কুরবানি পর্ব -৮+৯+১০
আলোচ্য আয়াত ২২ঃ৩৪-৩৬
Al-Hajj ২২:৩৬
وَالْبُدْنَ جَعَلْنٰهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللّٰهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌ ۖ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللّٰهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ ۚ فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ؕ كَذٰلِكَ سَخَّرْنٰهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
২য় অংশঃ
প্রচলিত অনুবাদ
-যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় (ফা ইযা ওয়াযাবাত জুনুবুহা)
- তখন তা থেকে তোমরা আহার কর (ফা কুলু মিনহা)
- এবং আহার করাও যে কিছু চায় না তাকে (ওয়া আতিমুল ক্বানি’আ)
- এবং যে চায় তাকে (ওয়াল মু’তারা)
- এমনিভাবে আমি এগুলোকে বশীভূত করে দিয়েছি (কাযালিকা সাখারনাহা)
-তোমাদের (লাকুম)
-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (লা আললাকুম তাশকুরুনা)
-ফা ইযা ওয়াযাবাত জুনুবুহাঃ
এবং (ওয়া) যখন তারা আকারে বড় হয় (জাবাত বা জিবতি শব্দটা পাবেন ৪ঃ৫১ তে, যার অর্থ তাগুত হওয়া শক্তিশালী হওয়া বা আকারে বড় হওয়া।
পরের দুটো টার্মের প্রচলিত অনুবাদ মোটামুটি ঠিক আছে।
তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও তাদের যারা অভাব প্রকাশ করেনা এবং যারা সাহায্য প্রার্থী।
-কাযালিকা সাখারনাহাঃ
সাখারা শব্দের অর্থ হলো কারো অধীনে কাজ করা, বা অধীনস্থ। প্রচলিত অনুবাদে বশীভুত শব্দটা যায় না।
-তাশকুরুনাঃ
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
তাহলে ২২ঃ৩৬ ২য় অংশে সঠিক অনুবাদ
“যখন তারা আকারে বড় হয়,তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও তাদের যারা অভাব প্রকাশ করেনা এবং যারা সাহায্য প্রার্থী। এমনি ভাবে তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”
উল্লেখ্য বোবা প্রাণীদের কিভাবে আহার করবেন সেটা আপনার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পশু জবাই করে খাবেন, নাকি অন্য কোনো উপায়ে পশুকে হত্যা করে খাবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আল্লাহর নামে বলি দেয়া/ জবাই করা প্যাগান রিচুয়াল।
আবার অন্য উপাস্যের নামে উৎসর্গীকৃত পশুও হারাম ৫ঃ৩। তার মানে এই নয় যে পশু জবাই বা হত্যার সময় প্যাগান রীতির মত আল্লাহর নাম নিতে হবে বা আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে হবে। এতে যেটা হচ্ছে তা হলো তারা আল্লাহকে প্যাগানদের উপাস্য গুলোর লেভেলে নামিয়ে এনেছেন । আল্লাহ কুরআনে কোথাও বলেননি যে পশু জবাই করার সময়ে আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করো। বলার কথাও না।
আল্লাহ পশুদের শরীরে নিয়ামত দিয়েছেন, সেখান থেকে আহার করবেন। শুধুই একটা শর্ত দিয়েছেন ২২ঃ৩৬ এ যে পশুগুলো যেন আকারে বড় হয়/পরিণত হয়। তাহলেই সেটা হালাল হবে।
৫ঃ৯৫ তে অপরিণত পশু হত্যার হুকুম হারাম।
তাহলে পূর্ণ অনুবাদটা দাঁড়াচ্ছেঃ
Al-Hajj ২২:৩৪
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللّٰهِ عَلٰي مَا رَزَقَهُمْ مِّنْۢ بَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ ؕ فَاِلٰـهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْا ؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ۙ
প্রচলিত অনুবাদ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও;
সঠিক অনুবাদ
২২ঃ৩৪ “এবং প্রত্যেক উম্মাতের জন্য
নির্ধারণ করেছি সংশোধনের বিধান
যাতে তারা স্মরণ করে আল্লাহর গুণাবলি
যার মাধ্যমে তারা রিযিক গ্রহণ করে
বোবা প্রাণীদের নিয়ামত থেকে
আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই তোমরা তাঁর প্রতি সমর্পন করো
এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও
Al-Hajj ২২:৩৫
الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللّٰهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصّٰبِرِيْنَ عَلٰي مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِيْمِي الصَّلٰوةِ ۙ وَمِمَّا رَزَقْنٰهُمْ يُنْفِقُوْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয় এবং যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করে এবং যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।
সঠিক অনুবাদ
২২ঃ৩৫ এবং তাদেরকে (সুসংবাদ দাও) যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে (যুকিরা) worried/চিন্তাগ্রস্হ (ওয়াজিলাত) থাকে এবং তাদেরকে যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্যশীল থাকে এবং তাদেরকে যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদেরকে যারা তাদের রিযিক্বকে সহজলভ্য রাখে (ইউনফিক্বুনা)
২২ঃ৩৬ এবং তাদের (বোবা প্রাণীদের) শরীর গুলোতে তোমাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা থেকে তোমাদের জন্যে মঙ্গল।
সুতরাং
তোমরা আল্লাহর গুণাবলি স্মরণ করো বিস্তারিত ভাবে/তা বিস্তৃত করার মাধ্যমে। যখন তারা পরিণত/আকারে বড় হয়, তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও তাদের যারা অভাব প্রকাশ করেনা এবং যারা সাহায্য প্রার্থী। এমনি ভাবে তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
পুরো কনটেক্সটে জবাই, আল্লাহর নামে কুরবানি ইত্যাদি শব্দ গুলোই নেই। আর প্রচলিত পার্সিয়ান অনুবাদ অনুসারে (২২ঃ৩৪-৩৬) ক্বাবার পাশে লাইন ধরে আল্লাহর নাম নিয়ে পশু জবাইয়ের কেচ্ছা কাহিনী তো একেবারেই নেই। সবই বানোয়োট।
সবসময় বিবেককে প্রশ্ন করবেন “যে বিধান প্যাগানরা পালন করে, সে বিধান কি একত্ববাদের ঘোষণা করা আল্লাহর কাছে থেকে আসতে পারে?”
__$$$$$$®®®®®©
কুরবানি – পর্ব-০৯
Al-Ahqaf ৪৬:২৮
فَلَوْلَا نَصَرَهُمُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ قُرْبَانًا اٰلِـهَةً ؕ بَلْ ضَلُّوْا عَنْهُمْ ۚ وَذٰلِكَ اِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
প্রচলিতঅনুবাদ
অতঃপর আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে সান্নিধ্য লাভের জন্যে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা তাদেরকে সাহায্য করল না কেন? বরং তারা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেল। এটা ছিল তাদের মিথ্যা ও মনগড়া বিষয়।
কুরআনে কুরবানি শব্দটি নেই। যেটা আছে সেটা হলো “কুরবানা” এই শব্দটা মাত্র ৩টি আয়াতে আছে ৪৬ঃ২৮, ৩ঃ১৮৩ এবং ৫ঃ২৭।
“কুরবান” শব্দটা আসছে ধাতু “ক্বাফ-রা-বা” থেকে যে ধাতুর মূল অর্থ হলো নিকট। নিকট আত্মীয় বোঝাতে “আল ক্বুরবাইয়া” ব্যবহৃত হয়েছে কুরআনে (২ঃ৮৩, ২ঃ১৭৭, ২ঃ১৮০, ২ঃ২১৫)।
ক্বারিব মানে নিকটে (২ঃ১৮৬, ২ঃ২১৪)।
তাক্বরাবা মানে “নিকটে যেও না” (২ঃ৩৫, ২ঃ১৮৭)
এখন ৪৬ঃ২৮, ৩ঃ১৮৩ ও ৫ঃ২৭ বাক্য গুলো শব্দ বাই শব্দ বিশ্লেষণ করলে “কুরবানা” শব্দের সঠিক অর্থ পেয়ে যাবেন।
৪৬ঃ২৮
সঠিক অনুবাদ
“অতঃপর কেন তাদের সাহায্য করলো না যাদেরকে তারা গ্রহণ করেছিল আল্লাহ ব্যতীত (মিন দুনিল্লাহ), নৈকট্য লাভের মাধ্যম উপাস্য হিসাবে (কুরবানা আলিহাতা, ইলাহ থেকে এসেছে আলিহাতা)? বরং তারা পথভ্রষ্ট/বিভ্রান্ত (জাল্লু/জালিল) হলো তাদের থেকে এবং এটাই তাদের মিথ্যাচার এবং যা তারা রচনা করেছিল।”
তাহলে দেখা যাচ্ছে “কুরবানা” শব্দের অর্থ প্রচলিত অনুবাদেই “নৈকট্য লাভের মাধ্যম” অনুবাদ করেছে ৪৬ঃ২৮ এ।
৩ঃ১৮৩
Aal-e-Imran ৩:১৮৩
اَلَّذِيْنَ قَالُوْۤا اِنَّ اللّٰهَ عَهِدَ اِلَيْنَاۤ اَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُوْلٍ حَتّٰي يَاْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَاْكُلُهُ النَّارُ ؕ قُلْ قَدْ جَآءَكُمْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِيْ بِالْبَيِّنٰتِ وَبِالَّذِيْ قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوْهُمْ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
সে সমস্ত লোক, যারা বলে যে, আল্লাহ আমাদিগকে এমন কোন রসূলের ওপর বিশ্বাস না করতে বলে রেখেছেন যতক্ষণ না তারা আমাদের নিকট এমন কোরবানী নিয়ে আসবেন যাকে আগুন গ্রাস করে নেবে। তুমি তাদের বলে দাও, তোমাদের মাঝে আমার পূর্বে বহু রসূল নিদর্শনসমূহ এবং তোমরা যা আব্দার করেছ তা নিয়ে এসেছিলেন, তখন তোমরা কেন তাদেরকে হত্যা করলে যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
সঠিক অনুবাদ
“নিশ্চয়ই যারা বলে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (আহিদা) আমাদের প্রতি যে আমরা ঈমান আনবো না কোনো রাসুলের উপরে যতক্ষণ না আমাদের কাছে নৈকট্য লাভের মাধ্যম সমূহ সাথে (বি কুরবানা) নিয়ে আসবে যা গ্রহণ করবে (তাকুলু) আগুণ (আন নার)। বলো, নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসেছে অনেক রাসুল আমার পূর্বে সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ (বি আলবাইয়িনিয়াত) এবং ঐ বিষয়ে যা তোমরা বলছো, তবে কেন তোমরা তাদেরকে অপমানিত করেছো (ক্বাতাল তুমু হুম) যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
এই আয়াতের প্রচলিত অনুবাদে “কুরবানা” শব্দকে কুরবানি অনুবাদ করেছে। একই শব্দকে ৪৬ঃ২৮ এ কুরবানি/আত্মত্যাগ অনুবাদ করতে পারেনি। কারণ সেখানে কোনো ভাবেই মিলবে না।
৩ঃ১৮৩ তে কুরবানি মানে যদি আত্মত্যাগ বা পশু কুরবানি হয়ে থাকে তাহলে ৩ঃ১৮৩ তে আগুণ গ্রহণ করে এমন পশু কই পাবেন? প্যাগানরা এবং হিন্দুরা তাদের দেবদেবীকে “কুরবানা” বা নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করে সেখানে আগুণ জ্বালিয়ে উপাসনা করে। প্যাগানদের ধারণা ছিল “কুরবানা” বা নৈকট্য লাভের মাধ্যম সমূহ আগুণ গ্রহণ করে। সেকারণে তারা ৩ঃ১৮৩ তে সেই দাবি তুলতেছে যে আল্লাহ নাকি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদেরকে যে রাসুল তাদের জন্য “কুরবানা” বা নৈকট্যলাভের মাধ্যম সমূহ নিয়ে আসবে যা আগুণ গ্রহণ করে। রাসুল এরকম কিছু নিয়ে আসলে তারা রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে। পূর্বের রাসুলগণ যেসব সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিয়ে এসেছিলেন, সেটা দেখেও তারা রাসুলের প্রতি ঈমান আনেনি অতীতে। বরং রাসুলদের তারা অপমানিত/নিগৃহীত (ক্বাতালা) করেছে অতীতে।
এবার সেই হাবিল কাবিলের বিখ্যাত আয়াত ৫ঃ২৭। এই আয়াতে এত গোজামিল দেয়া হইছে যে পাঠোদ্ধার করা কঠিন। তবুও চেষ্টা করলাম।
Al-Ma’idah ৫:২৭
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّ ۘ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَ ؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللّٰهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা ভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। সে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বললঃ আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন।
সঠিক অনুবাদ
“ এবং পৌছিয়ে দাও তাদের কাছে সংবাদ (ওয়া ইতলু আলাইহিম নাবা) আদম সন্তানদের (ইবনা আদামা), যথার্থতার সাথে (বিল হাক্বি), যখন (ইজ) তারা নিকটবর্তী হয়েছিল (ক্বাররাবা) নৈকট্য লাভের মাধ্যম সমূহের (কুরবানা)। অতঃপর গ্রহণ করা হয়েছিল (ফাতুক্বুব্বিলা/ক্ববুল) তাদের মধ্যে কাউকে (মিন আহাদিহিমা) এবং গ্রহণ করা হয়নি (ওয়া লাম ইউতাক্বাব্বাল) অন্যকে (মিন আল উখারি), সে বলেছিল (ক্বালা) নিশ্চয়ই তোমাকে নিগৃহীত/আক্রমণ করবো (লা আক্বতুলান্নাকা), সে বলেছিল, নিশ্চয়ই (ইন্নামা) আল্লাহ গ্রহণ করেন (ইয়াতাক্বাব্বালু আল্লাহ) মু্ত্তাকিদের/সুরক্ষিতদের মধ্য থেকে (মিন আল মুত্তাকিনা)
উল্লেখ্য, প্রচলিত অনুবাদে শেষ লাইনে নিশ্চয়ই আল্লাহ গ্রহণ করেন মুত্তাকিদের (কুরবানি), অর্থাৎ কুরবানি শব্দটা জোর করে ব্র্যাকেটে ঢুকানো হয়েছে। ২ঃ১০২ এ “মিন আহাদি” মানে “কোনো কাউকে”। তাহলে “মিন আহাদিহিমা” মানে দাঁড়ায় “তাদের মধ্যে কাউকে।”
৫ঃ২৭ এর প্রসংগ যা বুঝলাম তা হলো আদম সন্তানেরা নৈকট্য লাভের মাধ্যম সমূহের (পীর/ ফকির/ ভবিষ্যতদ্রষ্টা) নিকটবর্তী হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে কাউকে তারা মুরিদ বানাইছিল/গ্রহণ করেছিল এবং অন্যকে গ্রহণ করেনি। তখন ভবিষ্যত দ্রষ্টা বা নৈকট্য লাভের মাধ্যম (কুরবানা) যাকে মুরিদ বানাইছিল, সে অন্যকে আক্রমণের/তথাকথিত ক্বাতালা বা হত্যার হুমকি দিয়েছিল। তখন যাকে হত্যার/আক্রমণের হুমকি দেয়া হয়েছিল সে জবাব দিয়েছিল যে আল্লাহ শুধু মুত্তাকিদের ক্ববুল করেন। কুরবানরা যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রহণ করে মুরিদ বানাইতে পারে, কিন্তু আল্লাহ শুধুমাত্র মুত্তাকিদের ক্ববুল করেন। এখানে আল্লাহ কর্তৃক “কুরবান” বা তথাকথিত কুরবানি ক্ববুল করার কথা বলা হচ্ছে না। “কুরবান” শব্দকে বরং নেগেটিভ অর্থেই ব্যবহার করেছেন আল্লাহ ৪৬ঃ২৮ এ।
একবার ভাবেন, আল্লাহ কি একজনের তথাকথিত কুরবানি কবুল করে তাকে অন্যজন দ্বারা বিপদে ফেলার মত পরিস্থিতি তৈরি করবেন?
এখানে বা কুরআনে কোথাও হাবিল কাবিল শব্দটা নেই। এগুলো তাফসিরকারকদের বানোয়াট গল্প।
২২ঃ৩৪-৩৭ কে পার্সিয়ানরা জোর করে মানসাকান শব্দকে “কুরবানির বিধান” বানাইছে।
তাহলে
কুরবান শব্দটা হলো নৈকট্য লাভের মাধ্যম (৪৬ঃ২৮) এবং এটি একটি প্যাগান/বহুঈশ্বরবাদ রিচুয়াল/সংস্কৃতি।
আল্লাহর সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের বদলে কাউকে নৈকট্য লাভের মাধ্যম/দালাল ধরাই হলো “কুরবানা”। যেমন রাসুলকে শাফায়েতকারী ধরে সবাই। অনেকে পীরের মুরিদ হয়। হিন্দুরা দেবদেবীকে “কুরবানা” মনে করে যেকারণে তাদেরকে তারা আগুন দিয়ে উপাসনা করে, কারণ তারা মনে করে তাদের “কুরবানা” গুলো আগুন গ্রহণ করে যেমনটা ৩ঃ১৮৩ তে বলা হয়েছে। মানুষ ঈমান আনার জন্য কোনো ফিজিকাল বস্তু চায়। যেমন সবাই কাবাকে কুরবান বানাইছে। কাবার চক্কর কাটলে, বা হাজরে আসওয়াদে চুমু দিলে, বা জমজমের পানি খেলে, বা আল্লাহর নামে পশু জবাই দিলে সবাই মনে করে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যাবে। খ্রীষ্টানরা মনে করে যিশুই তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ায় দিবে। ইহুদিরা মনে করে মুসা তাদেরকে আল্লাহর নিকটে নিয়ে যাবে। এটাই বহুঈশ্বরবাদের মূলমন্ত্র। এভাবেই সবাই শিরকে লিপ্ত। আল্লাহর নৈকট্য পেতে হলে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে হবে এবং সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান আনতে হবে ৩ঃ১৮৩ অনুসারে। কোনো দালাল/মাধ্যম ধরার প্রয়োজন নেই। আল্লাহকে মন থেকে সরাসরি ডাকলে (দুআ) আল্লাহ সাড়া দেন (২ঃ১৮৬)। আল্লাহ এবং আপনার মাঝে সম্পর্কে ৩য় পক্ষ ঢুকানোই হলো “কুরবানা” যা স্পষ্ট শিরক।
তথাকথিত
কুরবানি নামক প্যাগান সংস্কৃতি পালন এবং পশুদের নির্বিচারে গণহত্যা তথাকথিত মুসলিম বিশ্বের বাইরে আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।
######__=$$$$$$$$ঽঽঽঽ
কুরবানি পর্ব-১০
৩৭ঃ ৯৫-১০৮
As-Saffat ৩৭:৯৫
قَالَ اَتَعْبُدُوْنَ مَا تَنْحِتُوْنَ ۙ
প্রচলিত অনুবাদ
সে বললঃ তোমরা স্বহস্ত নির্মিত পাথরের পূজা কর কেন?
As-Saffat ৩৭:৯৬
وَاللّٰهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ-
প্রচলিত অনুবাদ
অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা নির্মাণ করছ সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।
আজকে আলোচনা করবো সেই বিখ্যাত ৩৭ঃ৯৫-১০৮, যেখানে ইসমাইলের গলায় ছুরি বসানোর কাল্পনিক গালগল্প কুরবানির সমর্থনে বেশ প্রচলিত। শব্দ বাই শব্দ বিশ্লেষণ করলে আশা করি সত্যটা বেরিয়ে আসবে। পুরো আয়াতে কোথাও ইসহাক বা ইসমাইলের নাম নেই।
তার আগে ২১ঃ৬২-৭১ দেখতে হবে যেখানে ইব্রাহীম যখন মুশরিকদের তাদের উপাস্যদের ত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে বলেছে, তখন তারা ইব্রাহীমকে আগুণে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
Al-Anbiya ২১:৬৮
قَالُوْا حَرِّقُوْهُ وَانْصُرُوْۤا اٰلِهَتَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ فٰعِلِيْنَ
২১ঃ৬৮ “তারা বললো, তাকে (ইব্রাহীমকে) পুড়িয়ে ফেলো এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য করো যদি তোমরা তা করতে পারো।”
২১ঃ৬৯ “ আমরা বললাম, হে আগুণ, শীতল হয়ে যাও এবং ইব্রাহীমের প্রতি আত্মসমর্পন করো/প্রশান্ত (সালামা) হও।”
এবার ২১ঃ৭০ খেয়াল করেন ভালমত আরবি শব্দগুলোসহ।
২১ঃ৭০ “এবং তারা চেয়েছিল (ওয়া আরাদু) তার সাথে (বিহি) কৌশল অবলম্বন করতে (কায়দা), অতঃপর তাদের জন্য নির্ধারণ করলাম (ফা জাআলনাহুম) ক্ষতি (আল আখসারিনা)
খাসিরিনা শব্দটা পাবেন ৫ঃ৩০, ৫ঃ৩৩, ২ঃ৬৪ ইত্যাদি।
২১ঃ৭১ “ এবং আমরা তাকে (ইব্রাহীমকে) মুক্তি দিয়েছিলাম (ওয়া নাজ্জাইনাহু, ২ঃ৪৯) এবং লুতকে (ওয়া লুতা), পৃথিবীর প্রতি (ইলাল আরদি) যাতে (আল্লাতি) বরকত দিয়েছি বিশ্বজগতের জন্য (বারাকনা ফিহা লিলআলামিন)
এখানে কিছু যৌক্তিক প্রশ্নঃ
১) ২১ঃ৬৯ এ আগুন শীতল হবার পর তারা আবার কি কৌশল অবলম্বন করলো ২১ঃ৭০ এ? অর্থাৎ আগুন শীতল হবার সাথে সাথে ইবরাহীমের মুক্তি হয়নি। কারণ ইব্রাহিমকে প্রাচীর ঘেরা আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল (৩৭ঃ৯৫-১০৮)। তারা নতুন কোনো কৌশল অবলম্বন করার আগেই আল্লাহ ইব্রাহীমকে মুক্তি দিয়েছেন।
২) ২১ঃ৭১ অনুসারে আল্লাহ তাদের কৌশলের ক্ষতিসাধন করে ইবরাহীমকে মুক্তি দিয়েছেন বুঝলাম, কিন্তু এখানে লুতের প্রসঙ্গ কেন আসলো? ইব্রাহীম ও লুত কি সমসাময়িক?
এ প্রশ্নের উত্তর আছে ২৯ঃ২৪-২৬ এ।
ইব্রাহীম ও লুত সমসাময়িক নবী। ২৯ঃ২৫ এ ইব্রাহীম যখন মুশরিকদের তাদের উপাস্যের ব্যাপারে সতর্ক করছিল এবং এক আল্লাহর দিকে আহ্বান করছিল, তখন সেই আহ্বানে সাড়া দেন লুত যা পরের আয়াত ২৯ঃ২৬ এ স্পষ্ট।
২৯ঃ২৬ “তখন ঈমান আনলো লুত তার (ইব্রাহীমের) প্রতি…”
২৯ঃ২৪-২৬ প্রচলিত অনুবাদটি পড়ে নিয়েন। ইব্রাহিম ও লুত এর সম্পর্ক পেয়ে যাবেন।
এত কথার উদ্দেশ্য কি সেটা পরের অংশে প্রমাণ পাবেন এবং বুঝবেন যে ৩৭ঃ৯৬-১০৮ এ কি পরিমাণ জালিয়াতি করা হইছে!
আগুণ শীতল হবার পর মুশরিকরা কি কৌশল নিয়েছিল এবং ইব্রাহীম কিভাবে মুক্ত হয়েছিল সেই প্রসংগ এসেছে ৩৭ঃ৯৫-১০৮ এ।
৩৭ঃ৯৫-৯৬ “সে (ইব্রাহীম) বললো, তোমরা উপাসনা করো তাদের যাদেরকে তোমরা নিজ হাতে তৈরি করেছো। অথচ আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন যাদের তোমরা উপাসনা করো।”
As-Saffat ৩৭:৯৭
قَالُوا ابْنُوْا لَهٗ بُنْيَانًا فَاَلْقُوْهُ فِي الْجَحِيْمِ
প্রচলিত অনুবাদ
তারা বললঃ এর জন্যে একটি ভিত নির্মাণ কর এবং অতঃপর তাকে আগুনের স্তুপে নিক্ষেপ কর।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ৯৭ “তারা বললো (ক্বালু), তার জন্য পরিবেষ্টিত করো (ইবনু লাহু) প্রাচীর সমূহ (বুনাইয়ানা), অতঃপর তাকে নিক্ষেপ করো (ফা আলক্বুহু) জ্বলন্ত আগুণে (ফি আল জাহিম)
ইবনু/বুনাইয়ানা/ইবনা/বনীয়া শব্দগুলোর রুট হলো বা-নুন-ইয়া যার অর্থ ছাদস্বরূপ/প্রাচীর/রক্ষাকবচ (২ঃ২২)। পরিবারের সন্তানদেরও “বুনাইয়া/বানীয়া) বলা হয়, কারণ তারা বংশরক্ষা করে। তবে এর মূল অর্থ হলো প্রাচীর/রক্ষাকবচ। তাহলে দেখা যাচ্ছে ইব্রাহীমকে প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে জাহিম বা জ্বলন্ত আগুনে (জাহান্নাম থেকে আসছে) নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল তারা।
এবার পরের আয়াতটি খেয়াল করেন যা প্রায় হুবহু ২১ঃ৭০, শেষের শব্দ ছাড়া।
As-Saffat ৩৭:৯৮
فَاَرَادُوْا بِهٖ كَيْدًا فَجَعَلْنٰهُمُ الْاَسْفَلِيْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
তারপর তারা তার বিরুদ্ধে মহা ষড়যন্ত্র আঁটতে চাইল, কিন্তু আমি তাদেরকেই পরাভূত করে দিলাম।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ৯৮ “এবং তারা চেয়েছিল (ওয়া আরাদু) তার সাথে (বিহি) কৌশল অবলম্বন করতে (কায়দা), অতঃপর তাদের জন্য নির্ধারণ করলাম (ফা জাআলনাহুম) অপমান/নিম্নগামীতা (আল আসফালিনা, ৪১ঃ২৯)
২১ঃ৭০ এ আল আখসারিনা বা ক্ষতির কথা বলা হয়েছে, আর ৩৭ঃ৯৮ তে আল আফসারিনা বা অপমান বা নিম্ন গামীতার কথা বলা হচ্ছে।
Al-Anbiya ২১:৬৯
قُلْنَا يٰنَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلٰمًا عَلٰۤي اِبْرٰهِيْمَ ۙ
প্রচলিত অনুবাদ
আমি বললামঃ হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।
অর্থাৎ
২১ঃ৬৯ অনুসারে ইবরাহিমকে আগুনে নিক্ষেপ করার পরে আগুন শীতল হয়ে যায়, কিন্তু ইবরাহীম তখনো প্রাচীর বেষ্টিত ছিলেন (পুরোপুরি মুক্ত হননি) এবং মুশরিকরা নতুন কোনো কৌশল অবলম্বন করতেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাদের সে কৌশলও নস্যাত করে দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে অপমানিত বা ক্ষতি করেছিলেন। সেটা কিভাবে? সেটাই
৩৭ঃ৯৮ এর পরের বাক্য গুলোতে আলোচিত হয়েছে। এই পরের বাক্যগুলোই যত অনুবাদে দুর্নীতির মূল।
As-Saffat ৩৭:৯৯
وَقَالَ اِنِّيْ ذَاهِبٌ اِلٰي رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
প্রচলিত অনুবাদ
সে বললঃ আমি আমার পালনকর্তার দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ৯৯ “ সে বলেছিল (ক্বালা), নিশ্চয়ই আমাকে আল্লাহ অপসারিত করবেন (ইন্নি জাহ্বিবুন ইলা রাব্বি) পথ দেখানোর মাধ্যমে (সাইয়াহদিনা)।
জাহ্বিবুন শব্দের অর্থ অপসারণ করা (৪ঃ১৩৩, ৬ঃ১৩৩, ৮ঃ১১, ৯ঃ১৫ ইত্যাদি)। অর্থাৎ,
২১ঃ৬৯ অনুসারে আগুন শীতল হবার পরও ইবরাহীম প্রাচীর টপকাতে পারেননি, বরং সেখানে অপেক্ষা করছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো সাহায্যের মাধ্যমে অপসারিত/মুক্ত হবার জন্য। আর মুশরিকরাও নতুন কোনো কৌশল/ফন্দি আটতেছিল (২১ঃ৭০, ৩৭ঃ৯৮) ঐ অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে।
As-Saffat ৩৭:১০০
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ
প্রচলিত অনুবাদ
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ১০০ “আল্লাহ দিলেন (রাব্বি হ্বাব) ভারাসাম্য রক্ষাকারীদের মধ্য হতে (ফি মিন আল সালিহিনা)
এই আয়াতের প্রচলিত অনুবাদে ইবরাহীম সন্তানের জন্য দোয়া করেছেন যা পুরাই ভুয়া। “রাব্বি হাব” মানে “হে আমার রব আমাকে সন্তান দাও” নয়। এই আয়াতে সন্তান শব্দটি নেই। আবার “ইয়া রব” বা “হে রব” ও নেই।
As-Saffat ৩৭:১০১
فَبَشَّرْنٰهُ بِغُلٰمٍ حَلِيْمٍ
প্রচলিত অনুবাদ
সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ১০১ “অতঃপর তাকে সুসংবাদ দিলাম (ফা বাশ্শারনাহু) একজন সহনশীল/ধিরস্থির বালকের মাধ্যমে (বি গুলামিন হালিমুন)।
প্রচলিত অনুবাদে “বি” বা “মাধ্যমে” preposition টার অনুবাদই করেনা। কিসের সুসংবাদ দিলেন? ঐ প্রাচীর থেকে মুক্ত হবার সুসংবাদ। কিভাবে দিলেন? একজন ধৈর্যশীল বালকের মাধ্যমে।
গুলাম অর্থ বালক/ছেলে। ইব্রাহীম যখন প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষা করছিলেন, তখন আল্লাহ তাকে এই বালকের মাধ্যমে একটি সুসংবাদ দিলেন। এই বালকটি কে বলতে পারেন? এই বালকটি হলো সেই লুত নবী যিনি তখন বালক ছিলেন। লুত ইবরাহিমের প্রতি ঈমান এনেছিল যখন ইব্রাহিম মুশরিকদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য আহ্বান করতেছিলেন (২৯ঃ২৪-২৬)। সেকারণেই ২১ঃ৭১ এ ইব্রাহিমের মুক্তির সাথে লুতের মুক্তির প্রসংগ টেনেছেন আল্লাহ। আমার করা প্রশ্ন ২ এর উত্তর পেয়ে গেলাম।
As-Saffat ৩৭:১০২
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يٰبُنَيَّ اِنِّيْۤ اَرٰي فِي الْمَنَامِ اَنِّيْۤ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰي ؕ قَالَ يٰۤاَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ ۫ سَتَجِدُنِيْۤ اِنْ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰبِرِيْنَ –
প্রচলিত অনুবাদ
অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ১০২ “অতঃপর যখন (ফালাম্মা) তার সাথে (লুতের সাথে, হু সর্বনাম দিয়ে আগের আয়াতের গুলাম/বালককে বোঝাচ্ছে) পৌঁছালো (বালাগা মাআহু) সেই প্রচেষ্টা (আস সা’ইয়া, ২ঃ১১৪, ২ঃ২০৫, ৫ঃ৩৩, ৫ঃ৬৪), সে (ইবরাহিম) বললো, হে আমার রক্ষকবচ (ইয়া বুনাইয়া), নিশ্চয়ই আমি দেখেছি (ইন্নি আরাইয়া) স্বপ্নের মধ্যে (ফি আল মানামি, ৩০ঃ২৩, ২৫ঃ৪৭), যে আমি তোমাকে বিসর্জন দিয়েছি (ইন্নি আজহাবুকা), অতঃপর লক্ষ্য/প্রত্যক্ষ করো (ফা উনজুরু, ২ঃ২৫৯, ৩ঃ১৪৩) কি ঘটে/দেখা যায় (মাজা তারাইয়া)। সে বললো (ক্বালা), হে আমার অগ্রজ (ইয়া আবাতি ২ঃ১৩৩, ২ঃ১৭০), আপনি তাই করুন যা আপনাকে আদেশ করা হয়েছে, নিশ্চয়ই আপনি আমাকে পাবেন ধৈর্যশীলদের মধ্যে যদি আল্লাহ ফলাফল প্রদান করেন (ইন শাআ আল্লাহ)
এখানে অনেক শব্দের দুর্নীতি করা হয়েছে। “আবাতি” মানে পূর্বপুরুষ বা অগ্রজ বলা যায়। অবশ্যই ইব্রাহিম ছিলেন লুতের অগ্রজ। কারণ ইব্রাহিম যুবক অবস্থায় মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন ২১ঃ৬২ এর প্রসংগ অনুসারে।
জবেহ:
জবেহ শব্দের অর্থ কাউকে বিসর্জন করা বা বিভক্ত করা বা ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা। প্রচলিত অনুবাদ অনুসারে গলা কেটে জবাই করা নয়।
As-Saffat ৩৭:১০৩
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ ۚ –
প্রচলিত অনুবাদ
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।
সঠিক অনুবাদ
৩৭ঃ১০৩ “অতঃপর উভয়ে যখন সম্মত হলো (ফালাম্মা আসলামা) এবং নিচে ফেললো (ওয়া তাল্লাহু) প্রচন্ড শক্তিতে ধাক্কা দেবার জন্য (লিল জাবিনি)।
“তাল্লাহু” এবং “জাবিনি” শব্দ দুটি কুরআনে আর কোথাও নেই। তাই ডিকশনারির সাহায্য নেয়া লেগেছে এবং এই শব্দ দুটি দিয়েই তারা দুর্নীতি করতে পেরেছে।
“তাল্লাহু” মানে কাউকে নিচে ফেলে দেয়া আর “লিল জাবিনি” মানে প্রচন্ড শক্তিতে পিছনে ধাক্কা দেয়া। যেমন গরুর দুধ নিতে গেলে তারা যেভাবে শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে পিছনে।
এবার প্রাচীর টপকানোর কথা চিন্তা করেন। ইব্রাহীমকে প্রাচীরের ভিতরে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আগুন শীতল হয়ে গেলো (২১ঃ৬৯) কিন্তু ইব্রাহীম তো প্রাচীরে আটকে আছেন। ইতিমধ্যে মুশরিকরা নতুন কৌশল/ফন্দি আটতে চলে গেলো। এই ফাঁকে তখন লুত নামের সেই সালিহিন বালককে আল্লাহ পাঠালেন ইব্রাহিমকে সাহায্যের জন্য সবার অগোচরে। লুতকে প্রাচীরের বাইরে থেকে প্রচন্ড শক্তিতে টেনে নিচে নামালেন প্রাচীরের ভিতরে এবং সেই শক্তির বিনিময়ে তিনি প্রাচীর টপকালেন । এভাবে লুতকে বিসর্জন দিয়ে ইব্রাহীম মুক্ত হলেন প্রাচীর থেকে। লুত যেহেতু বালক এবং মুশরিকদেরই কারো পরিচিত, কাজেই নিশ্চয়ই তারা লুতকে হত্যা করবেনা। পরবর্তীতে লুতকেও যে মুক্ত করা হয়েছিল সেটাই ব্যক্ত করা হয়েছে ২১ঃ৭১ এ।
৩৭ঃ১০৪ “এবং আমরা আহ্বান করলাম, হে ইব্রাহীম।
৩৭ঃ১০৫ “নিশ্চয়ই তুমি তোমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছো (সাদ্দাক্বতা) এবং আমরা এরূপে প্রতিফল দেই বিনয়ীদেরকে (মুহসিনিনা)।”
৩৭ঃ১০৬ “নিশ্চয়ই এটা ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা”
৩৭ঃ১০৭ “এবং তাকে আমরা মুক্ত করি বিনিময়ে (ফাদাইনাহু, ২ঃ৮৫, ২ঃ১৮৪) মহা বিসর্জনের মাধ্যমে (বি জিবহি আজিম)
ফিদিয়া :
ফিদিয়া শব্দের অর্থ হলো কোনো কিছু বিনিময়ের/মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্ত হওয়া। এখানে কোথাও পশু বা আনামের আরবি নেই। এই মহাবিসর্জনটা ছিল লুতকে প্রাচীরে বিসর্জন দিয়ে, লুতের সাহায্যে ইবরাহীমকে মুক্ত করা এবং মুশিরকরা নতুন কোনো কৌশল অবলম্বন করার আগেই তা নস্যাৎ করে দেয়া।
পুরো আয়াতে কোথাও ইসমাইলের নাম নেই। এবং আগুন শীতল হবার পর প্রাচীর টপকে কিভাবে ইব্রাহীম মুক্ত হলেন লুতের সাহায্যে (যিনি ছিলেন সালিহিনদের অন্তর্ভুক্ত) সেই পুরো ঘটনার বর্ণনা এসেছে এই ৩৭ঃ৯৬-১০৮ আয়াতে। পরবর্তীতে লুতকেও যে মুক্ত করা হয়েছিল সেটা ব্যক্ত করা হয়েছে ২১ঃ৭১ এ।
৩৭ঃ১০৮ “এবং সংরক্ষণ করলাম (ওয়া তারাকনা) তার ব্যাপারে (আলাইহি) স্থির সময়ের মধ্যে (ফি আল আখিরিনা)।
৩৭ঃ১০৮ বাক্যটি ইলিয়াসের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে ৩৭ঃ১২৪ এ।
অর্থাৎ
বালক লুতকে বিসর্জন দিয়ে/জবেহ করে ইব্রাহীমকে প্রাচীর থেকে মুক্ত করেছিলেন আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে ওহী পাঠিয়ে যে কিভাবে প্রাচীর টপকাতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে।
পুরো আয়াতে সন্তান চাওয়া, ইসমাইল বা ইসহাকের নাম, কুরবানি, আনাম বা পশু জবাই ইত্যাদি শব্দগুলোর একটাও নেই।
বরং
কুরানের বাক্যগুলোর (২১ঃ৬২-৭১, ২৯ঃ২৪-২৬, ৩৭ঃ৯৫-১০৮) ক্রস রেফারেন্স এবং শব্দ বাই শব্দ বিশ্লেষণ করে এটাই সবচেয়ে যৌক্তিক ইতিহাস পেলাম।