পর্ব ০২
কুরআনে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে এই শব্দটি নিয়ে।
“ইত্তাকু আল্লাহ” শব্দের প্রচলিত অনুবাদ হলো “আল্লাহকে ভয় করো”
“মুত্তাকি” শব্দের প্রচলিত অনুবাদ হলো পরহেজগারি/Righteous
আর “তাত্তাকুনা” শব্দের প্রচলিত অনুবাদ হলো আল্লাহ সচেতন হওয়া।
তিনটি শব্দই একই মূল “ওয়া-ক্বাফ-ইয়া” থেকে উৎপন্ন, অথচ শব্দের অর্থ গুলোর সাথে কোনো যোগসূত্র নেই। অর্থাৎ সমার্থক নয়।
পরহেজগারির (ফার্সি শব্দ) সাথে সচেতনতা বা ভয় করার কি সম্পর্ক তা বোঝা যায় না।
তবে শব্দটির মূল ওয়া-কাফ-ইয়া শব্দের সঠিক অর্থ হলো “সুরক্ষা” বা protect. এই পোস্টে আমরা দেখবো এই মূল শব্দের সাথে সমার্থক বা যোগসূত্র আছে আর কি কি অর্থের।
মুত্তাকি
মুত্তাকি শব্দের অর্থ হলো সুরক্ষিত। মুমিনেরা নিজেদের পাপাচার ও শিরক থেকে সুরক্ষিত করতে পারলেই তারা মুত্তাকি হবে। বিষয়টা ভ্যাকসিন এর মত, যা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়।
তাত্তাকুন ও ইত্তাকু
তাত্তাকুন ও ইত্তাকু শব্দের সাধারণ অর্থ হলো “সাবধানতা অবলম্বন করা।” এটিও সুরক্ষিত/মুত্তাকি শব্দের সাথে সমার্থক। কারণ নিজের সুরক্ষিত অবস্থান ধরে রাখতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন করোনার সময় ভ্যাকসিন নিয়ে সুরক্ষিত হলেও কেউ মাস্ক পড়া ছাড়েননি, কারণ সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। কাজেই সুরক্ষিত হওয়া এবং সাবধানতা অবলম্বন করার সাথে যোগসূত্র আছে।
তবে
যখন ইত্তাকুআল্লাহ একসাথে বলা হয়, তখন শব্দটির অর্থ একটু অন্যরকম, তবে এটির সাথেও যোগসূত্র আছে। তার আগে একটি প্রশ্ন করি। কুরআনে কি কোথাও আল্লাহকে ভালাবাসার কথা বলা হয়েছে? নাকি শুধু ভয় পাবার কথা বলা আছে? আল্লাহকে ভয় পেতে হবে কেন? আপনি যদি আপনার অফিসের কর্ম ঠিকঠাক ভাবে পালন করেন, তাহলে কি আপনার বসকে আপনি সারাক্ষণ ভয় পান?
মোল্লারা আপনাকে ভয় আর লোভ দেখিয়ে তাদের ধর্মব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছে। “ইত্তাকু আল্লাহ” এর সঠিক অনুবাদ হবে “আল্লাহকে ভালোবাসো।” ভালবাসার সাথে সুরক্ষিত থাকা এবং সাবধানতা অবলম্বন করার কি সম্পর্ক/যোগসূত্র আছে? উত্তরটা নিজের স্বামী বা স্ত্রী এর প্রতি ভালবাসা দিয়ে চিন্তা করেন। আপনি যদি তাকে ভালবাসেন, তাহলে তার খুশির জন্য সকল প্রকার সাবধানতা অবলম্বন করবেন যাতে তার সাথে আপনার সম্পর্কের অবনতি না হয়। তাহলে ইত্তাকুআল্লাহ শব্দের সাথে তাত্তাকুন শব্দের যোগসূত্র পাওয়া গেল।
এখন
মুত্তাকি বা সুরক্ষিত হবার সাথে ভালবাসার কি সম্পর্ক? কাউকে ভালবাসলে আপনি কোনো বিবাহবহির্ভুত পরকিয়ার সম্পর্কে জড়াবেন না, কারণ সেটি হবে ভালবাসার মানুষটির প্রতি অন্যায়, অর্থাৎ নিজেকে এই অপকর্ম থেকে সুরক্ষিত রাখবেন। তাহলে ইত্তাকুআল্লাহ ও মুত্তাকি শব্দের অর্থের একটা যোগসূত্র পাওয়া গেল।
তাহলে
“ইত্তাকু আল্লাহ” অর্থ হলো আল্লাহকে ভালবেসে তাঁর সাথে সম্পর্ক অটুট রাখা, ঠিক যেভাবে আপনার পরিবারকে ভালবেসে সম্পর্ক অটুট রাখেন।
আল্লাহকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তিনি আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন আপনার কৃতকর্মের কারণে ভবিষ্যতের শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে। আমাদের পিতামাতাও আমাদের ভালবাসেন বলেই সমূহ বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান হতে বলেন।
স্রষ্টার সাথে ভয়ের সম্পর্ক নয়, বরং ভালবাসার সম্পর্কই হবার কথা। তিনি তার সকল সৃষ্টিকে সমানভাবে ভালবাসেন। স্রষ্টাকে ভয়ংকর রূপ দান করেছে ধর্মব্যবসায়ীরা, যাতে আপনি ভয় পেয়ে তাদের কাছে আশ্রয় খুঁজে শিরকে লিপ্ত হতে পারেন।
আমার কথার প্রমাণ আমি নিচের কিছু আয়াতে দিচ্ছি।
১) তাত্তাকুনঃ ২ঃ১৭৯ “তোমাদের জন্য বৃত্তান্তে (ফি আল-কিসাস) রয়েছে জীবন (হায়াতু), হে বোধসম্পন্ন লোকেরা (উলুল আলবাব) যাতে তোমরা সাবধানতা অবলম্বন করো (লাআল্লাকুম তাত্তাকুন)
২) ইত্তাকুঃ ২ঃ৪৮ “সেই দিনের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করো (ইত্তাকু) যখন কেউ কারো কাজে আসবে না..।
৩) ইত্তাকুআল্লাহঃ ২ঃ১৯৪ “ এবং আল্লাহকে ভালোবাসো (ইত্তাকু আল্লাহ) এবং জেনে রাখো যে আল্লাহ সাথে আছেন মুত্তাকিদের।
আল্লাহকে ভালবাসলেই কেবল তাকে পাশে পাবেন। ঠিক তেমনি প্রেমিকাকে পাশে তখনই পাবেন যদি তাকে ভালবাসেন। তাকে ভয় পেয়ে বা ভয় দেখিয়ে জীবনেও তাকে পাশে পাবেন না।
৪) ওয়াক্বিঃ ২ঃ২০১ ওয়াক্বিনা আজাবান নার (আগুনের আজাব থেকে সুরক্ষা করো আমাদের)।
ওয়া-ক্বাফ-ইয়া মূল ধাতুর অর্থ যে “সুরক্ষা করা” তা এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।
৫) ইত্তাকিআল্লাহঃ ২ঃ২০৬ এবং যখন বলা হয় তার উদ্দেশ্যে আল্লাহকে ভালোবাসো (ইত্তাকি আল্লাহ), তারা ইগো/অহংবোধ (ইজ্জাতা) ধরে রাখে অন্যায়ভাবে (বি আলইছমা), তার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট।
ভাসবাসার সম্পর্কের মাঝেও অন্যায় ভাবে ইগো/অহংবোধ ধরে রাখলে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং সারাজীবন শাস্তি পেতে হয়।
৬) ২ঃ২৩৩ “আল্লাহকে ভালোবাসো এবং তোমরা জেনে রাখো যে আল্লাহ ঐ বিষয়ে সবকিছু দেখেন।”
ভালবাসার সম্পর্কে গোপনীয়তার কিছু নেই। অপরপক্ষ ঠিকই সবকিছু জেনে যায়/টের পায়।
পরের পর্বে আরো আয়াতের উদাহরণ দেয়া হবে।