পর্ব-১ এ আমরা জেনেছি
সালাতের অর্থ সংযোগ বা যোগাযোগ – এবং আরোও নির্দিষ্টভাবে, আল্লাহর সাথে মানুষের সংযোগ বা যোগাযোগ। আল্লাহ মানুষের সাথে যোগাযোগ করেন রাসুলের মাধ্যমে কিতাব/গ্রন্থ পাঠিয়ে এবং ওহী করে , আর মানুষ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে সালাতের মাধ্যমে।
আল্লাহ বলেন
Al-Baqarah ২:৩৮
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًا ۚ فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًي فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।২:৩৮
আল্লাহ মানুষের সাথে যোগাযোগ করেন (সালাত) হেদায়েত করা তথা সঠিক পথ প্রদর্শনর জন্য।
এই হেদায়েতটা কী?
এই হেদায়েত হলোঃ
আল্লাহর আদেশ , নিষেধ , উপদেশ , সাবধান বাণী ও সুসংবাদ।
এগুলো আমরা মুসলিমরা কোথায় পাব?
কুরআনে। আল্লাহ তো সালাত অর্থাৎ যোগাযোগ করলেন , হেদায়েত গ্রন্থ কুরআন পাঠালেন কিন্তু আমরা তা না বুঝে পড়লাম বা পড়লাম না , তাহলে কি আমরা আল্লাহর হেদায়েত অনুসারে চলতে পারব বা আল্লাহর মানুষের সাথে যোগাযোগ সম্পন্ন হবে? না। একের সাথে অন্যের যোগাযোগ তখনই সম্ভব , যখন তারা একে অপরের কথা বুঝতে পারে। অন্যথায়-
Al-Jumu’ah ৬২:৫
مَثَلُ الَّذِيْنَ حُمِّلُوا التَّوْرٰىةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوْهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ اَسْفَارًا ؕ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيٰتِ اللّٰهِ ؕ وَاللّٰهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظّٰلِمِيْنَ
Bengali – Bayaan Foundation
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে। সে সম্প্রদায়ের উপমা কতইনা নিকৃষ্ট, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
৬২:৫
একটি সালাত অধিবেশন হলো একটি গাইডের (কুরআনের) মাধ্যমে আল্লাহর এই বার্তাগুলি স্মরণ করিয়ে দেওয়া/স্মরণ করা (জিকর)। এই নির্দেশিকা হতে পারে একজন বার্তাবাহক(রাসুল) , একটি স্মরনিকা (কোরআন), একজন প্রজ্ঞার মানুষ (সূরা ৩১ এর লোকমান) অথবা কেবল একজন ব্যক্তির নিজের অন্তর্নিহিত বিবেক।
কুরআন নাযিলের সময় এই পথপ্রদর্শক ছিলেন স্বয়ং রসূল। লোকেরা নিয়মিত সালাত সেশনে বার্তা/বার্তাবাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের (সালাত) মাধ্যমে বার্তাগুলি গ্রহণ করত, সম্ভবত দিনে দুবার। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রোতাদের এই চলমান যোগাযোগ (সালাত) বাস্তবে প্রয়োগ করতে বলা হয়েছিল। এইভাবে অবিরাম কুরআনের আহ্বান “আকীমু আলসালাতা” হল ছালাত/যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেকে ও সমাজকে পরিশুদ্ধ (যাকাত) করা। সালাত “আনুষ্ঠানিক পার্শি নামাজ সম্পাদন” সম্পর্কে নয় বরং ক্রমাগত আল্লাহর বাণীর প্রতি বিনয়াবনত হয়ে (রুকু) মনোযোগ দেয়া এবং বাস্তব জীবনে আল্লাহর বাণী মেনে নিয়ে (সুজুদ) সেগুলি বাস্তবায়ন করার আহ্বান। আর সালাতের কিয়াম হল আল্লাহর বানী তথা আদেশ নিষেধের উপরে দৃঢ়ভাবে দাড়িয়ে বা কায়েম থাকা।
স্পষ্টতই,
নবীর সময়ে সালাতের অধিবেশন গুলি ছিল নতুনভাবে প্রকাশিত বাণী গুলির উপর চিন্তা করার এবং সম্প্রদায়ের সমস্যা গুলি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের বিষয়ে। তাদের সালাত এইভাবে আল্লাহর বাণী বুঝে পড়া এবং চিন্তাভাবনা এবং যুক্তির সাথে সম্পন্ন হত , যার সাথে সম্পর্ক নেই আজকের বুদ্ধিহীন আচার-অনুষ্ঠান সর্বস্ব নামাজের , যা ঐতিহ্যগতভাবে পুনরাবৃত্তিমূলক যান্ত্রিক অঙ্গভঙ্গী এবং রোবোটিক মন্ত্রজপ নিয়ে গঠিত।