , তবে তাকে নবী যেমন ইব্রাহিমের মতো আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করেছিলেন , তেমনি আত্মসমর্পন করা উচিৎ নয় কি?

“মানুষদের মধ্যে যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের ওয়ালী।৩:৬৮”

“বলুন, যখন আমার কাছে আমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে গেছে, তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাকে ডাকো , তার ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমাকে আদেশ করা হয়েছে বিশ্ব পালনকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পন করতে।(ওয়া উমিরতু আন আসলিমা লি রাব্বিল আলামিন) ৪০:৬৬”

যদি কেউ এটা নিয়ে বাদানুবাদ করে , তবে তার জবাব ও কোরআনে বলা আছে –
“যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, “আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।”…৩:২০

রসূল ও তার অনুসারীরা সোজা ভাষায় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন।

“আপনি বলে দিনঃ আমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে আহবান করব, যে আমাদের উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না এবং আমরা কি পশ্চাৎপদে ফিরে যাব, এরপর যে, আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন? ঐ ব্যক্তির মত, যাকে শয়তানরা বনভুমিতে বিপথগামী করে দিয়েছে-সে উদভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। তার সহচররা তাকে পথের দিকে ডেকে বলছেঃ আস, আমাদের কাছে। আপনি বলে দিনঃ নিশ্চয় আল্লাহর পথই সুপথ। আমরা আদিষ্ট হয়েছি যাতে স্বীয় পালনকর্তা কাছে নিজেকে সমর্পন করি।৬:৭১”

সাবার রানীর শাহাদা


সাবার রানী যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মুসলীম হয়েছিলেন তখন এই শাহাদা পড়েছিলেন –

“তাকে বলা হল, এই প্রাসাদে প্রবেশ কর। যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল সে ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছি।
আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পন করলাম।২৭:৪৪”

সঠিক শাহাদা-

“আসলামতু লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন” আমি বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *