লিতু বাইয়ানাহ্

আরবী بَيِّنَ শব্দের মাধ্যমে আলবানী সহ পৃথিবীর সকল আলেম হাদিস কে জায়েজ করার জন্য সূরা নাহলে ৪৪ ও ৬৪ নাম্বার আয়াত কে দলিল হিসাবে উপস্থাপন করে। আসুন আমরা আলোচিত بَيِّنَ শব্দটি দিয়ে আল্লাহ্ কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটা অনুধাবণের চেষ্টা করি।

                             بين 

আরবী بَيِّنَ শব্দের অর্থ সুস্পষ্ট করা।
আল্লাহ্ এই শব্দটি ব্যবহার করে বলছেন, “এরপর তা(কুরআন) সুস্পষ্ট করার দায়িত্ব আমারই।”
অর্থাৎ আল্লাহ্ তার রাসূলকে বলছেন এই কুরআন তোমাকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে আল্লাহ্ নিজেই বলছেন এই কুরআন সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই সেখানে কি আল্লাহ্ তাঁর রাসূল কে বলতে পারে তুমি কুরআন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট কর???

لَا تُحَرِّكْ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِۦٓ

তোমার জিহবা তাড়াতাড়ি নাড়াবেনা এর সাথে।
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُۥ وَقُرْءَانَهُۥ

নিশ্চয়ই এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমার দায়িত্বে।
فَإِذَا قَرَأْنَٰهُ فَٱتَّبِعْ قُرْءَانَهُۥ

অতঃপর যখন আমি তা পাঠ করি তখন তুমি তার পাঠের অনুসরণ কর।
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُۥ

এরপর তা(কুরআন) সুস্পষ্ট করার দায়িত্ব আমারই। (আল-কিয়ামহ ৭৫:১৬-১৯)

লক্ষ্য করুন بَيِّنَ শব্দ দিয়ে আল্লাহ্ যে তার বিধান কে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন তার প্রমানে নিচের আয়াত গুলি দেখুন।

يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلْخَمْرِ وَٱلْمَيْسِرِۖ قُلْ فِيهِمَآ إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَٰفِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَآ أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَاۗ وَيَسْـَٔلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ ٱلْعَفْوَۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ

লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বলে দাও, “এ দুটিতে বড় পাপ আছে, আবার মানুষের কিছু উপকারও আছে। তবে এর পাপ উপকারের চেয়ে বড়।” তারা কী ব্যয় করবে তাও তোমার কাছে জানতে চায়। তুমি বল, “যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত”। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধানসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

وَلَا تَنكِحُوا۟ ٱلْمُشْرِكَٰتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّۚ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْۗ وَلَا تُنكِحُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا۟ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْۗ أُو۟لَٰٓئِكَ يَدْعُونَ إِلَى ٱلنَّارِۖ وَٱللَّهُ يَدْعُوٓا۟ إِلَى ٱلْجَنَّةِ وَٱلْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِۦۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। ঈমানদার ক্রীতদাসীও মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, তাকে তোমাদের পছন্দ হলেও। আর মুশরিকদের কাছে তোমরা (মেয়েদের) বিয়ে দিও না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। ঈমানদার ক্রীতদাসও মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, তাকে তোমাদের পছন্দ হলেও। ওরা (মুশরিকরা) জাহান্নামের দিকে ডাকে; আর আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন এবং তাঁর বিধানসমূহ মানুষকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُۥ مِنۢ بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُۥۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَآ أَن يَتَرَاجَعَآ إِن ظَنَّآ أَن يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِۗ وَتِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

অতঃপর স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে এরপর স্ত্রী আর এই স্বামীর জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য এক স্বামীকে বিয়ে করে। তারপর সেই (অন্য) স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় তাহলে তারা পুনরায় (বিবাহের মাধ্যমে) পরস্পরের কাছে ফিরে গেলে তাদের কোন পাপ হবে না, যদি তারা মনে করে যে, তারা আল্লাহর বিধান ঠিক রাখতে পারবে। এগুলো আল্লাহর বিধান, যা তিনি জ্ঞানী লোকদের জন্য স্পষ্ট করে দিচ্ছেন।

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمْۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّۗ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْۖ فَٱلْـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبْتَغُوا۟ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمْۚ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلْخَيْطُ ٱلْأَبْيَضُ مِنَ ٱلْخَيْطِ ٱلْأَسْوَدِ مِنَ ٱلْفَجْرِۖ ثُمَّ أَتِمُّوا۟ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيْلِۚ وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَٰكِفُونَ فِى ٱلْمَسَٰجِدِۗ تِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

প্রচলিত অনুবাদ
সাওমের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ, তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা ইতিপূর্বে অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতি করছিলে। পরে তিনি তোমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সংস্পর্শে যেতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বরাদ্দ করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান-সন্ততি) তা কামনা করতে পার। আর কালো রেখা থেকে প্রভাতের সাদা রেখা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ রাতের অন্ধকার চলে গিয়ে ভোরের আলো উদ্ভাসিত না হওয়া পর্যন্ত) তোমরা পানাহার কর। তারপর (পরবর্তী) রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর। আর তোমরা যখন এতেকাফরত থাকবে তখন স্ত্রীদের সংস্পর্শে যেয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা; অতএব, এর কাছে যেয়ো না (এগুলো লংঘনের চেষ্টা করো না)। আল্লাহ এভাবেই তাঁর আয়াত সমূহ মানুষকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেন, যাতে তারা তাকওয়াসম্পন্ন হতে পারে।
(আল-বাকারাহ ২:২১৯,২২১,২৩০,২৮৭)
يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ ٱللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِى ٱلْكَلَٰلَةِۚ إِنِ ٱمْرُؤٌا۟ هَلَكَ لَيْسَ لَهُۥ وَلَدٌ وَلَهُۥٓ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَۚ وَهُوَ يَرِثُهَآ إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌۚ فَإِن كَانَتَا ٱثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا ٱلثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَۚ وَإِن كَانُوٓا۟ إِخْوَةً رِّجَالًا وَنِسَآءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ ٱلْأُنثَيَيْنِۗ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّوا۟ۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌۢ
লোকেরা তোমার কাছে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করছে; বল, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে ফাতাওয়া দিচ্ছেন, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার যদি সন্তান না থাকে আর তার একটি বোন থাকে, তবে রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক সে পাবে, আর সে (মৃত নারী) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে, আর দু’ বোন থাকলে তারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির দু’-তৃতীয়াংশ পাবে, আর যদি ভাই ও বোন দু’ই থাকে, তবে পুরুষ পাবে দু’জন নারীর সমান। আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যাতে তোমরা বিভ্রান্তিতে পতিত না হও। আল্লাহ যাবতীয় ব্যাপারে পূর্ণরূপে অবহিত।(আন-নিসা ৪:১৭৬)

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِيَسْتَـْٔذِنكُمُ ٱلَّذِينَ مَلَكَتْ أَيْمَٰنُكُمْ وَٱلَّذِينَ لَمْ يَبْلُغُوا۟ ٱلْحُلُمَ مِنكُمْ ثَلَٰثَ مَرَّٰتٍۚ مِّن قَبْلِ صَلَوٰةِ ٱلْفَجْرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ ٱلظَّهِيرَةِ وَمِنۢ بَعْدِ صَلَوٰةِ ٱلْعِشَآءِۚ ثَلَٰثُ عَوْرَٰتٍ لَّكُمْۚ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌۢ بَعْدَهُنَّۚ طَوَّٰفُونَ عَلَيْكُم بَعْضُكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
প্রচলিত অনুবাদ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা সাবালক হয়নি তারা যেন (তোমাদের কক্ষে প্রবেশকালে) তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি চায়: ফজরের পূর্বে, যখন তোমরা দুপুরে তোমাদের পোশাক খুলে রাখ তখন এবং এশার পর: তোমাদের একান্তে থাকার তিনটি সময়। এই তিন সময়ের পর (তারা তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করলে তাতে) তোমাদের ও তাদের কোন পাপ হবে না। তোমাদের তো একে অপরের কাছে যাতায়াত করতেই হয়। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধানসমূহ স্পষ্ট করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

لَّيْسَ عَلَى ٱلْأَعْمَىٰ حَرَجٌ وَلَا عَلَى ٱلْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى ٱلْمَرِيضِ حَرَجٌ وَلَا عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمْ أَن تَأْكُلُوا۟ مِنۢ بُيُوتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ ءَابَآئِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أُمَّهَٰتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ إِخْوَٰنِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخَوَٰتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَعْمَٰمِكُمْ أَوْ بُيُوتِ عَمَّٰتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخْوَٰلِكُمْ أَوْ بُيُوتِ خَٰلَٰتِكُمْ أَوْ مَا مَلَكْتُم مَّفَاتِحَهُۥٓ أَوْ صَدِيقِكُمْۚ لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَأْكُلُوا۟ جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًاۚ فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةً طَيِّبَةًۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

অন্ধ, লেংড়া ও রোগীর জন্য কোন বাধা নেই; তোমাদের নিজেদের জন্যও নিজেদের ঘরে কিংবা তোমাদের বাবা, মা, ভাই, বোন, চাচা, ফুফু, মামা বা খালাদের ঘরে অথবা তোমাদের কাছে চাবি আছে এমন ঘরে কিংবা কোন বন্ধুর ঘরে আহার করায় কোন বাধা নেই। সবাই একসাথে খাও কিংবা আলাদা আলাদাভাবে খাও তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন (ঘরে অবস্থানকারী) তোমাদের লোকদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ সালাম দেবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (আন-নূর ২৪:৫৮,৬১)

لَا يُؤَاخِذُكُمُ ٱللَّهُ بِٱللَّغْوِ فِىٓ أَيْمَٰنِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم
بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلْأَيْمَٰنَۖ فَكَفَّٰرَتُهُۥٓ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَٰكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَٰثَةِ أَيَّامٍۚ ذَٰلِكَ كَفَّٰرَةُ أَيْمَٰنِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْۚ وَٱحْفَظُوٓا۟ أَيْمَٰنَكُمْۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

তোমাদের ভুল শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন না; তবে ইচ্ছাকৃত শপথ (করে তা ভঙ্গ) করলে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন। শপথ ভঙ্গের কাফফারার (পাপ স্খালনের) জন্য তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনকে যে ধরনের খাবার দাও তার মধ্যম মানে দশজন মিসকীনকে খাবার দেবে, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান করবে কিংবা একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেবে। কেউ এর কোনটি না পারলে সে তিনদিন রোযা রাখবে। তোমরা কখনো শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফফারা। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধানসমূহ তোমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (আল-মা’য়েদা ৫:৮৯)

সুতরাং
আমরা বুঝতে পারছি সূরা নাহলে لِتُبَيِّنَ বলতে আল্লাহ্ যে ভাবে তার বিধান সমূহ কুরআনে সুস্পট করেছেন ঠিক সেই ভাবে তাঁর রাসূলকে তাঁর মাতৃভাষায় মানুষের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ননা করতে বলেছেন, নিজ থেকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে বলেনি।

وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ ٱللَّهِۚ

বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়।(৪:৬৪)
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمْۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِى مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ
আমি প্রত্যেক রসূলকে তার স্বজাতির ভাষা নিয়ে (ভাষাভাষী করে) পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে (আল্লাহর বার্তা) সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারে। তারপর আল্লাহ যাকে চান বিপথগামী করেন এবং যাকে চান সঠিক পথ দেখান। তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (ইবরাহীম ১৪:৪)

فَإِنَّمَا يَسَّرْنَٰهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ ٱلْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِۦ قَوْمًا لُّدًّا

আর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহপ্রিয় কওমকে তদ্বারা সতর্ক করতে পার।(মারিয়াম ১৯:৯৭)

وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَٰهُ قُرْءَانًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ ٱلْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا

আর এভাবেই আমি আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি এবং তাতে বিভিন্ন সতর্কবাণী বর্ণনা করেছি, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে অথবা তা হয় তাদের জন্য উপদেশ।(ত্ব-হা ২০:১১৩)

وَلَوْ جَعَلْنَٰهُ قُرْءَانًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا۟ لَوْلَا فُصِّلَتْ ءَايَٰتُهُۥٓۖ ءَا۬عْجَمِىٌّ وَعَرَبِىٌّۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ هُدًى وَشِفَآءٌۖ وَٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِىٓ ءَاذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًىۚ أُو۟لَٰٓئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍۭ بَعِيدٍ

আমি যদি এ কুরআনকে অনারবী কুরআন বানাতাম, তবে তারা অবশ্যই বলত, এর আয়াত সমূহ সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হল না কেন? এটা কেমন কথা যে, কুরআন অনারবী এবং রাসূল আরবী? বল, যারা ঈমান আনে তাদের জন্য এটা হেদায়াত ও উপশমের ব্যবস্থা। আর যারা ঈমান আনে না, তাদের কানে ছিপি লাগানো আছে। তাদের জন্য এটা (অর্থাৎ কুরআন) বিভ্রান্তির কারণ। এরূপ লোকদেরকে বহু দূর-দূরান্ত হতে ডাকা হচ্ছে।(ফুসসিলাত ৪১:৪৪)

بِٱلْبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِۗ وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

(রসুল পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট নিদর্শন ও (আসমানি) কিতাব সহ। আর তোমার কাছে স্মরণিকা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষের কাছে যা নাযিল করা হয়েছে তা তাদেরকে পরিষ্কার করে বুঝাতে পার এবং যাতে তারা চিন্তা করে।

وَمَآ أَنزَلْنَا عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِى ٱخْتَلَفُوا۟ فِيهِۙ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

তোমার কাছে কিতাব নাযিল করেছি শুধু এজন্য যে, তারা যে বিষয়ে মতভেদ করে তুমি তাদের জন্য তা স্পষ্ট করবে; আর ঈমানদার লোকদের জন্য তা এক পথ-নির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ হবে।(আন-নাহল১৬:৪৪,৪৬)

أَنَّىٰ لَهُمُ ٱلذِّكْرَىٰ وَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُولٌ مُّبِينٌ

তারা কি করে বুঝবে, অথচ তাদের কাছে এসেছিলেন স্পষ্ট বর্ণনাকারী রসূল।(আদ-দুখান ৪৪:১৩)

وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَاتُنَا بَيِّنَٰتٍۙ قَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَآءَنَا ٱئْتِ بِقُرْءَانٍ غَيْرِ هَٰذَآ أَوْ بَدِّلْهُۚ قُلْ مَا يَكُونُ لِىٓ أَنْ أُبَدِّلَهُۥ مِن تِلْقَآئِ نَفْسِىٓۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّۖ إِنِّىٓ أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّى عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

আর যখন তাদের সামনে আমার আয়াত সমূহ সুস্পষ্টরূপে পাঠ করা হয়, তখন, যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, তারা বলে, ‘এটি ছাড়া অন্য কুরআন নিয়ে এসো। অথবা একে বদলাও’। বল, ‘আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন পরিবর্তনের অধিকার নেই। আমিতো শুধু আমার প্রতি অবতীর্ণ ওহীর অনুসরণ করি। নিশ্চয় আমি যদি রবের অবাধ্য হই তবে ভয় করি কঠিন দিনের আযাবের’। (ইউনুস ১০:১৫)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *