“ঈমানী ভ্রাতৃত্বের হক ও অধিকার”

✅ বংশীয় এবং রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয়ের মতো ঈমান এবং ইসলামও এক অতি পবিত্র আত্মিক সম্পর্কের নাম। সুতরাং কুরআনের দৃষ্টিতে এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই।

➡️ “মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই, কাজেই তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তি-সমঝোতা স্থাপন কর, আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা দয়া প্রাপ্ত হও।”
(Al-Hujurat 49: Verse 10)

✅ ঈমানী আত্মীয়তার ফলে প্রত্যেক মুসলিমের উপর অপর মুসলিম ভায়ের কিছু হক ও অধিকার এসে যায়। যেমন তাদের মাঝে মমত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা, পারস্পরিক লেনদেনে সহমর্মিতা প্রদর্শন করা, একে অপরের কল্যাণ কামনা করা, সবাই সবার প্রতি বিনীত আচরণ করা, প্রত্যেকেই পরের সেবায় মনোযোগী হওয়া ইত্যাদি। কুরআন মাজীদে মু’মিন সমাজের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলা হয়েছে,

➡️ “প্রসংশিত আল্লাহর রসুল। আর যে সব লোক তাঁর সঙ্গে আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়াশীল।
(48: 29 প্রথমাংশ)

➡️ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য হতে কেউ তার দ্বীন হতে ফিরে গেলে সত্বর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাঁকে ভালবাসবে, তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা ভয় করবে না, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ- যাকে ইচ্ছে তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, সর্বজ্ঞ।”
(Al-Ma’idah 5: Verse 54)

✅ যে সমস্ত আচরণ পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টের কারণ হয় এবং মনোমালিন্য সৃষ্টি করে, কুরআন মাজীদ সেগুলোকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। যেমন কাউকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা, কারো কিছু নিয়ে ঠাট্টা-মশকারি করা, বিকৃত নামে কাউকে ডাকা, কারো দোষ তালাশ করা, অন্যের গিবত ও দোষচর্চা করা, অনুমান কিংবা লোকমুখে শোনা কথার ভিত্তিতে কারো ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করা ইত্যাদি। এ সমস্ত আচরণে মানুষ সতর্ক থাকে না। অথচ এগুলো পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টের অন্যতম কারণ। তাই কুরআন মাজীদ পরিষ্কার ভাষায় এগুলো নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

➡️ “হে ঈমানদারগণ! কোন সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন অন্য নারীদেরক ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারিণীদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অন্যের নিন্দা করো না, একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর মন্দ নাম কতই না মন্দ! যারা তাওবাহ না করে তারাই যালিম।”
(Al-Hujurat 49: Verse 11)

➡️ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। কতক ধারণা পাপের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবাহ ক্ববূলকারী, অতি দয়ালু।” – (Al-Hujurat 49: Verse 12)

✅ মুসলিমদের পারস্পরিক হক সমূহের ক্ষেত্রে কুরআন মাজীদ এ শিক্ষাও দেয় যে, প্রত্যেক মুসলিম দোয়ার সময় অপর মুসলিমদের কথা স্মরণ রাখবে। কুরআনে বর্ণিত অধিকাংশ দোয়ায় বহুবচন ব্যবহারের এও একটি কারণ। কয়েকটি দোয়া এই,

➡️ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের -কে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখেরাতে কল্যাণ দাও। আর আমাদের -কে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। – (সূরা বাকারা ২/২০১)

➡️ হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যে হেদায়াত দান করেছো, তারপর আবার আমাদের অন্তরকে তা হতে বিমুখ করে দিও না। একান্ত তোমার নিজের পক্ষ হতে আমাদেরকে রহমত দান করো। নিশ্চই তুমি মহাদাতা।
(সূরা আলে ইমরান ৩/৮)

➡️ হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের সবার পাপরাশি ক্ষমা করো এবং আমাদেরকে দোযখের আগুন হতে রক্ষা করো।
(সূরা আলে ইমরান ৩/১৬)

➡️ হে আমাদের রব! ক্ষমা করো আমাদেরকে এবং আমাদের সেই ভাইদেরকে, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের বিষয়ে কোনো বিদ্বেষ বাকি রেখো না। আমাদের মালিক! তুমি অতি মমতাময় পরম দয়ালু। – (৫৯/১০)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *