নবী মোহাম্মদ এর জন্ম স্থান মক্কা নিয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত কথা —

মক্কা বনাম বাক্কাঃ

Aal-e-Imran ৩:৯৬

اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبٰرَكًا وَّهُدًي لِّلْعٰلَمِيْنَ ۚ

প্রচলিত অনুবাদ
(৩/৯৬) “নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এঘর , যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।”
অনেক অনুবাদক এই আয়াতের অনুবাদ করতে গিয়ে “বাক্কা” শব্দের অনুবাদ করেছেন “মক্কা”। এটা নিঃসন্দেহে পিউর ম্যানিপুলেশন। ট্র্যাডিশন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই অনুবাদ করার ফলে, অনুবাদকগন এই ইচ্ছাকৃত ভুল অনুবাদ করেছেন। যারা কোরআন সম্পর্কে কিছু জ্ঞান রাখেন তারা জেনে থাকবেন কোরআন শব্দ চয়নের ব্যাপারে খুবই সিলেক্টিভ।
কোরআনে ৪৮:২৪ আয়াতে মক্কা শব্দটা এসেছে।
Al-Fath ৪৮:২৪

وَهُوَ الَّذِيْ كَفَّ اَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْۢ بَعْدِ اَنْ اَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ ؕ وَكَانَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا

প্রচলিত অনুবাদ
তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন।

সুতরাং
আল্লাহ্‌ কেন একই স্থানের জন্য পৃথক দুইটি নাম ব্যাবহার করবেন?
কোরআনে এরকম কোনো উদাহরণ নেই। আল্লাহ্‌ মক্কা শব্দ দিয়ে মক্কাই বুঝিয়েছেন এবং বাক্কা শব্দ দিয়ে বাক্কাকেই বুঝিয়েছেন। বাক্কা শব্দের অর্থ ভিন্ন,মক্কা শব্দের অর্থ ভিন্ন।
এই জিনিসকে গোঁজামিল দিতে যেটা সাধারণত বলা হয়ঃ
ক। মক্কার পূর্ব নাম বাক্কা, অথবা
খ। বাক্কা হচ্ছে মক্কার বিশেষ জনাকীর্ণ একটা জায়গা।
গ। আরবীতে “ম” এবং “ব” পরস্পর পরিবর্তনশীল।
কোনো প্রাক-ইসলামিক কবিতা, আর্কিওলজিকাল রেকর্ড, ডকুমেন্ট- যে কোন কিছু–কোনো প্রমান নেই, শুধু মুখের কথা ছাড়া। কেউ কেউ আবার বলেন আরবীতে “ম” এবং “ব” পরস্পর পরিবর্তনশীল। মনে রাখতে হবে আমরা আল্লাহর কোরআন নিয়ে কথা বলছি। কোরআনের ভাষা ট্র্যাডিশনাল ক্লাসিক্যাল আরবী ভাষা থেকেও উন্নত।
এখন দেখা যাক নবী মুহাম্মদ মক্কায় বাস করতো এই কথাটি কোরআন দ্বারা সমর্থিত কি না?

বিভিন্ন ফলঃ

কোরআনে যে ফল গুলির কথা এসেছে তা হচ্ছেঃ
১। খেজুর
২। জলপাই
৩। ডুমুর
৪। ডালিম
৫। আঙুর।
খেজুর ছাড়া বাকী ৪টি ফল বর্তমান মক্কাতে জন্মায় না।
Al-Mu’minun ২৩:১৯

فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنّٰتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ ۘ لَكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ۙ

প্রচলিত অনুবাদ
অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যে এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।

সঠিক অনুবাদ
(২৩/১৯) “অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যে এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাকো”।
An-Nahl ১৬:১১

يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

(১৬/১১) “এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।”

কোথায় পাম গাছের বাগান?
কোথায় আঙুর?
কোথায় প্রচুর ফল ফলাদি?
মক্কায় এই গুলি কখনোই জন্মায়নি।
Al-An’am ৬:৯৯

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَاَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا ۚ وَمِنَ النَّخْلِ مِنْ طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَّجَنّٰتٍ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ اُنْظُرُوْۤا اِلٰي ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَيَنْعِهٖ ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكُمْ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।

(৬/৯৯) “….. খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য করো যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য করো।”……৷

অর্থাৎ,
নবী যেখানে বাস করতেন সেখানে এসব ফল প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মায়, সেইখানেই পরিপক্ক হয়। আল্লাহ্‌ নবীকে এইখানে বলেছেন “উনযুর” অর্থাৎ লক্ষ্য করো, ফল ধরা থেকে পাকা পর্যন্ত। বর্তমান মক্কায় এটা কোনভাবেই সম্ভব না।
আল্লাহ্‌ নবীর বাসস্থানের যে বর্ণনা দিয়েছেন- যেখানে বিভিন্ন ফল ফলাদির জন্ম, যা নবী আহার করতেন এবং যার মধ্যে নিদর্শন আছে, সেটা মক্কার সাথে কোনভাবেই মিলে না।
কোরআনে এরকম প্রচুর আয়াত আছে। এসব আয়াত দ্বারা আল্লাহ্‌ বুঝিয়েছেন, এসব ফল ফলাদি, শস্য নবী যে এলাকায় থাকতেন সেখানে জন্মায়, নবী সেগুলি আহার করতেন এবং এর মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন আছে। আপনি যতই গোড়া হোন না কেনো আপনি কখনোই এই বর্ণনা বর্তমান মক্কার সাথে মিলাতে পারবেন না। এরকম রিলেটেড আরও কিছু আয়াত দেখুন-
১৭:৯০-৯১,
৩৬:৩৩-৩৪,
৬:৯৯,
৩৯:২১

শস্য এবং কৃষিঃ

এটাও একই রকম ইন্টারেস্টিং। মুলত আল্লাহ্‌ নবীর আবাস স্থলের কৃষির বর্ণনা দিয়েছেন এবং ফসল সংগ্রহের সাথে সাথেই এর পাওনা পরিশোধ করে দিতে বলেছেন।
Az-Zumar ৩৯:২১

اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللّٰهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَكَهٗ يَنَابِيْعَ فِي الْاَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرٰىهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهٗ حُطَامًا ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰي لِاُولِي الْاَلْبَابِ

তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।

(৩৯/২১) “তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণা সমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন।”………।

এখানে আল্লাহ্‌ নবীকে শস্য আবর্তনের কথা বলেছেন এবং বার বার বলছেন শস্যের বেড়ে উঠা থেকে পরিবর্তিত হয়ে হলুদ রং হওয়া পরিবর্তন লক্ষ্য করতে। প্রশ্ন হচ্ছে মক্কায় কি কোনো শস্য জন্মে?
যদি না জন্মে তবে কিভাবে নবী লক্ষ্য করবে শস্যের রং কিভাবে পরিবর্তন হয়।
Al-An’am ৬:১৪১

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنّٰتٍ مَّعْرُوْشٰتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشٰتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ ۫ۖ وَلَا تُسْرِفُوْا ؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ ۙ

(৬/১৪১) “তিনিই উদ্যান সমূহ সৃষ্টি করেছে-তাও, যা মাঁচার উপর তুলে দেয়া হয়, এবং যা মাঁচার উপর তোলা হয় না এবং খর্জুর বৃক্ষ ও শস্য ক্ষেত্র যেসবের স্বাদবিশিষ্ট এবং যয়তুন ও আনার সৃষ্টি করেছেন-একে অন্যের সাদৃশ্যশীল এবং সাদৃশ্যহীন। এগুলোর ফল খাও, যখন ফলন্ত হয় এবং হক দান করো কর্তনের সময়ে এবং অপব্যয় করো না….।”

এই আয়াতে বর্ণিত খেজুর ছাড়া কোনো ফল বা শস্যই বর্তমান মক্কায় জন্মে না। তাহলে শস্য পাকার পর কিভাবে খাওয়ার প্রশ্ন আসে আর যেহেতু ফসলই জন্মে না সেহেতু তা সংগ্রহের কোনো প্রশ্ন আসে না এবং এর ফলে ফসল সংগ্রহের সময় এর পাওনা পরিশোধ করার কথা এইখানে বর্তমান মক্কার সাথে সমঞ্জস্য পূর্ণ নয়। ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ায় যে, কাবুলে শস্য জন্মালে তার পাওনা আল্লাহ্‌ ঢাকার মানুষকে পরিশোধ করতে বলেছেন। ব্যাপারটা খুবই অযৌক্তিক।
তাছাড়া এখন থেকে ১৪০০শত বছর পূর্বে বর্তমান যেটাকে মক্কা বলা হচ্ছে তাতে কোন জনমানব ছিল বলে প্রমাণিত নয়।

ধ্বংস নগরীঃ

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী নবী যে জায়গায় বাস করতেন, তার আশেপাশের অনেক শহর আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।
Al-Ahqaf ৪৬:২৭

وَلَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰي وَصَرَّفْنَا الْاٰيٰتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ –
(৪৬:২৭)” আমি তোমাদের আশেপাশের জনপদ সমূহ ধ্বংস করে দিয়েছি এবং বার বার আয়াত সমূহ শুনিয়েছি, যাতে তারা ফিরে আসে।”

এখানে আরবী “হাওলা” শব্দটার অনুবাদ করা হয়েছে ‘surrounds’। এই শব্দ কোরআনে অনেক জায়গায় ব্যবহার হয়েছে। যাদের সন্দেহ আছে একটু কষ্ট করে কোরআন খুলে দেখে নিতে পারেন। বর্তমান মক্কার আশেপাশে এই রকম কোন ধ্বংস প্রাপ্ত শহর পাওয়া যায়না।
Al-‘Ankabut ২৯:৩৮

وَعَادًا وَّثَمُوْدَا۠ وَقَدْ تَّبَيَّنَ لَكُمْ مِّنْ مَّسٰكِنِهِمْ ۟ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطٰنُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَكَانُوْا مُسْتَبْصِرِيْنَ ۙ

আমি আ’দ ও সামুদকে ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের বাড়ী-ঘর থেকেই তাদের অবস্থা তোমাদের জানা হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কর্মকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল, অতঃপর তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল এবং তারা ছিল হুশিয়ার।

(২৯:৩৮) “আমি আ’দ ও সামুদকে ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের বাড়ী-ঘর থেকেই তাদের অবস্থা তোমাদের জানা হয়ে গেছে।”………

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আদ এবং সামুদ কোথায়? বর্তমান মক্কার আশেপাশে কোনো শহরের নাম আদ, সামুদ আছে কি?
মক্কা থেকে দেখা যায়?

লুতের শহরঃ
Hud ১১:৮২

فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ ۙ مَّنْضُوْدٍ ۙ

(১১;৮২-৮৩) “অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছালো, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। যার প্রতিটি তোমার পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত ছিল। আর সেই পাপিষ্ঠদের থেকে খুব দূরেও নয়।”
Hud ১১:৮৩

مُّسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ ؕ وَمَا هِيَ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ بِبَعِيْدٍ

যার প্রতিটি তোমার পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত ছিল। আর সেই পাপিষ্ঠদের থেকে খুব দূরেও নয়।

এখানে আল্লাহ্ বলছেন,লুতের শহর ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। লুতের শহর ধ্বংসের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যূৎপাত, প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান মক্কার আশেপাশে লুতের শহর কোথায়?
লুতের শহর নবী যেখানে বাস করতেন সেখান থেকে বেশী দূরে নয়। আল্লাহ্‌ নবী এবং তার এলাকার অধিবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ
(৩৭ঃ১৩৩-১৩৮): “নিশ্চয় লূত ছিলেন রসূলগণের একজন।….. অতঃপর অবশিষ্টদেরকে আমি সমূলে উৎপাটিত করেছিলাম। তোমরা তোমাদের ধ্বংস স্তুপের উপর দিয়ে গমন করো ভোর বেলায় এবং সন্ধ্যায়, তার পরেও কি তোমরা বুঝবেনা?”
অর্থাৎ,
লুতের শহর নবী যেখানে বাস করতেন সেখান থেকে এমন দুরত্বে ছিলো যে নবী এবং তার এলাকার লোকজন সকাল-সন্ধ্যা লুতের শহরের ধ্বংসাবশেষে পার হতে পারতো। এর অর্থ হচ্ছে, নবী যেখানে বাস করতেন, সেখান থেকে লুতের শহর খুব কাছাকাছি।
যদিও অনেকে বলে থাকেন এটা সিরিয়াতে ট্রেড জার্নির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এরকম কোনো ইঙ্গিত আমরা কোরআন থেকে পাইনা। এই ধরণের কথা বলার কারন হচ্ছে, জোর করে জিওগ্রাফি মিলানোর চেষ্টা।

Al-Furqan ২৫:৪০

وَلَقَدْ اَتَوْا عَلَي الْقَرْيَةِ الَّتِيْۤ اُمْطِرَتْ مَطَرَ السَّوْءِ ؕ اَفَلَمْ يَكُوْنُوْا يَرَوْنَهَا ۚ بَلْ كَانُوْا لَا يَرْجُوْنَ نُشُوْرًا

তারা তো সেই জনপদের উপর দিয়েই যাতায়াত করে, যার ওপর বর্ষিত হয়েছে মন্দ বৃষ্টি। তবে কি তারা তা প্রত্যক্ষ করে না? বরং তারা পুনরুজ্জীবনের আশঙ্কা করে না।

Al-Furqan ২৫:৪১

وَاِذَا رَاَوْكَ اِنْ يَّتَّخِذُوْنَكَ اِلَّا هُزُوًا ؕ اَهٰذَا الَّذِيْ بَعَثَ اللّٰهُ رَسُوْلًا
তারা যখন আপনাকে দেখে, তখন আপনাকে কেবল বিদ্রুপের পাত্ররূপে গ্রহণ করে, বলে, এ-ই কি সে যাকে আল্লাহ ‘রসূল’ করে প্রেরণ করেছেন।
(২৫:৪০-৪১) “তারা তো সেই জনপদের উপর দিয়েই যাতায়াত করে, যার ওপর বর্ষিত হয়েছে মন্দ বৃষ্টি। তবে কি তারা তা প্রত্যক্ষ করে না?
বরং তারা পুনরুজ্জীবনের আশঙ্কা করে না। তারা যখন আপনাকে দেখে, তখন আপনাকে কেবল বিদ্রুপের পাত্র রূপে গ্রহণ করে, বলে, এ-ই কি সে যাকে আল্লাহ ‘রসূল’ করে প্রেরণ করেছেন?”
এই আয়াতে নবীর এলাকার লোকজনদের কথা বলা হয়েছে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে–

১। নবী যে এলাকায় বাস করতেন তা মুলত এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড ছিল যেখানে বিভিন্ন ফল ফলতো, বিভিন্ন ফসল হতো। আল্লাহ্‌ বলেছেন, এই ফল এবং ফসলের মধ্যে বিভিন্ন নিদর্শন আছে এবং এই ফল এবং ফসল সংগ্রহের সময় এর পাওনা পরিশোধ করে দিতে।
২। নবী যে এলাকায় বাস করতেন তার আশেপাশের অনেক শহর ছিল যা আল্লাহ্‌ ধ্বংস করে দিয়েছেন। সে বিনিষ্ট শহর গুলির ধ্বংসাবশেষ গুলি অবিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন ছিল। লুতের শহর এমন এলাকায় ছিলো যার দূরত্ব নবী যেখানে বাস করতেন সেখান থেকে বেশ কাছে।
এই দুইটি পয়েন্ট যদি আমরা একসাথে করে দেখি, তবে বর্তমান মক্কার সাথে এর কোন মিল পাওয়া যায় না।

মক্কা সম্পর্কে যতটুকু জানিঃ

১। বর্তমান মক্কার আবহাওয়া কোরআনে বর্ণিত ফল এবং ফসল জন্মানোর জন্য উপযুক্ত না।
২। ৮ম শতাব্দীর আগে পর্যন্ত কোনো ইতিহাসবিদদের বর্ণনায় মক্কা নামক কোন শহরের নাম পাওয়া যায় না। লেটেস্ট ৭৪০ সালে বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা শব্দটা এসেছে।
৩। রোমানরা এরাবিয়ার অনেক ম্যাপ তৈরী করে রেখে গিয়েছে, সেখানে মক্কা নামক কোনো শহরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
৪। বর্তমান মক্কার আশেপাশে কোরআনে বর্ণিত এই রকম কোনো ধ্বংস প্রাপ্ত শহরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
৫। যত রকম প্রি- কোরানিক ইনস্ক্রিপশন আছে, তার কোনটাতেই মক্কা বা বাক্কা বলে কোন শব্দ নেই।
৬। হজ্জ্বের আহবান নবী ইব্রাহিমের সময় থেকে। কিন্তু নবী ইব্রাহিমের পরবর্তী থেকে নবী আহমদ /মুহাম্মদের আগের পর্যন্ত কোনো নবী/রাসুল হজ্জ করার জন্য মক্কায় এসেছেন এরকম কোন ডকুমেন্ট নেই।
৭। নবী ইব্রাহিম তার স্ত্রী এবং পুত্রকে বর্তমান মক্কায় রেখে আসেননি।
অর্থাৎ,
নবী ইব্রাহিমের পরিবার দুইভাগে বিভক্ত, একভাগ জেরুজালেমে আর একভাগ মক্কায় এটা সম্পূর্ণ জালিয়াতি। এর উৎস ওল্ড টেস্টামেন্ট। আমরা উহা কপি করে আমাদের ভার্সন বানিয়েছি। এরকম কোনো প্রমান বা ইঙ্গিত কোরআনে পাওয়া যায় না। এরকম আরও অসংখ্য ইতিহাস আছে, সেগুলো বলতে গেলে দেখা যাবে – কেঁচো খুড়তে সাপ বের হবার অবস্থা হবে।
আপাততঃ সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

শেষ কথাঃ

নবী মোহাম্মদের/আহমদ জন্ম কত সালে বা উনি কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছেন- এটা মুল ধর্মীয় বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি না। এটার সাথে পাপ-পুন্য, মুসলমানদের কর্তব্য, দ্বীনের পথে চলা –এসবের সাথে সম্পর্কিত না। উনি যত সালেই জন্ম গ্রহণ করে থাকুক বা যেখানেই জন্ম গ্রহণ করে থাকুক, উনার আদর্শ কোরআন আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। এই লেখাটার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে নবী মুহাম্মদের জন্ম সময় এবং জন্মস্থান নিয়ে প্রচলিত মতবাদ কোরআন দ্বারা সমর্থিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *