প্রচলিত ধারায় দোয়া নামাজের অংশ। তবে কুর’আনে দোয়া স্বতন্ত্রভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক দোয়ার নির্দেশসহ কোনো আয়াত নেই। সালাতের বা সুনির্দিষ্ট কোনো রিচুয়ালের অংশ হিসেবে দোয়া করতে বলা হয়নি। দোয়া হতে পারে অন্তর্বেদনা যা অনুশোচনার আবেগময় প্রকাশ। আবার দোয়া হতে পারে প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা ও কৃতজ্ঞতাপ্রকাশও। হতে পারে সৃষ্টিজগতের মহান প্রতিপালকের সমীপে বিপদমুক্তির জন্য কাতর প্রার্থণা, অথবা অন্যের মঙ্গল আকাঙ্ক্ষা করে আর্জি। দোয়া হলো নিজের তাগিদে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা।

মানবজাতির আদি পিতামাতা দু’জনে সৃষ্টিকর্তার কাছে এভাবে দোয়া করেছিলেন-‘..হে আমাদের প্রতিপালক,আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি! আপনি ক্ষমা না করলে, দয়া না করলে নিশ্চয় আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।’ (কুর’আন,৭/২৩)

যাকারিয়া নবী সন্তানপ্রাপ্তির আশায় দোয়া করেছিলেন এভাবে-

‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বয়স হয়েছে, মাথার চুলও শুভ্র হয়ে গেছে। প্রভু, আপনাকে ডেকে আমি কখনো নিরাশ হয়নি। বাস্তবিকই আমার ভয় হচ্ছে আমার উত্তরাধিকারের ব্যাপারে। আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। অতএব, আপনি আপনার পক্ষ হতে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন। সে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং উত্তরাধিকারী হবে ইয়াকুব বংশের। আর ওহে প্রভু! আপনি তাকে রেখুন সন্তুষ্ট।’ (কুর’আন, ১৯/৪-৬)

‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কৃপায় আমাকে উত্তম (ত্যায়িবাতান) সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (কুর’আন,৩/৩৮)

‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী (নি:সন্তান) রেখে দিবেন না। নিশ্চয়ই আপনি উত্তম উত্তরাধিকার প্রদানকারী (আল ওয়ারিশিনা)।’(কুর’আন, ২১/৮৯)।

ইব্রাহীম নবী দোয়া করেছিলেন এভাবে-
‘..হে আমাদের প্রতিপালক,আমরা আপনার উপর ভরসা করেছি, আপনার দিকে তাকিয়ে আছি,আর আর আপনার কাছেই আমরা ফিরে আসবো। ও আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে অবিশ্বাসীদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করবেন না (তাদের নিপীড়নের শিকার করবেন না)। আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি পরাক্রম,ন্যায়বিচারক।’ (কুর’আন,৬০/৪,৫)

আইয়ুব নবী দোয়া করেছিলেন এভাবে

-‘আর স্মরণ করো আইয়ুবের কথা, যখন সে তাঁর পালনকর্তার কাছে আকুতি ভরে প্রার্থণা করলো:’দুঃখ-কষ্টে আমি জর্জরিত, আর আপনি করুণাময়দের মাঝে পরম করুণাময়।’ (কুর’আন,২১/৮৩)

ইউনুস নবী দোয়া করেছিলেন এভাবে-

‘আর স্মরণ করো জুননুনের (ইউনুস) কথা! সে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যাচ্ছিলো আর মনে করেছিলো আমি তাকে ধরতে পারবো না। তারপর অন্ধকারে কাতরভাবে প্রার্থণা করলো:’আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি মহান! আমি অপরাধ করেছি।’তখন আমি তার প্রার্থণা কবুল করলাম। আর তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। এভাবেই আমি বিশ্বাসীদের উদ্ধার করি।’(কুর’আন,২১/৮৭,৮৮)

শুয়াইব নবী দোয়া করেছিলেন এভাবে-‘..হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের মাঝে, আমাদের লোকেদের মাঝে সত্যের মীমাংসা করে দিন। (ইফ’তাহ বিল হক্ব); আপনিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী।’ (কুর’আন,৭/৮৯).

দাউদ নবী ও সুলায়মান নবী দু’জনে প্রার্থণা করেছিলেন-

‘আললাহ’রই প্রশংসা! যিনি আমাদেরকে তার অনেক বিশ্বাসী বান্দার চেয়ে বেশি প্রাচুর্য দান করেছেন (ফাদদালানা)।’(কুর’আন, ২৭/১৫).

সুলায়মান নবী প্রার্থণা করেছিলেন এভাবে-‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে রাজত্ব দান করুন, যা আমি ব্যতীত অন্য কারো হবে না। নিশ্চ আপনিই মঞ্জুরকারী (আল- ওয়াহাব)।’ (কুর’আন, ৩৮/৩৫)।.

মুসা নবী দোয়া করেছিলেন এভাবে-‘সে বললো, হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। আর আমার কাজকে সহজ করে দিন। আর আমার কন্ঠের জড়তা দূর করে দিন। যেনো সবাই আমার কথা বুঝতে পারে।‘ (কুর’আন,২০/২৫-২৮).

লুত নবী দোয়া করেছিলেন এভাবে-‘সে বললো, হে আমার প্রতিপালক, অনিষ্টকারী (নীতিভ্রষ্ট) লোকেদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন।’ (কুর’আন,২৯/৩০)

নবী মুহাম্মদকে আললাহ দোয়া শিখিয়েছিলেন এভাবে-

‘বলো,আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের (রব) কাছে।মানুষের প্রভুর (মালিক) কাছে,মানুষের ঈশ্বরের (ইলাহ) কাছে, ফিসফিস কুমন্ত্রণাকারী মন্দ হতে,খান্নাস হতে, যে মানুষের মনে ফিসফিস কুমন্ত্রণা দেয়, তারা জ্বিন হোক বা মানুষ হোক।’ (কুর’আন,অধ্যায়-১১৪)

Source: https://www.facebook.com/groups/379960723877525/permalink/457346962805567/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *