পর্ব: ১৭

কাবা, মক্কা, বাক্কা,বাইত পর্ব:৩

কাবাঘর কেন্দ্রিক আরেকটি প্রচলিত মিথ হল হযরত ইব্রাহিম আঃ তার কতক সন্তানকে মক্কার মরুভুমিতে কাবা ঘরের পাশে বসতি করিয়েছেন। এই দাবির সপক্ষে তারা ১৪:৩৭ নং আয়াতের মনগড়া আনুবাদ উপস্থাপন করে। চলুন দেখি কি আছে ১৪:৩৭ নং আয়াতের সঠিক অনুবাদে।

“رَّبَّنَاإِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ”(14:37)

রাব্বানা “رَّبَّنَا” অর্থ আমাদের প্রভু/আমাদের পালনকর্তা। পরবর্তী “إِنِّي” (ইন্নি) শব্দটি কুরআনে বিকৃত করে উত্তম পুরুষ একবচন সর্বনাম হিসেবে “আমি (I)” বা “আমার আছে (I have)” , অর্থে অনুবাদ করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি সকল অনুবাদকারী পন্ডিতরাও জানে যে উত্তম পুরুষের একবচন সর্বনাম হিসেবে আরবি ভাষায় “اَنَا” শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যা কুরআন নাযিলের পর থেকে এবং এমনকি তার আগে থেকেই আরবী ভাষায় একটি স্বীকৃত এবং গ্রহণযোগ্য উত্তম পুরুষের একবচন সর্বনাম।

লক্ষণীয়“إِنِّي”-এর বিকৃত অর্থকে বৈধ করার জন্য আমাদের আলেমগণ তাদের ব্যাখ্যায় (তাফসীরে) মিথ্যার ঢালী সাজিয়েছেন যে, অশিক্ষিত পশ্চাৎপদ আরব বেদুইনরা (গ্রামবাসী) “أنا” এর পরিবর্তে “إِنِّي” বলত। এই পণ্ডিতদের কেউ বলেছেন ফিলিস্তিনে, কেউ বলেছেন মিশরে, কেউ বলেছেন তিউনিসিয়ায়, কেউ বলেছেন লেবাননে এবং কেউবা বলেছেন দামেস্কে “أنا” এর পরিবর্তে “إِنِّي” ব্যাবহৃত হয়।

একটি মিথ্যাকে ঢেকে রাখার জন্য আমাদের আলেমগণ তাদের মিথ্যার ঝুরিতে অর্থাৎ তাফসীরে শত শত মিথ্যার উদ্ভাবন করেছেন, কিন্তু তারা তাদের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়েও সত্যকে পরিবর্তন করতে পারেনি। কারণ আরব বেদুইনরা যারা সঠিক আরবিতে কথা বলে তারা “أنا” শব্দটি “আমি (I)” অথবা “আমি হই (I am)” অর্থে ব্যবহার করে। এছাড়াও, ফিলিস্তিন, মিশর, তিউনিসিয়া, লেবানন এবং দামেস্ক সহ আরব বিশ্বে “إِنِّي” কখনো “أنا” এর পরিবর্তে “আমি (I)”, “আমি হই (I am)” বা “আমার আছে (I have)” অর্থে ব্যবহার করে না।

যেখানে, “إِنِّي” হল ي + إِن এর সংমিশ্রণ আর “إِن” মানে “যা (that)” এবং “ي” হল উত্তম পুরুষের একবচনে কর্তৃবাচক সর্বনাম যার অর্থ “আমার (my)”। এই “ي”-এর সঠিক ব্যবহার “رَبِّی”- শব্দগুচ্ছে দেখা যায়, যা সঠিকভাবে অনুবাদ করা হয় “আমার রব”, “আমার প্রভু” বা “আমার পালনকর্তা”।

এছাড়াও, এর গঠন অনুসারে “إِنِّي” এর প্রত্যয় “ي” (ইয়া) “কোন কিছুর একটি অংশ” বা “কোন কিছুর একটি বিষয়” হিসেবে ‘কর্তৃবাচক সর্বনাম (personal subject pronoun)’ কেও বোঝায় যার সহজ অনুবাদ হল “র/এর (of)” যেমন “عرب” (আরব) এর বিষয়কে ی+عرب = عربی (আরাবি) অর্থ আরবের (of Arab) বা “یمن” (ইমেন) এর বিষয়কে ی+یمن = یمنی (ইয়ামিনি) অর্থ ইয়ামেনের ইত্যাদি বলা হয়।

পক্ষান্তরে “إِنِّي” এর “إِنِّ” অর্থ “যা (that)”। অতএব, “إِنِّي” বাক্যাংশের সঠিক আভিধানিক অর্থ “যা আমার (that my)” বা “যার (that of)”।

তাছাড়া “إِنِّي” (ইন্নি) ক্রিয়া বিশেষন (adverb) হিসেবে, ‘এযাবৎ (hitherto)’, ‘এখনও (yet)’, ‘এখন পর্যন্ত (till now)’, ‘আজ পর্যন্ত (till today)’, ‘বর্তমান সময় পর্যন্ত (till present time)’ ইত্যাদি অর্থে এবং একটি বিশেষণ (adjective) হিসাবে ‘বর্তমান (current/ present)’ অর্থে ব্যাবহৃত হয়।

অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য (imperative verbal noun) “أَسْكَنتُ” (আসকন্তু) শব্দটি “سکن” (ছিন,কাফ নুন) থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হল :-

১.কোন কিছু দৃঢ়ভাবে আটকানো (to fix something),
২.মাটিতে কিছু প্রোথিত করা (to dig something in the ground),
৩.কোন কিছুকে স্থির করা (to stable something),
৪.প্রতিষ্ঠা করা (to establish),
৫.ন্যায়সঙ্গত করা (to moderate),
৬.বোঝাই করা(to load) ,
৭.থাকার জায়গা (to place to remain), ৮.মেনে চলা (to abide),
৯.বশ্যতা (submissiveness),
১০.নম্রতা (lowliness)
১১.এবং মেনে চলা (to comply with)।

ছুরি কে আরবীতে “سکین” (সাকিন) বলা হয় যা একই মূল শব্দ “سکن” (ছাকানা) থেকে উদ্ভূত এবং এর ক্রিয়াপদ “سَکَنَ” (ছাকানা), “أَسْكَن” (আছকান) বা “أَسْكَنتُ” (আছকান্তু) ইত্যাদির সক্রিয় ক্রিয়াপদ।

বহুল পরিচিত “مسکین” (মিছকিন) শব্দটিও “سکن” শব্দের সঠিক অর্থকে চিত্রিত করে। এমন একজনকে “مسکین” বলা হয় যার সহায় সম্বল বিচ্ছিন্ন হয়েছে। “سکون” (সুকুন) শব্দটি “سکن” এর ফলাফল (product)। সুতরাং “سکون” (সুকুন) শব্দটি ঐ অবস্থাকে বর্ননা করে যখন আপনি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং শান্তভাবে অবস্থান করেন।

মক্কার পৌত্তলিক উপাসনালয় বা বেআইনি মসজিদের (المسجد الحرام) রক্ষাকারীরা কুরআনের শব্দগুচ্ছ “أَسْكَنتُ” (আছকান্তু) এবং এর মূল “سکن” এর অনুবাদে অনুরূপ ফারসি শব্দ “ساکن” (সাকিন) দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছে এবং আরবি শব্দ “سکن” (ছাকানা) এবং এর থেকে উতপন্ন শব্দের বিকৃত অর্থ করেছে “স্থায়ী বসতি স্থাপন/পূনর্বাসিত (settled)”, “জনবসতি (populate)”, “বাসা (lodge)” এবং “বাস করা (live)” ইত্যাদি যাতে তারা মক্কার পৌত্তলিক উপাসনালয়ের কাছে হযরত ইব্রাহিম ও তাঁর সন্তানদের মিথ্যা ভাবে বসতি স্থাপনের কথা বলতে পারে। অবশেষে ইব্রাহিম এবং তার পুত্র ইসমাইলের নাম ব্যবহার করে বলতে পারে যে তারা পৌত্তলিকতার ধর্মে মসজিদুল হারাম (المسجد الحرام) নামে পরিচিত পৌত্তলিকতার কেন্দ্র তৈরি করেছিলেন।

অতএব, আরবি মূল “سکن” (ছাকানা) ও এর ডেরিভেটিভের সাথে ফারসি শব্দ ساکن (সাকিন) এর কোন সম্পর্ক নেই। ইব্রাহিম এবং তার সন্তানদের বাসস্থান মক্কায় বলার জন্য কুরআনের অনুবাদে ফার্সি অর্থ সন্নিবেশ করা হয়েছে। যাতে পৌত্তলিকরা তাদের অন্ধকার যুগের মিথ্যা ধর্ম এবং এর কেন্দ্রীয় উপাসনালয় নিষিদ্ধ মসজিদ (المسجد الحرام) এর ন্যায্যতা প্রমাণ করতে পারে।

সুতরাং “مسکین” (মিছকিন) শব্দটি আমাদের পৌত্তলিক পন্ডিতদের প্রতারণা বোঝার জন্য যথেষ্ট যারা “أَسْكَنتُ” (আছকান্তু) এর অর্থ করেছে “স্থায়ী বসতি স্থাপন / পূনর্বাসিত”। এবং মিথ্যা ভাবে “إِنِّي” (ইন্নি) অর্থ করেছে “নিশ্চয়ই আমি”। যার মাধ্যমে তারা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর একটি মনগড়া বক্তব্য উদ্ভাবন করেছে যে তিনি মক্কার অনুর্বর উপত্যকার কাছে তাঁর বংশধরদের বসতি স্থাপন করেছেন।

পরবর্তী বাক্যাংশ “مِن ذُرِّيَّتِي” এর অব্যয় “مِن” (মিন) অর্থ “এর (of)/থেকে (from)” এবং “ذُرِّيَّتِي” (জুররিয়াতি) অর্থ “আমার সন্তান (my children)” বা “আমার বংশধর (my progeny)”।

পরের বাক্যাংশ “بِوَادٍ” (দ্বি ওয়াদিন) যেখানে অব্যয়”بِ” (বি) যার অর্থ “সহ (with)/দ্বারা (by)” এবং “وَادٍ” (ওয়াদিন) হল “وَد” (ওয়াদ) এর একটি সক্রিয় ক্রিয়াপদ বা কর্তা যার অর্থ অভিলাষ/অভিপ্রায় (love), ভক্তি/ প্রার্থনা/ উৎসাহ (devotion) এবং অনুরাগ/ আগ্রহ/ প্রবনতা (inclination) ইত্যাদি। হিন্দুদের দেবতা শিব এবং কাবাতে স্থাপিত কালো পাথর “الحجرالاسود” একই আরবি শব্দ “وَد” (ওয়াদ) থেকে এসেছে যা কুরআনে দেবতা “وَد” এর ভক্তি ও ভালোবাসার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআনের ৭১:২৩ আয়াতে এই দেবতা ওয়াদ্দকে “وَدًّا وَلَا سُوَاعًا” শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের আলোচ্য আয়াত ১৪:৩৭-এর “وَادٍ” (ওয়াদিন) শব্দটি হযরত নূহ (আঃ) এর সময় থেকে ওয়াদ্দ (وَدًّا) দেবতার প্রতি ভক্তি, ভালবাসা, ঝোঁক এবং উন্মাদনা থেকে এসেছে। হযরত নূহ (আঃ) ওয়াদ্দ (وَدًّا) দেবতার উপাসনা ও ভক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু তিনি এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর ওয়াদ্দের (وَدًّا) প্রেমিক ও ভক্তরা বিভিন্ন রূপে এর পূজা শুরু করেছিলেন। নবী ওয়াদ্দ (وَدًّا) এর উপাসনালয়টি ভেঙে দিয়েছিলেন কিন্তু এর ভক্তরা এটিকে কালো পাথরের হাজরে আসওয়াদের আকারে কাবার দেয়ালে পুনঃস্থাপিত করেছে। মুসলমানরা যখন কাবার দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে এবং যখন কাবার পাথরের কাঠামো তারা প্রদক্ষিণ করে তখন তারা এর পূজা করে। একই দেবতা ওয়াদ্দ (وَدًّا) সমস্ত হিন্দু মন্দিরে পাওয়া যায় এবং আমাদের মসজিদের মিনার গুলিতে তার চিহ্ন এবং অর্ধচন্দ্রের আকারে মূর্তি স্থাপন করা হয় যার নীচে আমরা আমাদের প্রার্থনাকে ওয়াদ (وَدًّا) (ভক্তি) বলে থাকি।

সুতরাং
দুষ্ট অনুবাদক এবং শয়তান পণ্ডিতরা কুরআনিক বাক্যাংশ “بِوَادٍ” কে বিকৃত করে ১৪:৩৭ আয়াতের মিথ্যা অনুবাদে মক্কার “উপত্যকা” যুক্ত করেছে।

পরের শব্দ হল “غَيْرِ” অর্থ: কোন কিছুই নয় (none), না (no), নয় (not), ব্যতিত (without), বহিরাগত (outsider) এবং “ذِي” (জি) কাউকে বা কোন কিছু যা দূর থেকে দেখা যায় যেমন নির্দেশক বিশেষ্য “সেই/যা (that)” সেইসাথে কোন বস্তু বা ব্যক্তির কর্তৃবাচক সর্বনাম যেমন কে( who), যা (which), যে (that) এবং যার (whose) ইত্যাদি। একই শব্দ “ذِي” (জি) দ্বারা কিছু ধারণ করা বা থাকা বোঝায় এবং তাদের বোঝায় যাদের কাছে কিছু আছে বা যারা কিছু ধারন করে যেমন “ذی شعور” (জি শাওর) অর্থ যিনি উপলব্ধি করেন, কোনকিছু অনুভব করেন, যিনি লক্ষ্য করেন বা যার তীক্ষ্ণতা আছে বা তীক্ষ্ণ হয়েছেন, এবং “ذی عقل” (জি আকাল) মানে যিনি বুদ্ধিমান বা যার প্রজ্ঞা আছে।

পরবর্তী শব্দ “زَرْعٍ” (জারইন) অর্থ রোপন/ প্রতিস্থাপন (an implantation), উৎপাদন / বৃদ্ধি (grow) অথবা চাষবাস/ আবাদ (an agriculture)।
সুতরাং, “غَيْرِ ذِي زَرْعٍ” শব্দের সঠিক অর্থ হল “কোনকিছু বা কাউকে প্রতিস্থাপন ব্যাতিত”।

যেখানে, “عِندَ” (ইন্দা) অর্থ হল ‘-এ/ -তে/ -য় (at)’, ‘উপরে (on)’, ‘কাছে (near)’, ‘ভিতর (within), ‘উপর (upon/ onto)’, ‘জুড়ে (across)’, ‘প্রতি (to)’, ‘দিকে (towards)’, ‘থেকে/ হতে (from)’ ইত্যাদি।

পরবর্তী বাক্যাংশ “بَيْتِكَ” এর সর্বনাম “كَ” (কা) অর্থ তোমার (your) এবং “بَيْت” (বাইত) এর সঠিক অর্থ সংবিধান (constitution), সনদ (charter), আশ্রয় (shelter) এবং কল্পিত ছাতা (virtual umbrella)।

পরবর্তী শব্দ “الْمُحَرَّمِ” হল কর্তৃবাচক বিশেষ্যে (subject noun) যার সঠিক অর্থ হল ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়’। এছাড়াও, “الْمُحَرَّمِ” (আল মুহাররামি) এর প্রথম অক্ষর “مُ” (মীম) এর উপর স্থাপিত কারক নির্দেশক হরকত দাম্মা বা পেশটি তার কর্তা “رَّبَّنَا” কে বুঝায় । অন্যদিকে “الْمُحَرَّمِ” (আল মুহাররামি) এর শেষ অক্ষর “مِ” (মীম) এর নিচে কারক নির্দেশক হরকত কাসরা বা যেরটি এটিকে সম্বন্ধসুচক কারকে পরিণত করেছে। তাই, “الْمُحَرَّمِ” (আল মুহাররামি) হল “رَّب” (প্রভু/প্রতিপালক) এর নিষেধাজ্ঞা যা তাঁর সংবিধান বা সনদ দ্বারা আরোপিত হয়েছে।

পরবর্তী “بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ” (বাইতি কাল মুহররম) শব্দগুচ্ছ হল আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার সনদ (Allah’s charter of prohibition), যা মিথ্যা ভাবে অনুবাদ করা হয়েছে “আপনার পবিত্র ঘর”, অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্র ঘর। অথচ, “بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ” (বাইতি কাল মুহররম) হল সমগ্র বিশ্বের শান্তি বা নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুরূপ পরিভাষা নিষেধাজ্ঞার সনদ (charter of prohibition) ব্যাবহার করে যা আপনি যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে দেখে নিতে পারেন।

পরবর্তী শব্দগুচ্ছ “لِيُقِيمُواْ” এর অব্যয় “لِ” অর্থ জন্য (for) /প্রতি (to) এবং “يُقِيمُواْ” কর্মবাচ্যমূলক বর্তমান কালের ক্রিয়া যার গঠনে “ذُرِّيَّتِي” এর একটি সর্বনাম “واْ” যুক্ত আছে। অতএব, “لِيُقِيمُواْ” এর সঠিক অর্থ হল সরল করতে তাদের/এগিয়ে যেতে তাদের/ তুলে ধরতে তাদের “الصَّلاَةَ” অর্থাৎ পথ /পন্থা (approach), যোগাযোগ (contact), সংযোগ (link), সম্পর্ক (relation), অধিভুক্তি (affiliation) ইত্যাদি।

অপরিহার্য অনুজ্ঞাসুচক ক্রিয়া “فَاجْعَلْ” (اجْعَلْ+فَ) মানে “প্রকৃতপক্ষে তৈরি করা (indeed make)”। পরের শব্দ “أَفْئِدَةً” (আফইদা) মানে
১.স্নেহ (affection),
২. উপযোগিতা (usefulness),
৩.ভাল মানের (goodness),
৪.উৎপাদিত (produced),
৫.ফলাফল (output),
৬.সুবিধা (benefit, advantage),
৭.অবহিত করা (notification),
৮.সাক্ষ্য (testimony),
৯.স্বীকৃতি (acknowledgement),
১০.সদ্ব্যবহার (utilization) ইত্যাদি।

যদিও এই কুরআনীক শব্দ “أَفْئِدَةً” (আফিদা) এর সঠিক অর্থ আমাদের পৌত্তলিক আলেমরা গোপন করেছেন কিন্তু এই “أَفْئِدَةً” (আফিদা) এর সঠিক অর্থ বের করতে এর সক্রিয় ক্রিয়াপদ “أفَادَ” (আফাদ) অর্থ মুনাফা (profit), “أفَادَۃ” এবং “اِسْتِفَادَة” (ইস্তাফাদাহ) এর সঠিক অর্থ দেখা যেতে পারে।

তাছাড়া, আমরা অনেকেই জানি যে জনপ্রিয় শব্দ “مفاد” (মুফাদ) এর অর্থ হল সুবিধা, যা “أَفْئِدَةً” (আফিদা), “أفَادَ” (আফাদ), “أفَادَۃ” এবং “اِسْتِفَادَة” ইত্যাদির একই মূল থেকে উদ্ভুদ।

পরবর্তী শব্দ “مِّنَ” হল “এর/থেকে” অর্থের অব্যয় এবং “النَّاسِ” (একটি নাস) অর্থ মানুষ বা জনসাধারণ। পরের শব্দ “تَهْوِي” মানে ১.পরিপাটি (grooming),
২.মানানসই (accommodating),
৩.মুগ্ধকর (blowing),
৪.কাঙ্ক্ষিত (desiring),
৫.ইচ্ছুক (inclining) ,
৬.প্রেমময় (loving)।

এই “تَهْوِي” শব্দটি বাইবেলে ঈশ্বরের উপাধি ইয়াহুবাহ (یھویٰ) এর একই মূল থেকে উদ্ভূত। হিব্রু ধর্মগ্রন্থের কিছু ব্যাখ্যা অনুসারে, ইয়াহুবা (یھویٰ) ছিল আব্রাহামিক দেবতার নাম। “إِلَيْهِمْ” (ইলাই হিম) অর্থ তাদের মধ্যে বা তাদের দিকে।

পরের বাক্যাংশ “وَارْزُقْهُم” (ওয়া আরজুক হুম) যেখানে “هُم” হল কর্মবাচক নাম পুরুষের বহুবচন সর্বনাম যার অর্থ “তাদের” এবং আজ্ঞাসুচক ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বা তুলনামুলক বিশেষ্য (Elative noun) “ارْزُقْ” (আরজুক) অর্থ:
১.আশীর্বাদ করুন,
২.প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান করুন, ৩.অলঙ্কৃত করুন,
৪.দান করুন,
৫.সুবিধা দিন
৬.এবং বন্দোবস্ত করুন ইত্যাদি। “مِّنَ” অর্থ এর (of)/হতে (from), “الثَّمَرَاتِ” ফল(কর্মের পরিণতি) (the fruits)/ পরিণাম (the outcomes)/ফলাফল (the results)/ সুবিধা (the benefits) ইত্যাদি। “لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ” তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য/তাদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য/তাদের প্রশংসা স্বীকার করার জন্য।

“رَّبَّنَاإِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ”(14:37)
সঠিক অনুবাদ

হে আমাদের প্রভু, আমার বংশধরদের হতে, আপনার সংবিধান/ সনদের নিষেধাজ্ঞায় কোনো কিছু প্রতিস্থাপন/রোপন/ আবাদ না করার প্রবনতার/ অভিলাষের/ অভিপ্রায়ের সাথে এটা আমার চুড়ান্ত সম্মতি। হে আমাদের প্রভু তাদের পথ/পন্থা এগিয়ে নিতে প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রতি ভালবাসার মানুষের স্নেহ/ হিতৈষী তৈরি করুন, এবং তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য (কর্মের) ফল/ পরিনতি/ ফলাফল হতে তাদেরকে আশীর্বাদ করুন। (১৪:৩৭ আয়াতের সঠিক অনুবাদ)।

উল্লিখিত সঠিক অনুবাদের সাথে প্রচলিত ভুল অনুবাদ মিলিয়ে দেখুন।

হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার কতিপয় সন্তানকে আপনার সম্মানিত ঘরের আশেপাশে এমন এক উপত্যকায় এনে বসবাস করিয়েছি, যেখানে কোন ক্ষেত-খামার নেই। হে আমাদের প্রতিপালক! (এটা আমি এজন্য করেছি) যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং মানুষের অন্তরে তাদের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে দিন এবং তাদেরকে ফলমূলের জীবিকা দান করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। (১৪:৩৭)- মুফতি ত্বকি উসমানী।

প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা কাবা ঘরের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে এবং কাবাঘর কেন্দ্রিক সকল উপাসনাকে আকর্ষণীয় করতে পৌত্তলিক পন্ডিতরা উক্ত ১৪:৩৭ নং আয়াতের মিথ্যা অনুবাদ করে বলছেন ইব্রাহীম তার কতক সন্তানদেরকে কাবার পাশে মক্কার মরু উপত্যকায় শুষ্ক ভূমিতে বসবাস করিয়েছেন। অথচ এই আয়াতের সাথে কাবা ঘর বা মক্কা উপত্যকার কোন সম্পর্ক নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *