ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ‘কুরবানী’ শব্দটি আরবী ‘কুরবানা’ শব্দের স্থলে ব্যবহৃত হয়। ‘কুরবানা’ (৫:২৭, ৪৬:২৮) শব্দটি ‘কুরব’ মূলধাতু থেকে নির্গত, যার অর্থ হচ্ছে নৈকট্য। তাই আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীয়তসম্মত পন্থায় আদায়কৃত বান্দার যেকোন আমলকে আভিধানিক দিক থেকে ‘কুরবান’ বলা যেতে পারে।
কিন্তু পশু হত্যা তথা ভক্ষণ বৈধ করতে যেসকল আয়াতের অপব্যাখ্যা করা হয় তা দেখা যাক –
সুরা হজ্জ ২২:৩৪ –
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌ فَلَهُۥٓ أَسْلِمُوا۟ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ
বিকৃত অনুবাদ –
“প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও”
উপরোক্ত আয়াতের আরবিতে কোথাও ‘কুরবানী’ শব্দটিই নেই তথা জন্তু শব্দটিও নেই। ‘মানসাকা’ শব্দের অর্থ হলো নিয়ম/রীতিনীতি। আর “বাহিমাতিল আনামি ” শব্দের অর্থ হলো নির্জীব/অচেতন নেয়ামত (হালাল খাবার)।
সঠিক অনুবাদ হবে –
“আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমরা নিয়ম করে দিয়েছি যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে সেসব অচেতন নেয়ামতের (হালাল খাবার) উপর যা আল্লাহ তাদেরকে রিজিক হিসেবে দিয়েছেন। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও”।
সুরা হজ্জ ২২:২৮
لِّيَشْهَدُوا۟ مَنَٰفِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ فِىٓ أَيَّامٍ مَّعْلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِۖ فَكُلُوا۟ مِنْهَا وَأَطْعِمُوا۟ ٱلْبَآئِسَ ٱلْفَقِيرَ
বিকৃত অনুবাদ –
“যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও”
সঠিক অনুবাদ হবে –
“যেন তারা নিজেদের কল্যাণ সমুহ প্রত্যক্ষ করে এবং তিনি তাদেরকে অচেতন নেয়ামত (হালাল খাদ্য) থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট সময় সমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও”
“আর আহার করো তা থেকে যা আল্লাহ রিজিক হিসেবে দিয়েছেন” (২:১৭২, ৫:৮৮) – এটা আল্লাহর আদেশ।
এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য কি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন ?
আল্লাহ খাওয়ার জন্য রিজিক হিসেবে কি দিয়েছেন তা এই লেখনীর শেষে উল্লেখ করা হলো।
কুরবানীর নামে পশু হত্যা করা তো দূরের কথা সাধারণ অবস্থায় কেউ পশুর মাংস খেতে পারে না, কারণ আল্লাহ মৃত পশু (মাইতা) হারাম করেছেন (২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫)।
কুরআনে তিন ধরণের খাবার আছে – হারাম, আর্দি ও হালাল (২:৬১, ৫:১, ৬:১৪৫)। ফল হলো জান্নাতি তথা হালাল খাবার।ফল এই জন্য জান্নাতি কারণ জান্নাতেও ফল থাকবে পৃথিবীর মতো (২:২৫)। জান্নাতিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে তারা পৃথিবীতে ফলাহারি থাকবে (২:২৫), যা আল্লাহ রিজিক হিসেবে দিয়েছেন (২:২২, ২:১২৬, ৬:১৪১, ২৮:৫৭, ১৪:৩২…) এবং ফল হলো উত্তম রিজিক (১৬:৬৭)।