কুরআন অবতীর্ণ হবার আগে প্রি-ইসলামিক আরবের ক্যালেন্ডারে “রামাদান” নামের কোনো মাসের অস্তিত্বই ছিল না। তাহলে সুরা বাকারার ২:১৮৫ তে “শাহরু রামাদান” বলতে কোন মাসকে বুঝাইছে?

ধরেন, আপনি ইংরেজি বারো মাসের নাম জানেন। এখন আপনাকে যদি আমি বলি “স্বাধীনতার মাসে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি”। তার মানে কিন্তু মাসটার নাম “স্বাধীনতা” হয়ে যায়না। আপনি যেহেতু বাংলাদেশের ইতিহাস জানেন, তাই আপনি বুঝে নিলেন যে স্বাধীনতার মাস হলো “মার্চ মাস”। এখানে মার্চ মাসকে গ্লোরিফাই করা হয়েছে “স্বাধীনতার মাস” বলে।

এবার ১৪০০ বছর আগে টাইম ট্রাভেল করে আরবে যান। আপনি জানেন যে “রামাদান” নামক কোনো মাসের অস্তিত্ব নাই। আপনি নিচের ১২টি আরবি মাসের নাম জানেন:

মুতামির, নাজির, খাওয়ান, ওয়াবসান, হানিন, রুব্বা, আস্সাম/মুনসিল, আদিল, নাতিক, ওয়াইল, ওয়ারনাহ, বুরাক।

এখন কুরআনের সুরা বাকারা ১৮৫ আয়াতে “শাহরু রামাদান” উল্লেখ করে বলা হলো ঐ রাতে কুরআন গাইডেন্স হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছে। ধরুন, আপনি আয়াতটি লাইভ শুনলেন নবী এর মুখে। আপনি কি কিছু বুঝবেন এইটা তৎকালীন প্রি ইসলামিক আরবি ক্যালেন্ডারে কোন মাসের কথা বলা হইছে?

আমরা যেমন স্বাধীনতার মাস বা বিজয়ের মাসকে গ্লোরিফাই করি একটি নির্দিষ্ট ইভেন্টের কারণে ( ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর) তেমনি কুরআন অবতীর্ণ হবার যে ইভেন্ট (অর্থাৎ যেই রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়) সেই মাসকে গ্লোরিফাই করা হয়েছে “শাহরু রামাদান” বা “তীব্র উত্তাপের মাস” বলে।

রামাদান শব্দের অর্থ হচ্ছে “তীব্র উত্তাপ”। কুরআন অবতীর্ণের ইভেন্টকে “তীব্র উত্তাপ” বলে গ্লোরিফাই করার কারণ হলো সমাজের অন্ধকার দূর করতে তীব্র উত্তাপের মত শক্তির প্রয়োজন হয়।

এখন মজার ব্যাপার হলো প্রি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের “নাতিক” মাসকে বর্তমান ইসলামিক ক্যালেন্ডারে “রামাদান” নামক মাসটি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হইছে। অর্থাৎ “রামাদান” নামে যে মাসটি এখন দেখতে পাচ্ছেন তা কুরআন অবতীর্ণের বহু পরে (খলিফা ওমরের শাসনামলে) প্রবর্তিত ইসলামিক ক্যালেন্ডারে একটি মাস হিসাবে স্বীকৃতি পাইছে।

মানে ব্যাপারটা হলো ডিসেম্বর মাসের নাম বদলায়ে ২০ বছর পরে অফিসিয়ালি “বিজয়ের মাস” রাখার মত অবস্থা। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে কিন্তু আমরা সুনির্দিষ্টভাবে জানি যে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করেছি।

সমস্যা হলো প্রি ইসলামিক “নাতিক” মাসেই (যা পরে রামাদান মাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হইছে) যে কুরআন অবতীর্ণ হইছে, তার কোনো প্রমাণ নাই। কুরআন অবতীর্ণ হবার ইভেন্টকে গ্লোরিফাই করা হয়েছে “শাহরু রামাদান” বলে, কিন্তু সেটা কবে, কোন রাতে, সেই তথ্য কুরআনে নেই। একইভাবে “লাইলাতুল ক্বদর”ও সেই বিশেষ রাতকেই ইঙ্গিত করে, তবে সেটা কবে সেটাও বলা নাই কুরআনে। এবং এটিকেও “সম্মানের রাত” (ক্বদর অর্থ সম্মান, লাইল অর্থ রাত) হিসাবে গ্লোরিফাই করা হয়েছে, “ক্বদর” নামে কোনো রাতের নাম নয় এটি, ঠিক যেমন “রামাদান” নামে কোনো মাস ছিল না। এগুলো শুধুমাত্রই “বিশেষণ”, কোনো বিশেষ্য নয়।

এত সম্মানের রাত ও সম্মানের মাস নিয়ে এত ধোয়াশা কেন কুরআনে- সেটাই হলো ফুড ফর থট! এটা যখন পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ, স্রস্টা কি পারতেন না স্পেসিফিক করে বলে দিতে যে কবে ছিল সেই রাত কিংবা সেই কিংবা সেই মাস?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *